মানিকছড়িতে বাড়ছে মাল্টা চাষ

fec-image

খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ে সৃজিত মাল্টার তরতাজা ঘ্রাণ ও মিষ্টান্ন স্বাদে চাহিদা বাড়ছে। জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় গত বছর মাল্টা চাষ হয়েছিল ৫৫ হেক্টর। আর এবার তা বেড়ে ৬০ হেক্টর হয়েছে। যদিও এ বছর এখানে অনাবৃষ্টি। তারপরও সৌখিন ও প্রান্তিক চাষিরা নিজস্ব উদ্যোগে জেনারেটরে মাধ্যমে সেচ সুবিধা রাখায় ফলন ভালো হয়েছে। বাজার দরও বাড়ছে।

বর্তমানে পাইকারেরা বাগান থেকে গড়ে ৭০-৮০ কেজিতে কিনে নিচ্ছে। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি। ফলে দিন দিন মাল্টা চাষে ঝুঁকছে মানুষ। গেল বছর ও চলতি অর্থবছরে উপজেলায় ১২০ জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সরকারিভাবে লেবু জাতীয় প্রকল্পে চারা, ওষুধ ও আনুষাঙ্গিক সুবিধাসহ ৫, ১০ ও ২০ শতক জমিতে মাল্টা সৃজিত হয়েছে। এছাড়া অর্ধশত সৌখিন ব্যক্তি নিজস্ব অর্থায়নে ১-৮ একর টিলায় মাল্টা চাষ করে চমকে দিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য এলাকার পাহাড়ের মাটি উর্বর হওয়ায় কৃষি উৎপাদনে প্রান্তিক কৃষকরা সময়োপযোগি কৃষি উৎপাদনে ঝুঁকছে। সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়ি জেলায় বারি-১ জাতের মাল্টা চাষে সফলতা পাওয়া গেছে। পাহাড়ে উৎপাদিত মাল্টা স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় বাজারেও চাহিদা বেশি। জেলার প্রবেশদ্বার মানিকছড়িতে এই বছর প্রায় ৬০ হেক্টর টিলায় মাল্টা চাষ করেছেন ১০-২০ শতক জমিতে দেড়শতাধিক প্রান্তিক কৃষক। আর ১-৮ একর ভূমিতে চাষ করেছেন ৫০জন সৌখিন ব্যক্তি। উপজেলার কুমারী বড়টিলায় মো. লনি মিয়া ১ একর টিলায় গত মৌসুমে কৃষি অফিসের সুবিধা নিয়ে ১৩০ টি মাল্টা গাছ লাগিয়েছেন। এ বছর অর্ধেক গাছে ফল আসছে।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, বাগানে ফলন্ত গাছে জৈব সার দেওয়ার জন্য গাছের গোঁড়া পয়-পরিষ্কার করছেন তিনি। এ সময় লনি মিয়া বলেন, পাহাড়ের উঁচু টিলাও মাল্টা ভালো হয়। দেখেশুনে চারা কিনলে মাল্টা চাষে লাভবান হওয়া যায়। তবে সারা বছর গাছ পরিচর্চা ও সার-ঔষধ দেওয়া চাই।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার নাথ বলেন, পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষে উপযোগী। মাল্টা গাছে প্রথম ৩/৪ বছর সেবাযত্ন, সার ওষুধ বেশি, বেশি দিলে প্রতিটি গাছ পরিপূর্ণ হবে। এতে গাছের ডালে ডালে ফল আসবে। এখানকার মাল্টা খুব মিষ্টান্ন, তাই সমতলের পাইকারের আগ্রহ বেশি।

তিনি আরও জানান, রাইগ্যাপাড়া ৮ একর টিলায় ২০০০ মাল্টার চারা লাগিয়েছেন সৌখিন ব্যক্তি মো. শাহাদাৎ হোসেন। গত অর্থবছর নিজ অর্থায়নে এই বিশাল বাগান সৃজনে সফল হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নিরলসভাবে বাগানে অর্থ ব্যয় করছেন। আগামী বছর বাগানের ফসল বাজারে চমক কাড়বে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসিনুর রহমান বলেন, পাহাড়ের মাটি ও পরিবেশ বারি-১ মাল্টার জন্য উপযোগী। এখানের মাল্টা খুব মিষ্টান্ন হয়। বাজারে ফলের চাহিদা থাকায় দিন দিন মাল্টা চাষে মানুষ ঝুঁকছে। গত অর্থবছরে ৯০জন ও চলতি বছর ৩০জন প্রান্তিক কৃষককে লেবু জাতীয় ফসল চাষে মাল্টা প্রজেক্টে চারা,ঔষধ, সার, কাটিং ও স্প্রেমেশিন সুবিধা দিয়ে মিষ্টান্ন মাল্টা আবাদে উৎসাহ দিয়ে আসছি। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আরও শতাধিক ব্যক্তি মাল্টা করেছে। কৃষি মাঠ কর্মকর্তারা এসব বাগান মালিক ও প্রান্তিক চাষিদের নিয়মিত রোগ বালাই দমন, বাগান পরিচর্চায় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মানিকছড়ি, মাল্টা চাষ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন