ফলোআপ-

মানিকছড়িতে সোলার প্যানেল দুর্নীতিকাণ্ড: ৫ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল

fec-image

অবশেষে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ২নং বাটনাতলী ইউনিয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ দেওয়া ৯৫৪টি সোলার প্যানেল স্থাপনে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির অভিযোগে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। প্রায় ৫ কোটি টাকা সমমূল্যর এসব সোলার প্যানেল ফিরিয়ে নিয়েছে উন্নয়ন বোর্ড। একই সাথে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রামে বিভাগীয় কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন বাটনাতলী ইউনিয়নের ঢাকাইয়া শিবির গ্রামের বাসিন্দা এইচএম আলমগীর হোসেন নামের এক আইনজীবী।

অভিযোগ রয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ দেওয়া সোলার বিনাম্যল্যে বিতরণের কথা থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

জানা গেছে ,পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ২নং বাটনাতলী ইউনিয়নের জন্য ৯৫৪টি সোলার প্যানেল স্থাপনের গ্রহণ করেন। গত ২১ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী বাটনাতলী ইউনিয়নে সোলার প্যানেল বিতরণ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে যান। কিন্ত এরইমধ্যে এ সোলার প্যানেল বিতরণে নানা অভিযোগ উঠে। তাই সোলার প্যানেল বিতরণ স্থগিত জনগণের কাছ থেকে আদায় করা টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়ে ফিরে যান উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, ‘আমি স্বচ্ছতা চাই। তাই সোলার প্যানেল বিতরণ স্থগিত রেখেছিলাম। কিছুদিনের মধ্যে তা বিতরণের কথাও ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে।’

১০ মে ছদুরখীল সরকারি প্রাথমিত বিদ্যালয়ে রক্ষিত সোলার প্যানেলগুলো তিনটি ট্রাকে করে উন্নয়ন বোর্ডে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)- নামে প্রকল্পে ২ নম্বর বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৪টি, ২ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩৯টি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬৯টি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮৩টি, ৮ নম্বর ওর্য়াডে ২৪৫টি এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৪টি সোলার প্যানেল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে বরাদ্দ দেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২ নম্বর বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহিম, ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবুল কালাম আজাদ, ২ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আদৌ মার্মা, ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মংপাইপ্রু মার্মা, ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. শফিকুর রহমান, ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. আব্দুল মমিন, ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মানিক ত্রিপুরা, ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মহরম আলী পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অফিস খরচের নাম ভাঙিয়ে প্রত্যেকের উপকারভোগীর কাছ থেকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।

বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে ওই ছয়টি ওয়ার্ড থেকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বাররা সোলার প্যানেল দেওয়ার নামে প্রায় ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

প্রসঙ্গত, এ নিয়ে গত ৫ মে স্কুলে তালাবন্দি ৯৫৪টি সোলার প্যানেল ”মানিকছড়িতে সরকারি সোলার দিতে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ” শিরোনামে পার্বত্যনিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি, প্রকল্প, মানিকছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন