রমজানে ক্ষমা প্রত্যাশীদের জন্য মাগফেরাতের দশদিন

fec-image

পবিত্র রমজান মাসকে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতে ভাগ করা হয়েছে। শুরু হলো রমজানের দ্বিতীয় দশক মাগফেরাত। মাগফেরাত অর্থ মার্জনা, আল্লাহর কাছেক্ষমা প্রার্থনা ও গুনাহ থেকে নিষ্কৃতি লাভ। গুনাহ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। মানুষ ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় গুনাহ করে। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। অস্বাভাবিক হলো গুনাহের উপর বছরের পর বছর অটল থাকা এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা না করা

যারা শয়তানের কুপ্ররোচনায় গুনাহ করে ফেলে এবং গুনাহ থেকে মাগফেরাত লাভ করতে পারে না তাদের জন্য মাগফেরাত লাভের বিশেষ সুযোগ হলো রমজানের দ্বিতীয় দশক অর্থাৎ মাগফেরাতের দশদিন। আল্লাহ রমজানের দ্বিতীয় দশকে বান্দাদেরকে বেশি হারে ক্ষমা করেন। আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে উল্লেখ করেন-

وَ اِنِّیۡ لَغَفَّارٌ لِّمَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهۡتَدٰی

‘আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে এরপর সৎ পথে চলতে থাকে।’ (সুরা ত্বহা: আয়াত ৮২)

فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ وَ اسۡتَغۡفِرۡهُ ؕؔ اِنَّهٗ کَانَ تَوَّابًا

‘তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী।’ (সুরা নাসর: আয়াত ৩)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন অপরাধ করে থাকো। আর আমিই সব অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে মাগফেরাত প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।’ (মুসলিম ৬৪৬)

বিশেষ করে রমজানের এই দ্বিতীয় দশকে আপনিও এমন কাউকে ক্ষমা করে দিন, এমন ভেবে রেখেছেন- যাকে জীবনেও ক্ষমা করবেন না। দেখবেন আল্লাহও আপনার এমন পাপগুলোকে ক্ষমা করছেন, যেগুলো আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।

সহজে বললে, ‘ক্ষমা করলে, ক্ষমা পাওয়া যায়।’ আপনি অন্যান্য মানুষের থেকে পাওয়া কষ্টগুলোকে সহজে ক্ষমা করে দিন, আপনাকেও আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন সঙ্গে সঙ্গে আপনার মর্যাদাকেও বৃদ্ধি করে দেবেন।

ক্ষমার মাধ্যমে মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকা যায়, ক্ষমা না করলে সবসময় ডিপ্রেশনে ভুগতে হয়। আপনজনের দেওয়া কষ্টগুলো বা প্রতিশোধের আগুন বার বার হৃদয়ে পীড়া দিতে থাকে। ক্ষমার মাধ্যমে হৃদয় পরিষ্কার হয়, কষ্ট দূরীভূত হয়, মানসিক প্রশান্তি মিলে। আর ক্ষমা করে দেওয়া অনেক বড় গুণ, যে গুণ মহান আল্লাহ তাআলার। তিনি ঘোষণা করেছেন ‘আমি গাফফার, গাফুর।’

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন অপরাধ করে থাকো। আর আমিই সব অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে মাগফেরাত প্রার্থনা করো, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব।’ (মুসলিম ৬৪৬)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টিজীবের জন্য রহমতস্বরূপ। তিনি আমাদের মাগফেরাত পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করলে ক্ষমা পাওয়ার পথ সুগম হয়। তাই রমজানের মাগফেরাতের এই দশদিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা চাই।

হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জিবরিল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে কি এই সংবাদ খুশি করে না যে, আপনার উম্মতের মধ্য থেকে যদি কোনো ব্যক্তি আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে তবে আমি তার জন্য দশবার মাগফেরাত চাইবো। আর কেউ যদি আপনাকে একবার সালাম পাঠায় আমি তার প্রতি দশবার সালাম পাঠাব।’ (নাসাঈ ১২৯৮)

গুনাহগার বান্দা অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি বান্দাকে ক্ষমা করেন। আল্লাহ হলেন পরম ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সেহরির সময়টুকু ক্ষমা পাওয়ার বিশেষ এক মুহূর্ত। এই মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা অপেক্ষায় থাকেন বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য। বান্দার কাজ হলো ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের মর্যাদাবান প্রভু দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ (মিশকাত ১২২৩)

আল্লাহ তাআলা পরম ক্ষমাশীল। তিনি বান্দাদেরকে ব্যাপকহারে ক্ষমা করবেন বলেই রমজানের দ্বিতীয় দশদিন করেছেন মাগফেরাতময়। আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করতে প্রস্তুত। বান্দার করণীয় হলো গুনাহের ওপর অনুতপ্ত হওয়া এবং মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহ তাআলা সব রোজাদারকে তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন

সূত্র: জাগো নিউজ ২৪

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ক্ষমাপ্রত্যাশী, দশদিন, মাগফেরাত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন