শিল্পের প্রতীকী দিক নাকি ভারতীয় কৌশল? বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের হুমকি


বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম শুধু ভৌগোলিকভাবে নয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবেও সংবেদনশীল এলাকা। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু শিল্পকর্মে দুর্গাকে পাহাড়ের “রক্ষক” হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রথম দেখায় এটি নিছক ধর্মীয় শিল্পায়ন মনে হলেও, গভীর বিশ্লেষণে দেখা যায়—এটি আসলে ভারতীয় ভূরাজনৈতিক কৌশল এবং হিন্দুত্ববাদী প্রতীকের মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা।
শিল্পের প্রতীকী দিক
শিল্পে প্রতীক ব্যবহারের একটি শক্তিশালী দিক হলো—এটি দৃশ্যমান রূপের আড়ালে গভীর বার্তা বহন করে। দুর্গা শক্তির প্রতীক, কিন্তু এই শিল্পকর্মে তাকে উত্তর ভারতের আর্য-ঐতিহ্যের মানুষ হিসেবে হাজির করা হয়েছে। তার হাতে থাকা ত্রিশূলও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অস্ত্র নয়, বরং উত্তর ভারত ও নেপালের শক্তিপূজারীদের ঐতিহ্য। এছাড়া ছবির পেছনে ওঠা সূর্য বাংলাদেশের পতাকার লাল নয়, বরং গেরুয়া রঙের। গেরুয়া ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির অন্যতম প্রতীক। এর ফলে শিল্পকর্মটি নিছক ধর্মীয় চিত্রায়ন থেকে বের হয়ে একটি ভূরাজনৈতিক বার্তা বহন করছে।
ভারতীয় কৌশল ও অস্থিতিশীলতার প্রচেষ্টা
ভারত দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে “buffer zone” হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এই অঞ্চলে সামরিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা ভারতের কৌশলের অংশ।
১. দুর্গাকে রক্ষাকর্ত্রী করা: পাহাড়ের মুক্তি আসবে ভারতের প্রতীকী শক্তি থেকে—এই বয়ান ছড়ানো হচ্ছে।
২. বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অসুর বানানো: রাষ্ট্রের বৈধ উপস্থিতিকে অশুভ শক্তি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
৩. পাহাড়িদের এজেন্সি কেড়ে নেওয়া: মুক্তি বা রক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নেই, বরং ভারতীয় প্রতীক আছে।
৪. অস্থিতিশীলতা বজায় রাখা: এর মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলে রাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব তৈরি করে ভারত কৌশলগত সুবিধা নিচ্ছে।
ঢাকাই লিবারেলদের ভূমিকা
রাজধানীর কিছু বাম-লিবারেল মহল হয়তো সরাসরি ভারতের হয়ে কাজ করছে না, কিন্তু তারা অজান্তেই ভারতীয় প্রতীক ও বয়ানকে বৈধতা দিচ্ছে। দুর্গাকে পাহাড়ের “মুক্তিদাত্রী” হিসেবে প্রচার করা আসলে ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রকল্পকে শক্তিশালী করছে।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের হুমকি
এই ধরনের শিল্প আসলে সাংস্কৃতিক অস্ত্র। এর মাধ্যমে বলা হচ্ছে—পাহাড়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব অবৈধ, মুক্তি আসবে বাইরের শক্তির হাত ধরে। ফলে শিল্প শুধু সৌন্দর্যের বাহক নয়, বরং একটি রাজনৈতিক প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশের জন্য এর বার্তা স্পষ্ট, সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের প্রতীক ও বাহিনীকে “অসুর” বানানো হচ্ছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বাস্তব অস্তিত্ব মুছে দিয়ে বাইরের শক্তির উপর নির্ভরশীলতা তৈরি করা হচ্ছে।
শিল্পকর্মটি নিছক ধর্মীয় আবহে আঁকা হলেও এর ভেতরে ভারতীয় কৌশল লুকিয়ে আছে। প্রতীকী শিল্পের আড়ালে ভূরাজনৈতিক বার্তা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য স্পষ্ট হুমকি। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে বাইরের শক্তির দয়ার উপর নির্ভরশীল দেখানো মানে হলো—বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অকার্যকর প্রমাণ করা।