মিয়ানমারে বৌদ্ধদের ইসলাম গ্রহণ ঠেকাতে নতুন আইন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মিয়ানমারে বৌদ্ধদের ইসলাম গ্রহন ঠেকাতে নতুন আইন তৈরি করতে যাচ্ছে সেই দেশের সরকার। গত ২৭শে মে মিয়ানমারের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত মিডিয়া ধর্মান্তকরণ বিরোধী একটি আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে।

খসড়া আইনে তিন ধারায় একটি তদন্ত বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা টাউনশিপ পর্যায়ে থাকবে। এর প্রধান হবেন হেড অব রিলিজিয়ার্স এফেয়ার্স (চেয়ারপার্সন), জাতীয় নিবন্ধন বিভাগের প্রধান হবেন এই বোর্ডের ডেপুটি চেয়ারপার্সন। এ দু’জন ছাড়া প্রত্যেকটি টাউনশিপের উপপ্রশাসক এবং তার মনোনীত একজন, মহিলা সংক্রান্ত ফেডারেশনের চেয়ারপার্সন এবং শিক্ষা বিভাগের একজন সদস্য বোর্ডে থাকবেন। আইনের ৭ক ধারা অনুযায়ী এই বোর্ডের কমপক্ষে ৪ জন ধর্মান্তকরণে আগ্রহী ব্যক্তির শুনানি গ্রহণ করবে। ৭খ ধারা অনুযায়ী আবেদন করার ৯০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করতে হবে। শুনানি কালের বোর্ডের সদস্যগণ নিশ্চিত হবেন যে, ধর্ম পরিবর্তনে ইচ্ছুক ব্যক্তি যে ধর্ম গ্রহণ করতে চান তার মর্মবাণী তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন কিনা। বিশেষ করে বিবাহ, তালাক, এবং সম্পত্তির উত্তারিধকার এবং শিশুর হেফাজত সংক্রান্ত ধর্মীয় বিধানাবলী সম্পর্কে তার জ্ঞান রয়েছে কিনা। এসব তদন্ত শেষে বোর্ড সন্তুষ্ট হলে কোন একজন ব্যক্তিকে ধর্ম পরিবর্তনের পারমিট দেবে বা নাকচ করবে।

এশিয় হিউম্যান রাইটস কমিশন গতকাল এক বিবৃতিতে পৃষ্ঠা ২০ কলাম ১ বলেছে, মিয়ানমার প্রকাশ্য থেকে ছদ্মবেশী সামরিক শাসন প্রবর্তনের পর থেকে অগণতান্ত্রিক আইন পাশের ধারাবাহিকতায় এ আইন পাশ করেছে। এতে ধর্মীয় অধিকার প্রত্যাখানের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ এই আইনে বলা হয়েছে পারমিট ছাড়া কেউ ধর্ম পরিবর্তন করতে পারবে না। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস মনে করে এটা নিসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, এই আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বৌদ্ধরা যাতে অন্য ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে না পারে তা প্রতিরোধ করা। আইনে যেসব বিধি বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে কোন নাগরিকের পক্ষে নিজের ধর্ম পরিবর্তন করা বাস্তবে অসম্ভব হয়ে পড়বে।

গত শুক্রবার হিউম্যান রাইট ওয়াচের এশিয় পরিচালক ব্র্যাড এডামস এক বিবৃতিতে বলেছেন, একজনের ধর্ম বিশ্বাস নির্ধারণের সরকারের অনুমতি লাভের বিধান নিশ্চিত ভাবেই ধর্মীয় স্বাধীনতার মৌলিক শর্তাবলীর বিচ্যুতি ঘটাবে। সরকারি কর্তৃপক্ষ একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেবে। তারা নাগরিকদের আবেদন নাকচ করবে।

মা বা থা নামে একটি চরমপন্থি ভিক্ষুদের প্রচারণার ফলে এই আইন পার্লামেন্টে আনা হয়েছে। সংগঠনটির নাম এসোসিয়েশন ফর দ্য প্রটেকশন অফ রেস অ্যান্ড রিলিজিয়ন। এই গ্রুপটি ইতিপূর্বে ৯৬৯ নামে একটি কুখ্যাত মুসলিম বিরোধী সংগঠন হিসেবে তৎপর ছিল। সামপ্রতিক বছরগুলোতে সংখ্যালঘু বিরোধী সহিংস ঘটনাগুলোতে তাদের মদত লক্ষ্য করা গেছে।

মা বা থা একই সঙ্গে পার্লামেন্টে আরও তিনটি বিল আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তঃধর্ম বিবাহ ও বহু বিবাহ নিষিদ্ধকরণ। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়েও তাদের চিন্তাভাবনা আছে। এই গ্রুপটি গত বছর চারটি আইনের খসড়া মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠিয়েছিল।
গত মঙ্গলবার সরকারী কর্তৃপক্ষ ধর্ম সংক্রান্ত বিলের খসড়া প্রকাশ করেছে। আগামী ২০ জুন পর্যন্ত এ বিষয়ে তারা জনমত যাচাই করবে। এই আইন পাশ হলে ধর্ম পরিবর্তনে আগ্রহী যে কাউকে চারটি মন্ত্রণালয়ের কাছে দরখাস্ত করতে হবে, এগুলো হচ্ছে ধর্ম, মহিলা, জনসংখ্যা ও শিক্ষা। এর পর তারা পারমিটের জন্য ৯০ দিন অপেক্ষা করবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন