ঢাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

‘শেখ মুজিবুর রহমান পাহাড়িদের বাঙালি হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন’

fec-image

শেখ মুজিবুর রহমান পাহাড়িদের বাঙালি হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম। তিনি  বলেন, তার কন্যা শেখ হাসিনা সরকার ২০১১ সালে ৩০ জুন সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীতে দেশের সকল জাতিসত্তাসমূহকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছে।

শুক্রবার (২৪ জুন ২০২২) বেলা ৩ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পিসিপি’র ঢাকা শাখা কর্তৃক আয়োজিত ঢাকায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর উদ্যোগে ঢাকাস্থ একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নিয়ে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা পাহাড়ি জাতিকে শোষণ-বঞ্চণার হাত থেকে মুক্ত করতে ও জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র সমাজকে আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

‌অনুষ্ঠানের ব্যানার শ্লোগান ছিল, ‘জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ছাত্র সমাজ রুখে দাঁড়াও, হুজুগের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে নয়, সুমহান আদর্শে নিজেকে সুসজ্জিত করো, অধিকার হারা জাতির জন্য একেক জন উপযুক্ত হয়ে উঠতে সচেষ্ট হও’।

পিসিপি’র ঢাকা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রনেল চাকমার সভপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অর্ণব চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা, ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা প্রমুখ। এছাড়া পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মিটন চাকমা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।

পিসিপি দলীয় সঙ্গীত ‍“পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রী দল, জ্ঞানের মশাল জ্বালিয়ে নিয়ে এগিয়ে চল…” এই সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

নবীন বরণ অনুষ্ঠানে নবীনদের উদ্দেশ্য অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন পিসিপি’র ঢাকা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক র্তীথ ত্রিপুরা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক রিটেন চাকমা।

অনুষ্ঠানে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও সরকার এদেশের সকল নাগরিকে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে তবেই আমরা এ দেশের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ ও সকল জাতিগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করতে পারবো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর রাঙামাটিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাহাড়িদের বাঙালি হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তার কন্যা শেখ হাসিনা সরকার ২০১১ সালে ৩০ জুন সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীতে দেশের সকল জাতিসত্তাসমূহকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এদেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে সেনাশাসন জারি রেখে পাহাড়ি জনগণকে শাসন-শোষণ নির্যাতন করে তাদের স্বকীয়তা ও অস্তিত্বকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। শাসক শ্রেণি কর্তৃক এই শাসন শোষণের বিরুদ্ধে পাহাড়ি জনগণকে রুঁখে দাঁড়াতে হবে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, নারীরা সমাজের নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়, অবহেলিত ও বৈষম্যর শিকার হয়। আর এই রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক শোষণ নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকে। এই শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে ও আত্মসম্ভ্রম রক্ষার্থে পাহাড়ে নারী সমাজ প্রতিনিয়ত লড়াই সংগ্রাম করে আসছে। আমাদের এই লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

ছাত্র নেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ধনিক, পুঁজিপতিদের জন্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছে। ফলে এখানে নিম্ন, মধ্যবিত্ত লোকদের মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। সমতলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা পড়া লেখা করে তারা আংশিক কিছু মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করতে পেলেও পাহাড়ে শিক্ষার্থীরা তা পায় না। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের বেহাল দশা। পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণি কক্ষ, শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রবাস নেই, শিক্ষকরা ঠিকমত ক্লাস নেয় না। জেলা পরিষদগুলো লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ-বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। সে কারণে আমাদের শিক্ষা জীবনে প্রথম ধাপে প্রাথমিক লেভেলের শিক্ষার্থী বন্ধুরা মানসম্মত শিক্ষাগ্রহণ করার সুযোগ পায় না। ফলে তারা মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক গিয়ে হোঁচট খায়।

ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পৃথিবীর যে কোন দেশের জাতির দুর্দিনে ছাত্র সমাজকে মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। পার্বত্য পাহাড়ি জাতি এক দুর্যোগ পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র সমাজকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ছাত্র সমাজ যদি সচেতন না হয়, অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে এগিয়ে না আসে, পড়ালেখা করে চাকুরির পিছনে ছুঁটে বেড়ায়, সমাজ জাতির রক্ষার্থে ভূমিকা পালন না করে কিংবা হুজুগে গড্ডলিকা প্রবাহে ঘা ভাসিয়ে দেয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে জাতিসত্তাগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

তিনি, অধিকারহারা পাহাড়ি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠান শেষের দিকে ফুল ও পিসিপি’র বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বই প্রদান করে একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়ি, বাঙালি, শেখ মুজিবুর রহমান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন