মানিকছড়ি ভিজিডি’র খাদ্যশস্য সরবরাহে বিধিভঙ্গ করায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ওসিএলএসডি’কে শোকজ

fec-image

মানিকছড়িতে দুঃস্থ মহিলাদের উন্নয়নে ভিজিডি’র বরাদ্ধকৃত খাদ্যশস্যের ছাড়পত্রের (ডি.ও) তথ্য গোপন করে আতপের পরির্বতে সিদ্ধ চাউল ছাড় করার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। সংবাদপত্র ও অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে বিধি বহির্ভুত চাউল (আতপের স্থলে সিদ্ধ) ছাড়/সরবরাহ করায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ওসিএলএসডিকে শোকজ করা হয়েছে।

ভিজিডি’র বরাদ্দপত্র ও তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার দেশব্যাপী দুঃস্থ মহিলাদের উন্নয়নে (ভিজিডি) কর্মসূচির আওতায় মানিকছড়ি উপজেলার ৪ ইউপিতে সুবিধাভোগী রয়েছে এক হাজার ৪ শত ৬৪ জন দুঃস্থ নারী। তারা প্রতি মাসে সরকার ঘোষিত ৩০কেজি হারে খাদ্যশস্য (চাউল) ভোগ করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে চলতি এপ্রিল মাসের ভিজিডি’র খাদ্যশস্যের অপর্ণাদেশপত্রে গত ১১ এপ্রিল স্বাক্ষর করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ। ফলে একই দিন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জুলিয়াস চাকমা ডিও নং ৬৫৩৯১৬৮-৬৫৩৯১৭১ এ ছাড়পত্র প্রদান করেন। উক্ত ছাড়পত্রে আতপ চাউল বিতরণের নিদের্শনা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে ওসিএলএসডি মো. শামীম উদ্দীন একটি ইউনিয়ন (৪নং তিনটহরী) ব্যতিত অন্য তিনটি ইউপিতে রেকর্ডপত্রে আতপ চাউল দেখালেও বাস্তবে সিদ্ধ চাউল সরবরাহ করেন।

ফলে অফিসিয়াল রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিনের বাস্তবচিত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সংবাদকর্মীর মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অবগত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ বিতরণ স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেন। এ নিয়ে ১৮ এপ্রিল বিকালে অনলাইন পোর্টাল ও সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনসহ জনপদে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ফলে ১৯ এপ্রিল সকালে ইউএনও তামান্না মাহমুদ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ সময় পচা ও নিন্মমানের অল্প কিছু চাউল দেখা গেলেও ৯৯% চাউল ভালো দেখতে পান । তবে ছাড়পত্র/ডি.ও বর্হিভূত আতপের পরির্বতে ১নং মানিকছড়িতে ৩৬৬ বস্তা সিদ্ধ, ২নং বাটনাতলীতে ২৯০ বস্তা এবং ৩নং যোগ্যাছোলা ইউপিতে ৩০৯ বস্তা (ছাড়পত্রে আদেশ অপরিবর্তিত রেখে) আতপের স্থলে সিদ্ধ চাউল সরবরাহের সত্যতা খুঁজে পান। কিন্তু ওসিএলএসডি সিদ্ধ চাউল বিতরণের কথা অস্বীকার করায় বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়। তাহলে সহজেই প্রশ্ন উঠে যে, খাদ্যগুদাম থেকে ইউপি’ গোডাউনে যেতে মাঝ পথে (৭/৮ কিলোমিটার) রাস্তায় আতপ চাউল সিদ্ধ হলো কী করে?

ফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ ১৯ এপ্রিল দুপুরে এই বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন খাদ্যনিয়ন্ত্রককে। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে এর জবাব দাখিল করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে বিতরণকালে নিন্মমানের চাউলের বস্তা পাওয়া গেলে তা গুদামে ফেরত দিয়ে পরিবর্তন করে নিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সচিবদেরকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ বলেন, ভিজিডি’র চাউল সরবরাহে অনিয়মের কথা শুনে বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। বরাদ্দপত্রানুযায়ী চাউল সরবরাহ না করে কেন আতপের পরির্বতে সিদ্ধ চাউল সরবরাহ করা হলো, তার জবাব চাওয়া হয়েছে। ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জুলিয়াস চাকমা শোকজ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ ভিজিডি’র চাউল সরবরাহে অনিয়ম (ছাড়পত্র বহির্ভূত) এর ব্যাখা চেয়ে আমাকে শোকজ করায় আমি নিয়মানুযায়ী খাদ্যগুদামের রক্ষক (মালিক) ওসিএলএসডি মো. শামীম উদ্দীনের কাছে লিখিত ব্যাখা চেয়েছি। অনিয়ম প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন