রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যতটুকু সহায়তা দরকার, করবে থাইল্যান্ড : প্রধানমন্ত্রী

fec-image

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনে যতটুকু সহায়তা দরকার তা করবে থাইল্যান্ড। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে তাঁর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। তবুও থাইল্যান্ড চেষ্টা চালাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমার প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে যারা আমাদের এখানে আশ্রয় নিয়েছে তাদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে আমরা আলোচনা করেছি। মিয়ানমারের ওপর থাইল্যান্ডের একটা প্রভাব আছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী (সেরেথা থাভাইসিন) বলেছেন, তিনি এটা আরও গভীরভাবে দেখবেন। প্রত্যাবর্তনের যতটা সহযোগিতা দরকার, সেটা তিনি করবেন। এ কথা তিনি দিয়েছেন।’

মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন—এ বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারের এই বিষয়টি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। বর্তমান যে পরিস্থিতি সেখানে চলছে সেটা নিয়ে থাইল্যান্ডও বেশ উদ্বিগ্ন। তবুও (রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে) চেষ্টা চলবে—এটুকু আশ্বাস (থাই প্রধানমন্ত্রী) দিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সার্বিক উন্নতি; বিশেষ করে—এসডিজি অর্জনের পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ বেশি প্রয়োজনের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। সেদিক থেকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের আলোচনাটা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে হয়েছে। এ ছাড়া, আমি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান করেছি। আমরা হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক জোনে তাদের জায়গা দেব।’

থাইল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী—জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলতে পারি, কি পেলাম আর কি পেলাম না—সেটা বড় কথা না। সহযোগিতা পাওয়ার ও সার্বিক উন্নয়নের নতুন দুয়ার খুলে গেল। ভালো সুযোগ সৃষ্টি হলো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সব সময় দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতা, যোগাযোগ, মতবিনিময় ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারণ সার্বিকভাবে আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্ব গুরুত্বপূর্ণ।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সরকার গঠনের পর এইবার প্রথম বিদেশ সফর করলাম থাইল্যান্ডে। বলতে গেলে, ঘরের কাছের পড়শি দেশ। আমি সব সময় বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেই। থাইল্যান্ডের খাদ্য, ফসল, ফল উৎপাদনে অনেক গবেষণা ও উৎকর্ষ আছে। এসব ক্ষেত্রে মতবিনিময় করছি। গবেষণা কীভাবে দুই দেশ ভাগাভাগি করতে পারে, অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীরা বিনা ভিসায় সেখানে (থাইল্যান্ডে) যেতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সহজে পণ্য রপ্তানি-আমদানি সহজভাবে করতে পারব। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ থাইল্যান্ড যেহেতু পর্যটন ক্ষেত্রে অগ্রগামী—সেই অভিজ্ঞতাটাও আমরা নিতে পারি। সেখানে (পর্যটনে) বিনিয়োগ করতে পারবে, আমরা জায়গাও দিতে পারব। পাশাপাশি আমাদের যে ৮০ মাইল লম্বা বালুকাময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আছে, সেখানেও বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছি। সেখানে জায়গা চাইলে আমরা দেব।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ভালো সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যা ভবিষ্যতে আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে। থাইল্যান্ড আসিয়ানভুক্ত দেশ এবং এখন বিমসটেকের সভাপতি। বিমসটেকটা আমরাই প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছি, আমি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে আছি। আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতায় গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’

করোনা পরবর্তী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হওয়া দরকার এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মতবিনিময় করে, অভিজ্ঞতা বিনিময় করে দেশের মানুষের কল্যাণ করতে পারাকে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন বলেও জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন