কক্সবাজার সুগন্ধা পয়েন্টে ৫ একর জমিতে উচ্ছেদ অভিযান
কক্সবাজার কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্টে ৫ একর সরকারি জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। বাতিলকৃত পাঁচটি প্লটে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এসব প্লট থেকে বড় ১০টি স্থাপনাসহ প্রায় ৩০টি মতো ঝুপড়ি উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: শাহরিয়ার মুক্তার।
জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্টস্থ সরকারি বাতিলকৃত প্লটে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলকারীরা বিভিন্ন ধরণের ঝুপড়ির স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা করে আসছে। একটি চক্র এসব স্থাপনা তৈরি করে দফায় দফায় হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্বও হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এসব অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ দেন প্রশাসন। বুধবার দিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
অভিযান পরিচালনাকারী মো. শাহরিয়ার মুক্তার জানান, বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সুগন্ধা পয়েন্টে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাঁচটি বাতিলকৃত প্লটে এই অভিযান চলে। এতে বড় ধরণের ১০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া আর ২০টি মতো ঝুপড়ি উচ্ছেদ করা হয়। এসময় ৩ জনকে ছয় হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার পর্যটন এলাকার কলাতলীর সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে চলছে হরদম দখলবাজি। সরকারি শত কোটি টাকার জমির ওপর প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠছে অবৈধ স্থাপনা। দিনে যেমন-তেমন গভীর রাতেও চলে দখলের মহোৎসব। প্রশাসন কোনোভাবেই দমাতে পারেনা এই শক্তিশালী দখলবাজদের।
কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টের রাস্তার উত্তর পাশে রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে দখলবাজ সিন্ডিকেটের সারিবদ্ধ হরেক রকমের অবৈধ দোকান। যেখানে রয়েছে শুঁটকি, রেস্টুরেন্ট, ফিশ ফ্রাই, ফার্মেসি, ট্যুরিজম অফিসসহ নানা পেশার দোকান। এ উত্তর সারির অবৈধ স্থাপনার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন দুই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। যারা সম্প্রতি এ অবৈধ স্থাপনা বা মার্কেটের নামে সুগন্ধা বৃহত্তর শুঁটকি, রেস্টুরেন্ট, ফিশ ফ্রাই ব্যবসায়ী সমিতির জন্ম দিয়েছে।
এ সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কক্সবাজার শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবদুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক জসিম উদ্দিন। মূলত এ দু’জনের নেতৃত্বে সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তর সারির সরকারি শত কোটি টাকার জমি দখলে রয়েছে।
তাদের সঙ্গে যারা দখলবাজদের তালিকায় রয়েছে- মহেশখালীর মুফিজ, কলাতলীর নুর মোহাম্মদ, রবিন, তার বড় ভাই নাছির, রাসেল, মো. হানিফ, আরিফ, বাবু, পরিবেশ অধিদফতরের অফিস সহকারী আলম, সোহেল, সৈকত, আল্লার দান হোটেলের মালিক মনির, নয়ন, কিবরিয়া, ইয়াহিয়া, ভারুয়াখালীর খালেক, মো. মেহেদী, হালিম, হামিদ সওদাগর, ছোট হামিদ, সাদেক, আবদুল্লাহ বিদ্যুৎ ও সাহেদ।
আরও জানা গেছে, সরকারি মূল্যবান জমি দখলের জন্য প্রশাসন ম্যানেজ ও মামলা, হামলাসহ নানা কৌশল চালিয়ে যান নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জসিম উদ্দিন। মূলত তার নেতৃত্বে চলে দখলের সব কার্যক্রম। প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের পরও নানা কৌশলে বহাল তবিয়তে টিকে থাকে তারা। ভয়ভীতি দেখিয়ে উচ্ছেদ অভিযান থামানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রশাসনের একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযানকে তোয়াক্কা না করে সরকারি জমিতে অবৈধ দোকান নির্মাণের কারণে পর্যটন এলাকার সর্বস্তরের লোকজনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সুগন্ধা পয়েন্টের এ অবৈধ স্থাপনার সিংহভাগ ইতিপূর্বে ১০ বার উচ্ছেদ করে উদ্ধার সরকারি জমিতে তারকাটা দেয়াসহ ৯০টি নারিকেল গাছের চারা রোপণ করা হয়েছিল। কিছু দিন যেতে না যেতেই তারকাঁটা, নারকেল গাছ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া সাইনবোর্ড তুলে নিয়ে যায় দখলবাজরা।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার জানান, হোটেল মোটেল জোনসহ পুরো কলাতলীতে কোন ধরণের অবৈধ স্থাপনা থাকবে না। একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে ঝুপড়ির স্থাপনা তৈরি করে বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগও রয়েছে। প্রশাসন এসব দখলবাজদের চিহ্নিত করেছে। এতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে ক্রমানয়ে।