সাবেক এমপি বদিকে পিতা দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন ইসহাক

fec-image

দীর্ঘ ২৮ বছর পর কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদিকে পিতা দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন মোহাম্মদ ইসহাক নামের ২৫ বছর বয়সী এক যুবক।
পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করারও আবেদন করেছেন তিনি।

রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) টেকনাফ সহকারী জজ আদালতে ইসহাক আবেদন করেন।  বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল মন্নান বলেন, বাদির অভিযোগ আমলে নিয়ে আগামী ১৪ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার জন্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন বিচারক।
টেকনাফ পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম, তরুণের মা সুফিয়া খাতুনসহ আরও সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে।

মোহাম্মদ ইসহাক কক্সবাজার সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির পরীক্ষার্থী। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পরীক্ষা আটকে আছে। বর্তমানে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিসিক শিল্প এলাকার দক্ষিণ মুহুরীপাড়ায় মায়ের সঙ্গে তিনি থাকেন।
মামলায় টেকনাফ পৌরসভার মেয়র হাজি মোহাম্মদ ইসলামকে মূল বিবাদী করা হয়েছে বলে দাবি করেন মোহাম্মদ ইসহাক।

এ ছাড়া তিনি মা সুফিয়া খাতুন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান, একই বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে বিবাদী করেছেন।

বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তার মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। ১৯৯২ সালে ৫ এপ্রিল কালেমা পড়ে তার মাকে বিয়ে করেন আবদুর রহমান বদি। তাদের বিয়ে পড়ান আবদুর রহমান বদিদের পারিবারিক আবাসিক হোটেল নিরিবিলিতে তৎসময়ে কর্মরত মৌলভী আবদু সালাম। বিয়ের স্বাক্ষী ছিলেন হোটেলের দারোয়ান এখলাছ। তার গর্ভধারিণী মায়ের কাছেই শুনেন, তার পিতা আবদুর রহমান বদি। মায়ের হাত ধরে অসংখ্যবার পিতার কাছে যান। বাদি ইসহাক আরও বলেন, ‌পিতা আবদুর রহমান বদি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করেন। লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু পিতা আবদুর রহমান বদি তার রাজনৈতিক শত্রু ও সামাজিক অবস্থানসহ নানা সমীকরণ দেখিয়ে মায়ের কাছে সময় নেন। মাও স্বামীর (আবদুর রহমান বদি) কথার অবাধ্য হননি। তাই তার মা সুফিয়া খাতুন এতোদিন চুপ ছিলেন।

মোহাম্মদ ইসহাক আরও জানান, তার বয়স বাড়ার কারণে পিতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। বিষয়টি নিয়ে মা-ছেলে আবদুর রহমান বদির ছোটবোন শামসুন নাহারের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা ঘরোয়া ভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। আবদুর রহমান বদি কৌশলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। এখন আমাদের সাথে তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই অনন্যোপায় হয়ে পিতৃত্বের দাবিতে আদালতের দ্বারস্ত হয়েছেন।

ইসহাক জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দুদকের মামলায় হাজিরা দিয়ে টেকনাফে সংবর্ধনা গ্রহণকালে তার পিতা বদি ছেলে শাওন আর মেয়ে ছাড়া আর কোনো ছেলে মেয়ে নাই দাবি করে বক্তব্য রাখেন। এর পরে সিদ্ধান্ত নেন তিনি আর চুপ থাকবেন না। তাই তিনি আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরেও অভিযোগ করেছেন।

যে কেউ বাবা দাবি করলে মেনে নেবেন বদিঃ এদিকে, উখিয়া-টেকনাফের যে কোনো ছেলে-মেয়ে আদালতে গিয়ে বাবা দাবি করলে তাদেরকে ছেলে-মেয়ে হিসেবে মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি।

বদিকে বাবা দাবি করে সন্তানের স্বীকৃতি চেয়ে ইসহাক নামের এক যুবকের আদালতে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দেন তিনি। পিতা দাবি করার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক এমপি বদির সাথে আদালতে যাওয়া ছেলে দাবিদার যুবক ইসহাকের চেহারার সাথে মিল আছে দাবি করে তাকে স্বীকৃতি দিতে বদির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন