রামুতে এনজিওর কিস্তির চাপে দিশেহারা মানুষ

fec-image

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় সংকটময় মূহুর্তে দরিদ্র জনসাধারণকে ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে। ফলে করোনা ভাইরাস এর কারণে কয়েকমাসের লকডাউন আর ভীতিকর পরিস্থিতিতে দিশেহারা মানুষ পড়েছে আরও চরম বিপাকে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই ছোট-বড় বেসরকারি সংস্থাগুলো কয়েকদিন ধরে ঋণ আদায়ে গ্রাহকদের চাপ দিয়ে যাচ্ছে। সরাসরি গিয়ে আবার অনেকে মুঠোফোনেও কল করে ঋণের টাকা ২/১ দিনের মধ্যে পরিশোধের জন্য তাগাদা দিচ্ছে।

জানা গেছে, রামু উপজেলায় মুক্তি, গ্রামীন ব্যাংক, শক্তি ফাউন্ডেশন, উদ্দীপন, পদক্ষেপ, ব্যুরো, আশা, কোস্ট-ট্রাস্টসহ আরও অনেক বেসরকারি সংস্থা ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। করোনা পরিস্থিতিতে চলতি মাসের (জুন) ৩০ তারিখ পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত করছে। এরপরও রামুতে জোরপূর্বক এনজিও’র ঋণের কিস্তি আদায় অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে জনমনেও দিনদিন ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ডের হালদারকুল, ধরপাড়া, হিন্দুপাড়া, পালপাড়াসহ আশপাশের অনেক ক্ষুদ্র ঋণের গ্রাহক জানালেন, কয়েকদিন ধরে মুক্তি, গ্রামীন ব্যাংক, পদক্ষেপ, আশা, উদ্দীপন সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার মাঠকর্মীরা কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আসছে। অনেকে মোবাইল ফোনে কল করে ঋণের টাকা জমা রাখার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। জমা হলেই মাঠকর্মীরা সেই টাকা নিয়ে যাবেন।

রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের শ্রীকুল, অফিসেরচর, মেরংলোয়া এলাকার অনেকে জানান, মুক্তি, আশা, শক্তি ফাউন্ডেশনসহ কয়েক এনজিও সংস্থার মাঠ কর্মীরা ঈদুল ফিতরের আগেই তাদের কিস্তির জন্য তাগাদা দেয়। কিন্তু তাদের অনেক করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন ও নিঃস্ব হওয়ায় টাকা দেননি। পরে ঈদের পর থেকে আবারও ঋণের জন্য চাপ দিয়ে আসছে।

পত্রিকায় নাম আসলে তাদের আর ঋণ দেয়া হবে না-এমন আতংকের কথা জানিয়ে ভুক্তভোগী এসব গ্রাহকরা তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। তাঁরা আরও জানান, তাদের ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সংস্থাগুলো ব্যবসা করলেও করোনা পরিস্থিতিতে এসব সংগঠন অসহায়-কর্মহীন মানুষের কল্যাণে কোন ভূমিকা পালন করেনি।

রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান জানিয়েছেন, এ ইউনিয়নে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। এরমধ্যে করোনায় কর্মহীন মানুষ আরও দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি নির্দেশনা না মেনে অনেক এনজিও ঋণের কিস্তি আদায়ের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি একটি অভিযোগ পেয়ে বেসরকারি সংস্থা মুক্তির এক কর্মকর্তাকে তিনি ডেকে নিয়ে সরকারি লিখিত নির্দেশনা ছাড়া ঋণ আদায় না করার নির্দেশ দেন।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানিয়েছেন, চলতি মাস পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে ঋণের টাকা আদায় না করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও রামুর কোথাও যদি জোরপূর্বক কিস্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রশাসনকে অবহিত করার অনুরোধ জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন