ভারতের লোকসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল পাস: মুক্তির আশায় উদ্বেলিত ছিটবাসী

সিটমহল
নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশের পরে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় লোকসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তি পাস হল। বৃহস্পতিবার দেশটির লোকসভায় বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

সর্ব-সম্মতিতে বিলটি পাস হয়। এর আগে বিলটি ভারতের রাজ্য সভায় পাস হয়।বিলটি পাসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে থাকা ছিটমহল বিনিময়ে আইনত আর কোন বাধা থাকল না।

বন্দী জীবনের অবসান ঘটবে দু’দেশের ১৬২টি ছিটমহলের ৫১ হাজার ৫শ ৮০ জন মানুষের। এরই মধ্যে মুক্তি জীবনের আশায় আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে ছিটমহল বাসীরা।

ভারতের মন্ত্রীসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন ও রাজ্যসভায় পাশ হওয়ায় মুক্ত জীবনের আশায় আনন্দের জোয়ারে ভাসছে ছিটমহলবাসীরা। ছিটমহলগুলোতে চলছে মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ মিছিলসহ নানা আয়োজন। লোক সভায় বিলটি পাশ হলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিট মহলের ৩৭ হাজার ৩শ ৬৯জন মানুষ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিট মহলের ১৪ হাজার ২শ ১১ জন মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্বের সুবিধা পাবে। বিলটি পাশ ও বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ পাবে ১১১টি ছিট মহলের ১৭ হাজার ২শ ৫৮ একর জমি এবং ভারত পাবে ৫১টি ছিট মহলের ৭হাজার ১১০ একর জমি।

১৯৭৪ সালে ছিট মহল বিনিময়ে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে উভয় দেশের ছিটবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এর ধারবাহিকতায় ২০১১ সালে ঢাকায় হাসিনা-মনমোহন প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৩ সালে ভারতের কংগ্রেস সরকার ল্যান্ড বাউন্ডারি চুক্তির বিলটি পার্লামেন্টে উথ্যাপনের চেষ্টা করলে পশ্চিম বঙ্গরাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর আপত্তির মুখে বিলটি আলোর মুখ দেখেনি।

নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ছিট মহল বিনিময়ের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। তখন নমনীয় হয় মমতা ব্যানার্জী। ৪ ডিসেম্বর পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের এক জনসভায় ছিটমহলবাসীদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে ছিট বিনিময়ে তার সম্মতির কথা জানায়।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলের বাসিন্দা আমেনা জানান, ভারতে ছিট মহলের বিল পাশ হওয়ায় নিজেদের মুক্ত পাখির মতো মনে করছি। আমরা আর বন্দি নই। আমাদের এখানে স্কুল কলেজ হলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়া-লেখা করাতে পারবে।

ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরে ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার নবম শ্রেণীর ছাত্রী শামছুর নাহার জানান, ভুয়া নাম ঠিকানা দিয়ে পায়ে হেঁটে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। ছিট বাংলাদেশ হলে আমাদের আর কষ্ট করতে হবে না।

ফুলবাড়ী উপজেলার কালিরহাট ছিটের বাসিন্দা মোজাফফর হোসেন জানান, দীর্ঘ বঞ্চনার পর মৌলিক অধিকারসহ নাগরিকত্বের পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকার আশায় আমরা ছিটবাসীরা উদ্বেলিত হয়ে আছি। আমরা আশা করি দ্রুত ছিটমহল বিনিময় করে ছিটবাসীর অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটানো হোক।

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, ভারতের মন্ত্রী সভায় অনুমোদনের পর রাজ্যসভায় স্থল সীমান্ত বিলটি পাশ হয়েছে। এতে করে আমাদের ছিটবাসীদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফল আমরা পেয়েছি। আশাকরি লোকসভায় বিলটি পাশা হওয়ার পর যত তারাতারি সম্ভব তা বাস্তবায়ন করা হবে। ছিটবাসীরা নাগরিকত্ব পেয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরতে-ফিরতে পারবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

বিলটি বৃহস্পতিবার ভারতীয় লোকসভায় পাশ করে দ্রুত ছিট বিনিময়ে এগিয়ে আসবে দু’দেশের সরকার। এমনটাই দাবি এখন ছিটমহলবাসীদের

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন