মহেশখালীতে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ!

fec-image

দু’টো অচেনা অজানা নর -নারীর মধ্যে হয় বিয়ে নামক আত্মিক সম্পর্ক। এতে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে গড়ে উঠে আত্মীয়তার সমন্ধ। পরম সুখে দুজনে শুরু করেন জীবনের নতুন অধ্যায়। এক বুক আশা আর অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়ে শুরু হয় তাদের বর্ণিল পথচলা।

তখন তাদের পরিচয় হয় স্বামী এবং স্ত্রী হিসেবে। স্বামী স্ত্রীর এ যেন মধুর এক সম্পর্ক। দুটো দেহ মন যেন মিশে যায় একটি আত্মায়। দুজনে হয়ে যায় একে অপরের পরিপূরক। তারা দিনদিন একই সত্ত্বা ও অনুভূতির অনবদ্য বন্ধনে বাঁধা পড়ে।

সুখ দুঃখ হাসি কান্না ভাগাভাগি করে নিতেও তাদের থাকে না আপত্তি। তাদের সেই সংসার বিচ্ছেদ নামক কাল নাগিনীর ছোবলে কখনো হয়ে যায় বিষাক্ত। আলাদা হয়ে যায় দুজনের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ। হারিয়ে যায় একই পথে চলার কুসুমাস্তীর্ণ সেই পথ। সিঁধকেটে ঢোকা বিচ্ছেদের অশান্তির অনলে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় দুটো হৃদয়। বিদগ্ধ হৃদয় লুটে পড়ে তাসের ঘরের মতো। ঘোর অমানিশায় হারিয়ে যায় শক্ত করে ধরা দুটো যুগল হাত।

এতক্ষণ বর্ণনা করছিলাম বিয়ে এরপর বিচ্ছেদের সেই বিষাদময় যন্ত্রণার কথা। আজ বিবাহ বিচ্ছেদ যেন বাংলাদেশে মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিসংখ্যান দেখলে রীতিমতো চোখ ছানাবড়া হওয়ার উপক্রম। সামাজিক অস্থিরতা, খুন, গুম ধর্ষণ চাঁদাবাজির পরে ঘরের অস্থিরতাও কোন অংশে কম নয়। এ বছরের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৫ মাসে মহেশখালী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বিবাহ বিচ্ছেদরে ঘটনা ঘটেছে শতাধিক এর বেশি।

দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন, ফুটফুটে সন্তান, সুন্দর সংসার, এক সময়ের মধুর সম্পর্কের স্মৃতি কোনো কিছুই যেন এই বিবাহ বিচ্ছেদকে ঠেকাতে পারছে না। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে গত ৫ মাসে শতাধিক বিবাহ বিচ্ছেদ এর ঘটনা ঘটেছে।

এক অনুসন্ধানে জানা যায়, বিয়ের সময় যৌতুক নেওয়া, স্বামীর পরকীয়া, মাদকাসক্ত এসব গুরুতর কারণে যেমন তালাক হয়, আবার স্ত্রীর নানা দোষ দেখিয়েও স্বামীরা তালাক দিতে চায়।

বিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন মিলামেশা না হলে তারা আলাদা থাকছেন কিংবা বিবাহবিচ্ছেদ হয়। প্রেম করে বিয়ে তারপর তাদের মতের অমিলেও ভাঙছে কত সংসার। তালাকের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের সন্তানেরা।

তালাকের সবচেয়ে বড় কারণগুলো- যৌতুকের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ‘বনিবনা বা মিল মহব্বত না হওয়া’। স্বামীর অবাধ্য হওয়া, স্ত্রী ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী না চলা, বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, সন্তান না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন স্বামীরা।

অপরদিকে স্ত্রীর তালাক আবেদনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বামীর সন্দেহবাতিক মনোভাব, মাদকাসক্তি, ভরণপোষণ না দেওয়া, পুরুষত্বহীনতা, পরনারীর প্রতি আসক্তি ও বেশি প্রবণতার কারণ হলো সহজে বাবার বাড়িতে ঠাঁই পাবার সুযোগ ও আর্থিক স্বচছলতা।

উপজেলার বড় মহেশখালী, কুতুবজোম, ছোট মহেশখালী, শাপলাপুর হোয়ানক ও কালারমারছড়া এলাকায় বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি হয়।

মহেশখালী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো: জহির উদ্দিন বলেন, মহেশখালীর মানুষ শান্তিপ্রিয় তারা সহজে মানুষকে বিশ্বাস করে, বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, আমাদের সমাজে নারীদের অভিবাবক অসচেতন, যৌতুক প্রথা, কম বয়সে বিবাহ এবং তৃনমুলে শিক্ষার হার কম হওয়ায় এই বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে এবং আমাদের এই নিরীহ নারী গোষ্ঠীরা এখনও পুুরুষতান্ত্রিক সমাজে আবদ্ধ ফলে তারা নিজেরাই সহজে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জামিরুল ইসলাম বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ বিষয়টি এক সময় বেশি ছিলো, এখন অনেক অংশে কমে আসছে, তবুও যেটা আইনে বাইরে গিয়ে বাল্য বিবাহ করে নিজের পায়ে নিজেই আঘাত করছে তারাই মুলত এই বিবাহ বিচ্ছেদ এর শিকার হচ্ছে।

আমরা চেষ্টা করছি বিভিন্ন ভাবে এই বিষয়টি যেনো আর না ঘটে সেই দিখে লক্ষ রেখে কাজ করতে।

সম্প্রতি সময়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন বিশ্বব্যাপী বিচ্ছেদের প্রবণতা হলো নারীরা সহজে তালাকের সিদ্ধান্ত নেন না। মুলত পুরুষরা তাদের তালাক দিতে বাধ্য করে বিভিন্ন ইস্যুতে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন