রোহিঙ্গাদের দমনপীড়নে গণহত্যার উপকরণ রয়েছে

পার্বতনিউজ ডেস্ক:

দক্ষিণ এশীয় মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত দমনপীড়নে গণহত্যার উপাদান রয়েছে।

সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।

সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস নামের দক্ষিণ এশীয় এক মানবাধিকার নেটওয়ার্কের কর্মীদের পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলা হয়।

এ নেটওয়ার্কের পক্ষে ৭ থেকে ১১ ডিসেম্বর কক্সবাজারে তিনটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পরিচালনা করা হয়। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে মিশনের ফল প্রকাশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, ভারতের বিশষ্টি সাংবাদিক ভারত ভূষণ, মালদ্বীপের মানবাধিকার কর্মী জিহান মাহমুদ, নেপালের আইনজীবী রাজেন্দ্র ঘিমিরি, বাংলাদেশের বিশষ্টি আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং শ্রীলংকায় অবস্থিত এই নেটওয়ার্কের সচিবালয়ের নির্বাহী পরিচালক দিকশিয়া ইলাংগাসিংহে উপস্থিত ছিলেন।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘বর্ধিত ও ব্যাপক আকারে সহিংসতা, নির্যাতন, প্রাণহানি, যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণ, জোরপূর্বক বাস্তুচু্যতি, গুম, জমিজমা ও জীবিকা ধ্বংস করার কথা শরণার্থীদের কাছ থেকে জানা গেছে।

আমরা যেসব শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের নাগরিক অধিকার, সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হলে তারা নিজ ভূমিতে ফিরতে চান। অধিকাংশ শরণার্থী শিবির যেগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি, সেগুলোর শরণার্থীদের মধ্যে সন্তুষ্টি আছে যে তারা আশ্রয় ও সেবা পাচ্ছেন এবং বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের এ ধরনের মানবিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত দমনপীড়নে গণহত্যার উপকরণ রয়েছে। তিনটি শরণার্থী শিবিরে অনেক ধরনের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। যে ধরনের অপরাধ সেখানে (রাখাইন রাজ্য) হয়েছে, তা অবশ্যই মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পড়ে।

তবে বিষয়টির আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এ কাজে নাগরিক সমাজ হিসেবে আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। তদন্তে সবার সহযোগিতা করা উচিত।’

তিনি অবশ্য জানান, তাদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এ বিষয়ে বিশদ কাজ করেনি। সারা হোসেন শরণার্থী বিষয়ে জাতিসংঘ কনভেনশন অনুসমর্থন এবং সব রোহিঙ্গাকে শরণার্থীর মর্যাদা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ভারত ভূষণ বলেন, ‘ভারতের জনগণ রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে গভীরভাবে জানেন না। ভারতের মিডিয়াগুলোর এ সংকটের সংবাদ সংগ্রহে কক্সবাজারে সাংবাদিকদের পাঠানো উচিত।

বাংলাদেশের জনগণের একার পক্ষে এ সংকটের সমাধান করা সম্ভব নয়। এ সংকটের আঞ্চলিক সমাধান খুঁজে দেখতে হবে। সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ থাকতে হবে।

আমার মনে হয় না, চীন কিংবা ভারতের তরফে এ ব্যাপারে কোনো চাপ দেয়া হবে। রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখলে তা ভারতের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। কেননা ভারত অ্যাক্ট ইস্ট নীতি গ্রহণ করেছে।

তার মাধ্যমে কালাদান প্রকল্প গ্রহণ করে মিজোরামে সংযোগ স্থাপন করতে যাচ্ছে। ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপ করে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করতে মিয়ানমারকে পরামর্শ দেয়া।’

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছেন, চাল, ডাল, তেলের সরবরাহ আগের মতো এখন দেয়া হয় না।

তবে স্থানীয় জনগণ ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের মতামত, শরণার্থীরা তাদের অন্য প্রয়োজন মেটাতে খোলাবাজারে ত্রাণসামগ্রী বিক্রি করে দিচ্ছে।

যথষ্টে পরিমাণ খাবার সরবরাহ সত্ত্বেও মেডিকেল কর্মীরা দাবি করেন, মহিলা ও শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। মিয়ানমারে ধর্ষণের শিকার মহিলাদের মধ্যে নিস্তব্ধতা লক্ষ করা গেছে।

তাদের মানসিক ও সামাজিক পরামর্শ দেয়া অধিক প্রয়োজন। তাদের চিহ্নিত করে সংবেদনশীল আচরণের মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে হবে।’

প্রতিবেদনে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনে সুরক্ষা প্রদান এবং হিংসা, নির্যাতন ও বৈষম্য প্রতিরোধ করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এতে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী, অন্য দোষী ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আরও সোচ্চার ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়।

 

সূত্র: যুগান্তর

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন