হালদার উৎপত্তিস্থলে তামাক চাষে নদী দূষণ, পরিদর্শণে দুদক

মানিকছড়ি প্রতিনিধি:

এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বাংলাদেশের হালদান নদী। আর এ নদীর উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও রামগড় উপজেলায়।

সম্প্রতিকালে নদীর উৎপত্তিস্থল মানিকছড়িতে অবাধে তামাক চাষে অর্থ বিনিয়োগ করছে ব্রিটিশ আমিরিকান টোবাকো কোং।

তামাক চাষের ফলে চুল্লি ও তামাক গাছের অবশিষ্ট অংশ (মূল ও কান্ড) থেকে নিগৃত রস অনায়াসে গড়িয়ে পড়ছে হাদলা খালে। এতে মৎস্য প্রজনন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

এনিয়ে ইলেকট্রনিক ও সংবাদপত্রে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংবাদের সত্যতা যাচাই করতে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সরেজমিন পরির্দশনে আসে দুদক টিম।

সূত্রে জানা গেছে, হালদা নদীর চারপাশে ভরাট, পরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও নদীর উৎপত্তিস্থলে তামাক চাষ বিস্তার লাভ করেছে। এতে করে দূষিত হচ্ছে হালদা নদীর পানি!

সম্প্রতি এ বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়রি সত্যতা যাচাইসহ পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাঙ্গামাটির সহকারী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম ও মো. আবুল বাশার সরেজমিন পরিদর্শণে মানিকছড়ি আসেন।

এ সময় জেলা কৃষি অধিদফদরের উপ-পরিচালকের প্রতিনিধি ও জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান ও উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী মিলন কান্তি চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

দুদক টিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন মানিকছড়ি থানা পুলিশ।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর উৎপত্তিস্থল রামগড় উপজেলার পাতাছড়া। আর এ নদীর সংযোগ স্থল মানিকছড়ির গোরখানা সংলগ্ন ডলুখাল। হালদা এবং ডলুখালের সংযোগ স্থল ঘিরে অবাধে চাষ হচ্ছে তামাক! অথচ ৮/১০ বছর পূর্বে এসব লোকালয়ে হয়েছিল রেশমচাষ। রেশম পোঁকার একমাত্র খাদ্য ছিল ‘তুত গাছ’। তুত গাছের পাতা খেয়ে রেশম পোঁকা অবাধে রেশম (সুতা) বুনত। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে হঠাৎ করে রেশম চাষ বন্ধ কার্যক্রম গুঁটিয়ে নেয় তুলা উন্নয়ন বোর্ড। ফলে ওইসব জনপদে দৃষ্টি পড়ে তামাক কোম্পানীর! শুরু হয় তামাকের চাষ! এতে প্রতিনিয়ত দূষিত হতে থাকে হাদলার সূপেয় পানি। দূষিত পানি অবাধে হালদা মিশে ব্যাঘাত ঘটে মৎস্য প্রজননে! বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয় হালদা গবেষক দলের। তাঁরা একাধিকবার সরেজমিন পরিদর্শন করে তামাক চাষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সরেজমিন পরিদর্শনে দুদক টিমের সহকারী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম তামাক চাষের সত্যতা পেয়ে হালদা দূষণে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদার উজানে অবাধে তামাক চাষ ও বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। মূল হালদার সংযোগ স্থল ডলুখালের চারদিকে অবাধে তামাক চাষ ও অসংখ্য চুল্লি এখনো দৃশ্যমান! তামাকের জমি থেকে অনায়াসে পানি গড়িয়ে পড়ছে হালদায়। এতে ব্যাহত হচ্ছে মৎস্য প্রজনন! আজ আমরা সরজমিনে এর সত্যতা পেয়েছি। এ নিয়ে কৃষি.মৎস্য ও পরিবেশ অধিদফতরের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী কৃষি মৌসুমে যাতে হালদার উজানে কেউ তামাক চষে অর্থ বিনিয়োগ করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন