মার্চ ফর ডেমোক্রেসী: ‘পাহাড়বাসী আসুন’- আহ্বানে পাহাড় জেগেছে আন্দোলনের ঢেউয়ে

1486899_10202144626312431_243276288_n

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ১৮ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়ার ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ঢাকামুখী অভিযাত্রার ঘোষণায় পাহাড়ে আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আন্দোলনের ঢেউ উঠেছে পাহাড় থেকে পাহাড়ে। আন্দোলনবিমুখ পাহাড়ীদেরও যুক্ত করেছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে। লাল সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ঢাকামুখী অভিযাত্রায় পাহাড়ের মানুষ তথা পাহাড়ীদেরকে অংশগ্রহণের আহবান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ১৮ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়ার আহবানের পর নড়েচড়ে বসেছেন পাহাড়ী নেতৃবৃন্দও। দফায় দফায় বৈঠক করছেন কর্মসুচী সফল করতে। সবমিলিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচীকে ঘিরে সারাদেশের ন্যায় পাহাড়ী জনপদেও এখন সাজ সাজ রব। পাহাড়ের মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার আমন্ত্রণে নিজেদের জীবন বাজি রেখে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে ঢাকায় যাবে এমন প্রত্যায়ের কথা জানা গেছে পাহাড়ী-বাঙ্গালী বিভিন্ন জনগোষ্ঠির মানুষের সাথে কথা বলে। পাহাড় থেকে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে দেয়া হবে সারাদেশে।

উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিএনপির নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ। সরকারের একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে পাহাড়ের মানুষের মধ্যে নতুন করে ঐক্যের সেতুবন্ধন তৈরী করেছে। পাহাড় থেকে পাহাড়ে সরকারের বিরুদ্ধে এবং সরকারের একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে ‘না’ আওয়াজ উঠেছে।

কেন্দ্রীয় বিএনপির উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মিসেস ম্যামাচিং মার্মা মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়া‘র ‘জাতীয় পতাকা হাতে ঢাকা অভিযাত্রা’ কর্মসুচীতে পাহাড়ের মানুষকে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন রাজনীতি চর্চার শুরু করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া‘র আহবানে পার্বত্য জনপদে অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছে বলেও মনে করেন বিএনপির এ নেতা। তিনি বলেন এ অভিযাত্রায় পাহাড়ীরা সদলবলে জীবনবাজি রেখে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করবে। জীবন সংগ্রামে অব্যস্ত পাহাড়ীদের সামনে কোন বাঁধাই তাদের যাত্রাকে আটকে দিতে পারবেনা।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভুইয়া ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসী’ এ যাবত কালের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কর্মসুচী উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় পতাকা হাকে ঢাকা অভিযাত্রায় পাহাড়ের মানুষকে বেগম খালেদা জিয়া নিজে আমন্ত্রন জানিয়ে পাহাড়ের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসার কথা আবারো জানান দিয়েছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বরাবরই পাহাড়ের মানুষের সাথে ছিলেন। তিনি বলেন, জাতীয় পতাকা হাতে ঢাকা অভিযাত্রার কর্মসুচী ঘোষনার পর পাহাড়ী জনপদে আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার মতে খালেদা জিয়া‘র ডাকের মাধ্যমে পাহাড়ীরা দেশের আন্দোলনের মুল স্রোতে যুক্ত হতে চলেছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঢেউ ওঠেছে পাহাড়ে পাহাড়ে। জীববাজি রেখে সকলেই যোগ দেবে এ অভিযাত্রায়।

রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপি‘র নেতা কর্ণেল (অব.) মনীষ দেওয়ান বলেন, ম্যাডাম পাহাড়ীদের মনে রেখে আবারো কৃতজ্ঞতার বন্ধনে বেধে ফেললেন পাহাড়ীদের। তিনি আলেম সমাজের পরপরই পাহাড়ীদের কথা বলেছেন। এটা পাহাড়ীদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। তার মতে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বক্তব্যের পর পাহাড়ে আন্দোলনের ঢেউ উঠেছে। আমাদের কর্মতৎপরতা চলছে। সাবেক এ সেনা কর্মকর্তার মতে,  ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসী’ একটা অসাধরন কর্মসুচী। পাহাড়ীরা ঐক্য গড়েছে এ কর্মসুচীকে সামনে রেখে। খালেদা জিয়া তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ীদের একই সুতোয় গেঁথেছেন দাবী করে তিনি বলেন, পাহাড়ের মানুষ অধিকারের বিষয়ে অনেক বেশী সচেতন। পাহাড়ীরা জানে কি করে অধিকার আদায় করতে হয়। নিজেদের জীবন যুদ্ধে বিজয়ী পাহাড়ীরা জাতীয় পতাকা হাতে ঢাকা যাবে আর ফিরে আসবে বিজয়ীর বেশে।

বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি সাচিং প্রু জেরী বলেন, মার্চ ফর ডেমোক্রেসী বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সংযোজন। আর খালেদা জিয়া জাতীয় পতাকা হাতে পাহাড়ীদের কর্মসুচীতে যোগাদানের আহবান জানিয়ে আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। দলীয় প্রধানের এ আহবানের পর মার্চ ফর ডেমোক্রেসীকে সামনে রেখে পাহাড়ের মানুষ সংগঠিত হচ্ছে। আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে পাহাড়ের রাজনীতিতে। তিনি বলেন, বান্দরবানের মানুষ দফায় দফায় বৈঠক করছে কর্মসুচী সফল করতে।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির জৈষ্ঠ্য সহ-সভাপতি প্রবীন চন্দ্র চাকমা বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া‘র ডাকে সারাদেশের ন্যায় পাহাড়ের মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ২৯ ডিসেম্বর তিন পার্বত্য জেলা থেকে যে ঢল নামবে তা থামানো যাবে না। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় চলছে জোর প্রস্তুতি। দফায় দফায় চলছে বৈঠক আর আন্ত: যোগাযোগ।

খাগড়াছড়ি জেলা পার্বত্য হিন্দু উন্নয়ন সংসদের সাধারন সম্পাদক অশোক মজুমদার মনে করেন, ২৯ ডিসেম্বর সরকারের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। এ অগ্নিপরীক্ষায় শেখ হাসিনা হারবে আর জিতবে খালেদা জিয়া ও বাংলাদেশ। তিনি মনে করেন, বেগম জিয়ার আহবানে পাহাড়ী জনপদে আন্দোলনের যে ঢেউ উঠেছে সে ঢেউ ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে। তিনি বলেন, পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের সাথে এ অভিযাত্রায় যুক্ত হবে পাহাড়ের নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার বঞ্চিতরা। সব মিলিয়ে গত মঙ্গলবার বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মার্চ ফর ডেমোক্রসী অভিযাত্রায় জাতীয় পতাকা হাতে পাহাড়ের মানুষকে যোগদানের আহবান জানিয়ে দেশের মুল রাজনীতির গতিপথে যুক্ত করলেন পাহাড়ের মানুষকে। যা কখনোই কোন জাতীয় নেতার কাছ থেকে পায়নি পাহাড়ের মানুষ।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের এহেন বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পাহাড়ের রাজনীতি সচেতন মহল, পেশাজীবী ও সাধারণ জনতা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন