Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

রেটিনা চাকমাকে ভালবেসে বিয়ে করায় চাকরী হারালেন : মৃত্যুর হুমকি তবু স্ত্রীকে ফেরত চান প্রথম আলোর সাবেক ফটো সাংবাদিক সৈকত ভদ্র

10993430_919706058060897_63921773501995254_n
স্টাফ রিপোর্টার:
সাংবাদিক সৈকত ভদ্র ও রেটিনা চাকমা জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সদস্য। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সবসময় উপজাতীয় অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেকোনো ঘটনা ঘটলেই পাহাড়ীদের পক্ষে ঢাকায় সভা সেমিনার, মানবন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে মুক্তি কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ ও পেশাজীবী সম্প্রদায়। শুধু তাই নয়, ঢাকা থেকে দ্রুত ছুটে যান পার্বত্য চট্টগ্রামে। তাদের বক্তব্যে সব সময় পার্বত্য বাঙালী বিরোধিতার সুর। সাংগঠনিকভাবে রেটিনা চাকমা ও সাংবাদিক সৈকত ভদ্রও হয়তো এ ধরণের কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন দীর্ঘদিন। কিন্তু সহযোদ্ধা রেটিনা চাকমাকে ভালবেসে বিয়ে করায় সবকিছুই মুহুর্তে ওলটপালট হয়ে যায়। সৈকত ভদ্র আর সহযোদ্ধা থাকেন না- হয়ে যান প্রতিপক্ষ ‘বাঙালী’। চাকমাদের দৃষ্টিতে যা ভয়াবহ অন্যায় সেই পাহাড়ী-বাঙালী বিয়ের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। সংগঠনের নেতারাও ‘বিশেষ স্বার্থে’ সৈকত-রেটিনার প্রেম-বিয়ে সংক্রান্ত জটিলতার সমাধানে এগিয়ে আসেনি। এমনকি উপজাতীয় অধিকারের পক্ষে সোচ্চার জাতীয় সংবাদপত্র প্রথমআলোও তার স্টাফ ফটোগ্রাফারের কোনো অন্যায় নেই জেনেও তার পক্ষে না দাঁড়িয়ে বরং বিশেষ মহলের চাপে চাকুরিচ্যুত করেছে।
অর্থাৎ ভালবেসে চাকমা মেয়েকে বিয়ে করাই কাল হলো প্রথম আলোর সাবেক স্টাফ আলোকচিত্র সাংবাদিক সৈকত ভদ্র’র। প্রথম আলোর আকর্ষণীয় চাকরী হারিয়েছেন, উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের মৃত্যু হুমকিকে পরোয়া না করে স্ত্রীকে ফেরত পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করেও কাজ হচ্ছে না।  অপরদিকে ভালবাসার মানুষের ভুলে যেতে স্ত্রী রেটিনা চাকমার উপর চলছে মধ্যযুগীয় বর্বরতা।  সাংবাদিক সৈকত ভদ্র জানেনই না তার স্ত্রী এখন কোথায় আছে। বর্তমান বিশ্বে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দেশে, মহাদেশ নির্বিশেষে বিয়ে হচ্ছে সর্বত্র। কেবল বাংলাদেশের পাহাড়ী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কাছেই এটা মহা অপরাধ। যেকোনো কোনো পাহাড়ী মেয়ে কোনো বাঙালী ছেলেকে বিয়ে করলে পাহাড়ী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ওই মেয়েকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে থাকে। এমনকি পাহাড়ী মেয়েরা বাঙালী ছেলেদের সাথে প্রেম, বন্ধুত্ব, চলাফেরা করলে পাহাড়ী সংগঠনগুলো ওই মেয়েকে চাপ দেয় ফিরে আসতে। কিন্তু ফিরে না এলে জাতি রক্ষায় নামে উল্লিখিত শাস্তি দেয়া হয়। এটাই তাদের অঘোষিত শাস্তি। তাই নিরুপায় হয়ে অবশেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্ত্রীকে ফেরত পাওয়ার জন্য।
lkko
২৩ ফেব্রুয়ারী সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সাংবাদিক সৈকত ভদ্র। সাংবাদিক সম্মেলনে সৈকত ভদ্রের লিখিত বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হলো:
“একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাংলাদেশেও মেয়েদের উপর নিলামের মত মধ্যযুগীয় বর্বরতা সংঘটিত হতে পারে সেটা জেনে আপনারা অবাক হতে পারেন ।
আমি সৈকত ভদ্র ও রেন্টিনা চাকমার মধ্যে পরিচয় হয় সাংগঠনিক কাজের সূত্র ধরে ২০১০ সালে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের মাধ্যমে। আমি বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের সদস্য এবং আমার স্ত্রী রেন্টিনা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের(ইউপিডিএফ এর অঙ্গ সংগঠন) সদস্য। আমাদের সম্পর্কের শুরু হয় ২০১২ সালের জানুয়ারী থেকে।
২০১৩ সালের ২ অক্টোবর আমরা বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে করি। চাকরির কারণে রেন্টিনা খাগড়াছড়িতে এবং আমি ঢাকাতে থাকতাম। লেখক শিবির এবং তার মঞ্চ জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের অনেকেই আমাদের সম্পর্ক সম্বন্ধে জানত। এমনকি আমার প্রতিষ্ঠান দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার অনেকেই জানতো। ২০১৪ সালের মে মাসের প্রথম দিকে ঢাকাতে আসে আমার সাথে দেখা করার জন্যে। বাড়িতে ফিরে যাবার পর ওর বাবা-মা আমাদের সম্পর্ক পুরোপুরি জেনে যায় এবং ওর উপর শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করে এবং আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আমাদের বিয়েটাকে পুরোপুরি গোপন করে খুব দ্রুত ওর অমতে ওকে অন্যত্র বিয়ে দেবার চেষ্টা করে। তারপর ২৩ মে ২০১৪ তারিখে ওর অমতে ওর উপর বিয়ের নামে প্রহসন চাপিয়ে দেয়। মে মাসের শেষের দিকে রেন্টিনা আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং ওকে ওখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে আসতে বলে। তখন আমি আমার কর্মস্থল প্রথম আলোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি সম্পর্কে জানাই এবং আমার ছুটি প্রয়োজনের কথা বলি।
৪ জুন আমি খাগড়াছড়ি গেলে ও আমার সাথে ঢাকা চলে আসে এবং আমরা ওর পরিবারকে জানাই। জানাবার পরক্ষনেই বিভিন্ন মহল থেকে আমাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ৫ জুন আমরা বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের কাজ সম্পন্ন করেই আমাদের নিরাপত্তার অভাবে বাধ্য হই ঢাকা থেকে আমার বাড়ি যশোর চলে যেতে। এরপরই গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রিয় সভাপতি মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে অনেকেই আমার কর্মস্থল প্রথম আলো পত্রিকা অফিসে যাই এবং প্রচার-প্রোপাগান্ডা চালায় এই বলে যে আমি রেন্টিনাকে অপহরণ করেছি এবং প্রথম আলোর মধ্যস্থতায় আমরা যেন তাদের সাথে দেখা করি। কর্তৃপক্ষ মাইকেল চাকমার উদ্ধত আচরণ সম্পর্কে আমাকে জানালে আমি বলি বিষয়টা আমাদের একান্তই ব্যক্তিগত এবং বলি যে আমি যদি কোন প্রকার অপরাধ করে থাকি তাহলে তারা যেন আমার কর্মস্থলে না গিয়ে আইনের আশ্রয় গ্রহন করে। একথা জানার পরেই মাইকেল চাকমা আমার কর্তৃপক্ষকে এই বলে যে, “আপনারা ওকে বহিষ্কার করেন তারপর আমরা দেখছি।”
প্রথম আলো কতৃপক্ষ ওদেরকে আইনের আশ্রয়ের কথা বললে ওরা বেরিয়ে আসে এবং পরক্ষণেই মাইকেল চাকমার নির্দেশে আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে। সংবাদটি জানার পরই রেন্টিনা ওর পরিবার ও মাইকেল চাকমাকে মিথ্যা প্রচারণা না করার জন্য বলে। কিন্তু তাদের হুমকি অব্যাহত থাকলে রেন্টিনা ৯ জুন যশোর সদর থানায় গিয়ে সাধারণ ডাইরী করে।
বেশ কিছুদিন পর পরিস্থিতি শান্ত মনে হওয়াতে কাজে যোগদানের জন্য যশোর থেকে আমরা ঢাকা আসি। পরদিন আমরা দুজনে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সাথে অফিসে সাক্ষাৎ করলে তিনি রেন্টিনার সাথে কথা বলেন এবং কোন সমস্যা নেই জানান। অনেক দিন হয়ে যাওয়াতে কাজে যোগ দিতে চাইলে কর্তৃপক্ষ আর কিছুদিন সময় পর পরিস্থিতি শান্ত হলে যোগদানের পরামর্শ দেয়। কয়েকদিন পর অফিসে গেলে আমাকে জানানো হয় যে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঐক্য ন্যাপের পঙ্কজ ভট্টাচার্য একটা চিঠি দিয়েছে। আমরা যেন তার সঙ্গে দেখা করে সমাধান করি তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। দুদিন পরেই রেন্টিনা সহ আমরা কয়েকজন পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানালে তিনি তার ভুল বুঝতে পারেন এবং তখনই মতিউর রহমানকে ফোন করেন।
পরে যোগদানের জন্য অফিসে গেলে আমাকে জানানো হয় যে তারা আমাকে আর চাকরিতে রাখতে পারবে না। কেন জানতে চাইলে বলে যে, আমরা জানি যে আপনার দিক থেকে কোন অন্যায় নেই তবুও বিভিন্ন মহল থেকে এরকম চাপ আসতে থাকলে তাদের পক্ষে আমাকে রাখা সম্ভব হবে না এবং আমাকে পদত্যাগ করতে বললে আমি জানাই যে যখন আমার কোন সমস্যা নেই তখন কেন আমি পদত্যাগ করব? তাদের কাছে কোন যুক্তি না থাকলেও নানাভাবে তালবাহানা করতে থাকে। আমি তখন কর্তৃপক্ষকে বলি যে, পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত থাকলেও তারা আমার চাকরি থেকে বহিষ্কার চাইছে কারণ আমার মনে হচ্ছে পরবর্তীতে তাদের বড় রকমের আমাদের বিরুদ্ধে কোন পরিকল্পনা আছে। অনেক ভাবে বোঝানোর পরেও প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে ছলনা করতে থাকলে তাদের দিক থেকে দেওয়া পদত্যাগ পত্র গ্রহন করি।
এর মাঝে অনেকদিন সময় অতিবাহিত হতে থাকে। আর কোন প্রকার হুমকি আসে না। আমরাও বাইরে স্বাভাবিক ভাবেই চলাচল করতে থাকি। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে, আমরাও আমাদের আগামী দিনগুলোর নানাবিধ পরিকল্পনা করতে থাকি। রেন্টিনার বাবা-মা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে এবং তারা বোঝাতে থাকে এই বলে যে তারা আমাদের সম্পর্কটাকে মেনে নিয়েছে। আমাদেরও ভাল লাগে তাদের আচরণে। পরবর্তীতে গত ৩ আগস্ট ২০১৪ তে আমার শ্বাশুড়ি আমাদেরকে না জানিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হয় এবং রওনা দেওয়ার পর আমাদের জানায়। আমাদের মনে কিছুটা সন্দেহ হলেও যেহেতু ঢাকায় আসছে তাই তাকে পরদিন সকালে বাসাই নিয়ে আসি।
তিনদিন বাসায় থাকে, এর মাঝে আমার শ্বশুর ফোন করে বলে যে তোমাদের কে আমরা মেনে নিয়েছি এখন আর কোন সমস্যা নেই। গোপনে রেন্টিনা এসে দুদিন ঘুরে যাক। আর রেন্টিনার মা যে এখানে এসেছে সেটা সমাজের কেউ জানে না। কিন্তু রেন্টিনা কোন ভাবেই তাদের প্রস্তাব গ্রহন করে না। আমিও বলি যে বেশিদিন হয়নি, অনেক ঝামেলা করেছেন আপনারা। তখন তিনি বলেন যে ইউপিডিএফ এর সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ নেই, এখন তাদের নিজেদের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের মনে আশঙ্কা থেকে যায় এবং আমরা বলি যে মা এসেছে তাতে সকলের ভালই লাগছে তবে এখন নয় আর কিছু দিন পর রেন্টিনা যাবে। তখন আমার শ্বশুর আমাকে বলে যে তোমার যদি সন্দেহ থাকে তাহলে তুমিও আস। আমরা কোন ভাবেই খাগড়াছড়ি যেতে না চাইলে আমার শ্বাশুড়ি একাই ঐ দিন ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
আমরা দুজনে টিকেট কাটতে কল্যাণপুর বাস কাউন্টার গেলে শ্বাশুড়ি ফোন করে বলে যে তার শরীর ভাল লাগছে না তাই কাল যাবে। তখন ৬ আগস্ট সকালের টিকেট কাটতে চাইলে তিনি রাতের গাড়িতে যাবে বলেন। আমরাও রাতের শ্যামলী বাসের টিকেট কাটি। পরদিন আমি যথারীতি বাইরে বের হই। রেন্টিনা তার মাকে নিয়ে শাহাবাগের দিকে ঘুরতে যায় বিকালের দিকে। রাতেই গাড়ি সেহেতু শ্বাশুড়ি তাড়াহুড়ো করতে থাকে। শ্বশুর রেন্টিনাকে বলে যে তোর মা যেহেতু চেনে না তাই গাড়ি না ছাড়া পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডে থাকিস। আমরা তাদের ষড়যন্ত্র কোন ভাবেই বুঝতে পারি না। যেহেতু রেন্টিনার মা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন সেই সংবাদ কেউ জানে না তাই আমি সিদ্ধান্ত নেই যে আমি একটু দূরে দূরে থাকব যেন তাদের পরিচিত জন কেউ না জানতে পারে যে গোপনে আমাদের সম্বন্ধে মেনে নিচ্ছেন, তাহলে রেন্টিনার পরিবারই ঝামেলায় পড়বে। ওদের একটু আগে পাঠিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ পর আমি কাউন্টারের একটু দূরে পৌঁছালে দেখি অনেক পাহাড়ি ছেলেরা ওখানে এবং তাদের কজন যে ইউপিডিএফ এর সদস্য সেটা চিনতে পারি।
রেন্টিনাও আমাকে তার ভীতির কথা জানায় এবং মায়ের আচরণও যে পাল্টে গেছে সেটাও বলে এবং আমাকে আমার বন্ধুদের ডাকতে বলে। আমি আমার বন্ধুদের জানাই, গাড়ি আসতে তখনও অনেক দেরি, আমার বন্ধুরা আসছে বলে। আমি একটু দূরে ফোনে কথা বলতে থাকি । পাহাড়ি ছেলেরা চারিদিকে ভাগ হয়ে যায়। আমি কোন কিছুই ঠিকমত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। দূরে থাকাতে আমার উপর আক্রমণের আশঙ্কা থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার বন্ধুরা চলে আসবে দুজনে এক জায়গায় থাকি তারপর যা হয় হবে। এই ভেবে কাউন্টারে গেলে দেখি রেন্টিনা নেই, পরক্ষণে খোঁজাখুজি করে জানতে পারি যে কজন ছেলেরা এসে আমার স্ত্রীকে একটু সামনে ডাকে, তারপর জোর করে ধরে নিয়ে একটা গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে আমার শ্বাশুড়ি আর রেন্টিনার ফোন বন্ধ পাই।
ঐদিন রাতেই মিরপুর থানাতে যেয়ে অপহরণের মামলা করতে গেলে প্রথমে দায়িত্বরত পুলিশ মামলা নিতে চাইলেও পরে মামলা হবে না বলে জানায়। তখন অন্যদের পরামর্শে ৭ আগস্ট সাধারণ ডাইরী করি। ৭ আগস্ট রাতেই রেন্টিনা আমাকে একটা এসএমএস করে জানায় যে আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে আমি যেন অতি দ্রুত বাসা পাল্টাই। তারপর থেকে তার আর কোন খোঁজ জানতাম না অনেক দিন। বহুভাবে তার সংবাদ জানার চেষ্টা করলেও কোন সংবাদ না পেলে ওদের বাড়ীর পাশের একজনের ফোন নম্বর জোগাড় করে জানতে চাইলে বলে যে রেন্টিনাকে বাড়িতে আটকে রেখেছে।
পরেরদিন পাহাড়ি একজন লোক আমাকে ফোন করে পরিচয় না দিয়েই বলে যে আমি যদি কারো সঙ্গে কোনভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করি তাহলে আমাকে মেরে ফেলবে। ঐ লোক রেন্টিনা ঢাকায় থাকার সময় কয়েকবার ফোন করেছিল তখন তার নাম সেভ করা থাকাতে বললাম যে আপনি অমূল্য চাকমা আমাকে ভয় দেখাবেন না এবং আপনি যে ইউপিডিএফ এর সদস্য সেটা আমরা জানি। মানবিকতার বিষয়টা বিবেচনায় রাখবেন আশা রাখি। কিন্তু সে তখন বলে যে ঐ সব মানবিকতা বুঝি না, রেন্টিনা যদি তেমন কোন চেষ্টা করে তাহলে ওকেও মেরে ফেলা হবে। জাতি রক্ষার জন্য তাদের একজন চলে গেলে কিছুই হবে না। আমি তখন তাকে বলি যে আপনারা তো ঐ অস্ত্রবাজি ছাড়া আর কিছু বোঝেন না। মেয়েরা তো আপনাদের সমাজের সম্পত্তি যে তার ইচ্ছার কোন মূল্যই নেই।
এত কিছু ঘটছে কিন্তু আমার সংগঠনের (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল) বর্ষীয়ান নেতারা একসাথে সংগ্রাম করা ইউপিডিএফ এর সঙ্গে এ বিষয়ে কোন প্রকার আলোচনাই করে না। তাদের ভাবনা তারা যদি এ বিষয়ে কোন প্রকার আলোচনা করতে চায় তাহলে ইউপিডিএফ মুক্তি কাউন্সিল থেকে সরে যেতে পারে। কৌশলগত কারণে তারা এই অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কোন কথা আলোচনা করেনি। অন্যদিকে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে তারা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছে।
এর মাঝে রেন্টিনা আমার সঙ্গে খুব গোপনে অনেকবার কথা বলেছে অন্যদের ফোন থেকে। তাকে আইনের মাধ্যমে ওখান থেকে নিয়ে আসার কথা বললে আমি আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলি, আইনের মাধ্যমে গেলে তোমার পরিবারসহ অনেকেই নানাভাবে হেনস্থার শিকার হবে সেটা না করে আর একটু পরিবেশ শান্ত হলে তুমি চলে আসতে পারলে সেটাই ভাল হবে।
গত ডিসেম্বরে আমাকে রেন্টিনা জানাল যে ইউপিডিএফ সহ সকলে তাকে চাপ দিচ্ছে ঐ ছেলেটার সঙ্গে সংসার করতে। সে বারবার প্রতিবাদ করছে। কোন প্রকার সমাধান যখন হচ্ছে না তখন তাকে ভারতে তার ভাইয়ের কাছে পাঠায়। ওখান থেকে আমাকে ফোন করে জানায়। আবার তাকে ভারত থেকে নিয়ে আসে খাগড়াছড়িতে এবং আর কয়েকবার সমাজের ,তার পরিবার, ইউপিডিএফ সহ মিটিং হয়। যখন কোন সমাধান হচ্ছে না তখন রেন্টিনার পরিবারের কাছে কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। না হলে ওকে ওদের সমাজের মেয়েদের জন্য চরম শাস্তি নিলামে তোলা হবে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত হলে দু-একদিনের মধ্যে ইউপিডিএফ তাকে বাড়ি থেকে জোর করে শহরের পাশের একটা গ্রামে আটকিয়ে রাখে এবং ঐ ছেলেটাকেও ধরে আনে এবং দু’পরিবারের কাছে চাঁদা দাবি করে। পরে গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে ওখান থেকে আমাকে ফোন করে এবং খুব আতঙ্কিত কণ্ঠে অতি সংক্ষিপ্তভাবে জানায়।
পরে আমি রেন্টিনার বাবাকে ফোন করলে তিনি খুব ভেঙ্গে পড়া কণ্ঠে আমাকে শোনায় যে তার এখন কিছুই বলার নেই। তখন থেকে আমি খুব আশঙ্কার মধ্যে আছি এবং আমি বিভিন্ন জায়গাই যোগাযোগের চেষ্টা করি। পরের দিন রেন্টিনার বাবা আমাকে ফোন করে বলে যে, আমি যদি আর কোন ভাবে রেন্টিনার খোঁজ নেবার চেষ্টা করি তাহলে আমার দূরের মৃত্যু কাছে চলে আসবে। তখন আমি বলি যে, যে সমাজ রক্ষার জন্য ওকে নিয়ে গেলেন তারাই আজ রেন্টিনার কি অমানবিক আচরণ করছে। তার বাবা বলে যে সেটা রেন্টিনার ব্যাপার যা হবার হবে। তখন আমি বলেছিলাম যে আপনি তো আপনার কথা বলছেন না, যা বলার সেটা তো ইউপিডিএফ এর চাপে বলছেন।
আমি তারপর আর কোন যোগাযোগের চেষ্টা না করে আইনের দ্বারস্থ হই। আমার স্ত্রীকে সুস্থ অবস্থায় ঐ রকম বর্বর নির্যাতনের হাত থেকে উদ্ধার করতে। গত ১২ ফেব্রুয়ারিতে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ঢাকায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১০০ ধারায় আমার স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য মামলা করি, মামলা নং- ৬৪/২০১৫, স্মারক নং- ২২৪/(২)। বিজ্ঞ আদালত ১৯ ফেব্রুয়ারিতে তার বাবা-মাকে রেন্টিনাকেসহ ঢাকার কোর্টে হাজির হবার নির্দেশ দেয়। কিন্তু আমার স্ত্রীকে নিয়ে তার পরিবার আসে না। তখন আদালত রেন্টিনাকে উদ্ধারের নিমিত্তে সার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন।
এমতাবস্থায় আমি আমার স্ত্রী রেন্টিনা চাকমাকে নিয়ে শঙ্কিত। যত দ্রুত সম্ভব আইনের মাধ্যমে আমি আমার স্ত্রীকে ফেরত চাই এবং পাহাড়ে নিলামের নামে মধ্যযুগীয় বর্বরতার তীব্র প্রতিবাদ জানাই”।
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “রেটিনা চাকমাকে ভালবেসে বিয়ে করায় চাকরী হারালেন : মৃত্যুর হুমকি তবু স্ত্রীকে ফেরত চান প্রথম আলোর সাবেক ফটো সাংবাদিক সৈকত ভদ্র”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন