কাপ্তাইয়ের কেপিএমে

স্ক্র্যাপের নামে রাতের অন্ধকারে কয়েক লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ পাচার

fec-image

কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পেপার মিল্স লি. (কেপিএম) থেকে রাতের আঁধারে পুরাতন স্ক্র্যাপ যন্ত্রাংশের আড়ালে কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে কয়েক লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ পাচারের খবর পেয়ে স্থানীয় জনতা, প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় ৩টি ট্রাক (ঢাকা মেট্র ট- ১৬/৭৮৪৪, ঢাকা মেট্র ট- ১৬-৮৭০০, সিলেট ট- ০২-০০২৬) আটক করে। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের উপর ক্ষিপ্ত হলে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ সম্মুখ্যস্থ সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চট্টগ্রামের সাগরিকাস্থ মেসার্স ইকবাল এন্ড ব্রাদার্স ক্র্যাপ যন্ত্রাংশ ক্রয়ের নামে কেপিএমের সাথে আঁতাত করে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ পাচারের খবর পেয়ে আমরা চট্টগ্রাম’মূখী উক্ত ট্রাকগুলো সন্ধ্যার পর কেপিএমের মূল ফটকে গতিরোধ করি। ট্রাকগুলো প্রত্যক্ষ করে দেখতে পাই, স্ক্র্যাপ যন্ত্রাংশের পাশাপাশি নতুন যন্ত্রাংশও পাচার করা হচ্ছে।

কাপ্তাই থানা পুলিশের এসআই মো. খলিল পার্বত্যনিউজকে জানান, মালামাল গ্রহীতা গেইটপাশ ছাড়া গাড়ি ভর্তি মালামালের বৈধ কোন কাগজপত্র তাৎক্ষনিক দেখাতে পারেনি। এসময় স্থানীয় জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদারের উপর চড়াও হলে ঘটনাস্থল থেকে তাদের দ্রুত ট্রাক ভর্তি মালামালসহ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসি।

ঘটনার পর ওইদিন চন্দ্রঘোনা ইউপি কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৮টায় স্থানীয় প্রশাসন ও কেপিএম ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জরুরী বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তক্রমে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা সদরে উপস্থিত হলেও এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত বিকাল সাড়ে ৫টায় পর্যন্ত কোন বৈধ কাগজপত্রই দেখাতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছে চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবি।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, কেপিএমের যোগসাজসে এসব যন্ত্রাংশ পাচারের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে রাতভর গোপন বৈঠক করে বিভিন্ন কাগজ হাতে ঘষামাঝার মাধ্যমে তৈরি করে কেপিএম কর্তৃপক্ষ। যার ফলশ্রুতি হিসেবে সকালে কেপিএমের প্যাডে বিসিআইসির ভুঁয়া সভার কথা উল্লেখ করে সচিবের সাক্ষর জাল করে এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে সকলের সামনে কাগজ উপস্থাপন করে।

এদিকে কর্ণফুলী পেপার মিলস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম.এম.এ কাদেরের পক্ষে এসময় উপস্থিত ছিলেন, মহা-ব্যবস্থাপক (এমটিএস) স্বপন কুমার সরকার, কেপিএমের ব্যবস্থাপক আহসান আলী ভূইয়া সহ আরও অনেকে।

এই ঘটনায় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে কেপিএমের ব্যবস্থাপক আহসান আলী ভূইয়া জানান, ট্রাকভর্তি আটক মালামালের বিসিআইসি কর্তৃক বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াও বৈধ উপায় অবলম্বন করে করা হয়েছে।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, কর্ণফুলী পেপার মিলস থেকে মালবাহী ৩টি ট্রাক আটক করে স্থানীয় জনতা। যেখানে চকচকে নতুন প্যাকেটকৃত লোহার ব্লেড ও মালামাল রয়েছে। এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে থানা পুলিশ তাদের হেফাজতে নেন। এসময় পুলিশের কাছে উপস্থাপনকৃত কাগজপত্রে বিসিআইসি’র অনুমোদিত কোন কাগজ দেখাতে পারেনি কেপিএম কর্তৃপক্ষ।

কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক বলেন, বিসিআইসির বোর্ড সভার অনুমোদন ছাড়া এমন কাজ (স্ক্র্যাপ বিক্রয়) যদি কেপিএম কর্তৃপক্ষ করে থাকে, তাহলে আমি এটাকে চুরি বলবো। আমার মনে হয় উচ্চ পর্যায়ের একটি মহল কেপিএমের এমডি’কে এ ঘটনা থেকে বাঁচাতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চন্দ্রঘোনার কেপিএম এলাকায় জনসাধারণে ক্ষিপ্ত থাকার খবর পাওয়া গিয়েছে। এ বিষয়ে কাপ্তাই থানা অফিসার ইনচার্জ মো. নাছির উদ্দিন জানান, বর্তমানে কেপিএমে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশের টহল দল মোতায়ন করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিসিআইসির বোর্ড সভার অনুমোদিত বৈধ কাগজ উপস্থাপন করা হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন