রাঙামাটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতার অভিযোগ
আলমগীর মানিক, রাঙামাটি :
একই কর্মকর্তা চারটি দায়িত্ব পালন করায় রাঙামাটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের প্রচারণা ও সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছে স্থানীয় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তারা জানায়, একই কর্মকর্তা চারটি পদে থাকায় যেমন সরকারি কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি বঞ্চিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝেও ক্ষোভ দানা বাঁধছে। এতে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
রাঙামাটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলার উপ-পরিচালকের পদটি শূণ্য থাকায় বর্তমানে উপ-পরিচালক পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োজিত আছেন রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বেগম শাহনেওয়াজ। সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, সরকারি পরিপত্রের নির্দেশনা পাশ কাটিয়ে ও জৈষ্ঠ্যতা বিবেচনায় না নিয়েই এই কর্মকর্তাকে রাঙামাটি জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনিই আবার বিভাগের জেলা সরবরাহ কর্মকর্তার দায়িত্বও নিজের হাতে রেখে দিয়েছেন। উপরন্তু তিনি অতিরিক্ত হিসেবে জেলার দুটি উপজেলা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবে একই ব্যক্তি চারটি দায়িত্ব নিজ হাতে রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আর কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে বিরাজ করছে অসন্তোষ।
সূত্রমতে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে উপ-পরিচালক পদের বিপরীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির “ঘ” খন্ডের ১৮নং অনুচ্ছেদটি লঙ্ঘন করা হয়েছে। চুক্তিতে বলা আছে যে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সরকারি, আধা সরকারি, পরিষদীয় ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের মধ্য হতে নিয়োগ করা হইবে।’
তবে কোনও পদে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের মধ্যে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি না থাকলে সরকার হতে প্রেষণে অথবা নির্দিষ্ট সময় মেয়াদে উক্ত পদ পূরণ করা যাবে। কিন্তু রাঙামাটি জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে বর্তমান উপ-পরিচালক তিনি মূলত রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, এছাড়াও যেহেতু বেগম শাহনেওয়াজ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং উপ-পরিচালক পদটি উচ্চতর পদ, সেহেতু উক্ত পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব নিতে হলে জ্যৈষ্ঠতার ভিত্তিতে নিতে হবে। তার পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জারিকৃত পরিপত্রটিও অনুসরণ করা দরকার। জেলায় বর্তমানে তার চেয়ে দুইজন সিনিয়র ও যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মকর্তা পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী রয়েছেন। সিনিয়র কর্মকর্তা থাকার পরও তিনি কিভাবে উক্ত পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পান এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয় তিনি উপ-পরিচালকের দায়িত্বের পাশাপাশি জেলা সরবরাহ কর্মকর্তা এবং বর্তমানে রাজস্থলী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ রাজস্থলী উপজেলার পাশ্ববর্তী উপজেলা কাপ্তাই উপজেলা কর্মকর্তা থাকার পরও কাপ্তাই কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব না দিয়ে নিজেই বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সহ তিনটি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানায়, গত ২৭/০৬/২০১৩ তারিখ স্মারক নং ০৫.১৭০.০২২.০৯.০০.১৩৩.২০১০-২২৬ মূলে উক্ত পার্বত্য চুক্তির “ঘ”খন্ডের ১৮নং অনুচ্ছেদটি অনুসরণ করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। কিন্তু রাঙামাটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে এই নির্দেশনা কেন পালন করা হচ্ছেনা তা বোধগম্য নয়। বিষয়টি ইতোমধ্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, পাবত্য আঞ্চলিক পরিষদ এবং সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কেও এ অবহিত করা হয়েছে।
এসব অভিযোগ নিয়ে মতামত চাওয়া হলে, রাঙামাটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক বেগম সাহানওয়াজ বলেন, আমি এই পদটি নিতে চাইনি, আমাকে জোর করে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া উপ-পরিচালকের পদটি ক্যাডার পদ। আমার উপরে সিনিয়র যারা আছেন তারা সবাই নন ক্যাডার হওয়ায় কর্তৃপক্ষের আসলে তেমন কিছু করার ছিলনা।
অতিরিক্ত দায়িত্বের ব্যাপারে তিনি বলেন, কেউ এই দায়িত্ব নিতে চায় না বলে আমাকে বাধ্য হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। কাজে স্থবিরতার বিষয়টি কাল্পনিক বলে দাবি করে তিনি বলেন, মুলকথা হলো সরকারি দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নির্ভর করে মানসিকতার ওপর। পদের বিষয়টি তার পরে, আর যোগ্যতা থাকলে দায়িত্ব যত কঠিনই হোক তা সহজেই পালন করা যায়।