মুসলিম বিশ্বের বুকে ইসরাইল একটি পুরনো ক্ষত- প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানী

Iranian President-Elect: Int'l Quds Day Shows Muslims' Unity against Tyranny

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, পার্বত্য নিউজ:

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, মুসলিম বিশ্বের বুকে ইসরাইল একটি পুরনো ক্ষত। ড. রুহানি গতকাল (শুক্রবার) তেহরানে কুদস দিবসের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের অবকাশে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে এমন একটি ক্ষত রয়েছে যা বহু বছর ধরে মুসলিম বিশ্বের বুকে চেপে বসে আছে। ফিলিস্তিন ও আল-কুদসের পবিত্র ভূমিতে এটির অবস্থান।”

 তিনি আরো বলেন, “ইমাম খোমেনী (রহ.)এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্ব কুদস দিবসে মুসলিম বিশ্ব সব ধরনের আগ্রাসন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিজেদের ঐক্য প্রদর্শন করে। এ ছাড়া এ দিবস আমাদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মুসলমানরা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ব্যাপারে নিজেদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব ভুলে যাবে না।”

 কুদস দিবসের বার্তা সম্পর্কে ইরানের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলেন, নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জাতি ইহুদিবাদীদের দখল থেকে তাদের মাতৃভূমি মুক্তির যে আন্দোলন করছে তার প্রতি রাজনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন ঘোষণার জন্য বিশ্বের মুসলমানরা এ দিবস পালন করে।

 ড. রুহানি বলেন, ইসরাইল আপোষ আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে ফিলিস্তিনের ওপর নিজের জবরদখল চালিয়ে যেতে চায়। ইসরাইলিরা মনে করেছে, আলোচনার নামে বাহ্যিকভাবে তারা নিজেদের ‘শান্তিকামী’ চেহারা তুলে ধরে পেছনে দখলদারিত্ব চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব ইহুবিবাদীদেরকে এ কাজ নির্বিঘ্নে করতে দেবে না।

এদিকে একই অনুষ্ঠানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে একটি মহামিথ্যার মাধ্যমে ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।তিনি আরো বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো বিশ্বের ওপর নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার লক্ষ্যে  ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ এ রাষ্ট্রটিকে প্রতিষ্ঠা করে। আহমাদিনেজাদ শুক্রবার তেহরানে কুদস দিবসের শোভাযাত্রা শেষে জুমার নামাজে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে এ মন্তব্য করেন।

 তিনি বলেন, ইসরাইল প্রতিষ্ঠার কারণ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাতসি বাহিনীর হাতে কথিত ৬০ লাখ ইহুদি হত্যার কল্পকাহিনী উপস্থাপন করা হয়; বলা হয়, ইহুদিরা নির্যাতিত বলে তাদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।

আহমাদিনেজাদ বলেন, প্রথমত ৬০ লাখ ইহুদির কথিত হত্যাকাণ্ড ইতিহাসের বুকে তৈরি করা একটি মহামিথ্যা। দ্বিতীয়ত যদি ধরেও নেই যে, ঘটনাটি সত্যি ছিল এবং নাতসিরা এ জঘন্য কর্মটি করেছে, তাহলে সে কপকর্মের দায় কেনো ফিলিস্তিনি জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হলো? ফিলিস্তিনিরা ইহুদিদের হত্যা না করা সত্ত্বেও কেনো নির্যাতিত এই জাতির ওপর বর্বর গণহত্যা চালিয়ে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হলো?

 ইরানের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কাছে আজ ‘ইহুদিবাদ’ ও ‘হোলোকাস্ট’এর চেয়ে পবিত্র বস্তু আর নেই। পাশ্চাত্যে সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করলে কোনো শাস্তি হয় না, যীশু খ্রিস্টকে অবমাননা করলেও তা কোনো অপরাধ নয়; অথচ কথিত ৬০ লাখ ইহুদি হত্যার কল্পকাহিনী ‘হোলোকাস্ট’ নিয়ে গবেষণা চালাতে গেলেও কঠিন শাস্তি পেতে হয়। এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই কল্পিত কাহিনীটির ব্যাপারে সত্য উন্মোচিত হয়ে পড়লে ইহুদিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ভিত কেঁপে উঠবে বলে তারা এ ব্যাপারে এত বেশি স্পর্শকাতরতা দেখায়।

 ড. আহমাদিনেজাদ বলেন, বিশ্ব কুদস দিবস এসেছে সেই মহামিথ্যার স্বরূপ উন্মোচন করে ইহুদিবাদী চিন্তাধারার অস্তিত্ব মুছে ফেলতে। ঠিক এ কারণেই পাশ্চাত্য প্রতি বছর এ দিবস আসলেই আতঙ্কে থাকে।

 উল্লেখ্য, আগামী রোববার (৪ আগস্ট) ড. হাসান রুহানি ইরানের ১১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। এর মাধ্যমে শেষ হবে ড. আহমাদিনেজাদের আট বছরের শাসনকাল।

সূত্র: রেডিও তেহরান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন