আমরা মানুষের ঘরে ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করছি:  তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা মানুষকে বলার চেষ্টা করছি কি সেই ৩১ দফা? যার মূল কথা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।

যেই বাংলাদেশের প্রত্যাশা প্রত্যেকটি মানুষের একটি বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার থাকবে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকবে। কারণ একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অধিকার যদি প্রতিষ্ঠিত করা না যায়, সবকিছুই নষ্ট হয়ে যাবে।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন যত দেরি হবে, তত বেশি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের ডালপালা বাড়তে থাকবে। সমাজের মধ্যে এখনই বিভিন্ন রকম কথাবার্তা আস্তে আস্তে ছড়াচ্ছে যে, এ দেশ থেকে যারা পালিয়ে গিয়েছে তারা মানুষের বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। অবশ্যই তারা সেই সম্পদগুলো সেই ষড়যন্ত্রের পেছনে ব্যয় করবে। কাজেই দেশকে যদি একটি স্থিতিশীল অবস্থার ভেতরে আনতে হয় তবে তার দায়িত্ব অবশ্যই জনগণের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এ দেশের মূল মালিক জনগণ। এ দেশ নিয়ে কী হবে, না হবে সে সিদ্ধান্ত নেবার একমাত্র ক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষের। আমরা জনগণের অধিকার যত দ্রুত তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারব, জনগণের অধিকার যত দ্রুত এ দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব, তত দ্রুত দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে আবার সক্ষম হবো।

সোমবার বিকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘আমার বিএনপি পরিবার’ এর উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোকচিত্র সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সঙ্গে এ মতবিনিময় হয়। এতে দলের ভারপ্রাপ্তে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে আহত সাংবাদিকদের আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।

তারেক রহমান বলেন, সমগ্র পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায় তা হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। সেটি ইউনিয়ন পরিষদ হোক, সেটি জাতীয় পর্যায়ের হোক। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ তাদের মতামত প্রকাশ করে থাকে। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তারা কী চায়। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার জবাব দিয়ে থাকে তারা দেশকে কী বলতে চায়। রাজনীতিবিদসহ সকলকে কী বলতে চায়, নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ এসব কাজ করে থাকে। কাজেই জনগণের অধিকার যদি জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হয়, দেশ কিভাবে চলবে, কী হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ জনগণের।

প্রকৃত সংস্কার করতে হলে রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে করতে হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, সংস্কারকে সফল করার জন্যই এমন মানুষের দরকার যারা সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তা না হলে কোনো সংস্কার সফল করা সম্ভব হবে না। সংস্কারের প্রস্তাবনা আজ থেকে দু’বছর আগে এ দেশের রাজনীতিবিদরাই দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। কাজেই এ দেশের প্রকৃত সংস্কারও যদি করতে হয় তাহলে অবশ্যই সেটি রাজনীতিবিদদের মাধ্যমেই করতে হবে।

সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন, অবশ্যই দেশের রাজনীতিবিদদের বাইরেও বহু মানুষ আছেন, বহু শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন, বুদ্ধিজীবী আছেন, সিভিল সোসাইটির মানুষ আছেন। আমরা অবশ্যই তাদের পরামর্শ নিব। তার ভিত্তিতে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাবো। কিন্তু বিষয় হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব না পাবে, তাদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনোভাবেই কোনো সংস্কারের পূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ যাদের সঙ্গে জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে তারাই তাদের কথা তুলে ধরতে পারবে। তারাই এক জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সামগ্রিকভাবে দেশকে সেদিকে পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।

তারেক রহমান বলেন, দেশটা কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা কোনো বিশেষ দল কারো না। দেশটা সবার। এই দেশপ্রেম থেকেই সেদিন (জুলাই-আগস্ট আন্দোলন) সমাজের প্রতিটা শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে বেরিয়ে এসেছিলেন। দেখেছি ইউএনডিপির রিপোর্ট বের হয়েছে, সেখানে ষাট জনের মতো শিশুই সেদিন শহিদ হয়েছে। আর তার পরবর্তীতে জাতিসংঘের যে রিপোর্ট কয়েকদিন আগে বের হয়েছে, সে সম্পর্কে কম বেশি সবাই জানেন। গত পনেরো বছরও যদি বাদ দেই, মাত্র জুলাই-আগস্ট মাসেও যদি ধরি তাহলেই বোঝা যায় যে কী পরিমাণ মানুষকে শুধু দু’মাসের আন্দোলনেই হত্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ দুই তিন সপ্তাহের মধ্যেই কতগুলো মানুষকে শহিদ হতে হয়েছে। তাহলে বিবেচনা করে দেখতে পারেন গত পনেরো বছর ধরে কত মানুষকে গুম-খুনের-হত্যা করা হয়েছে। কী পরিমাণ মানুষ অত্যাচার-নির্যাতিত হয়েছে।

তিনি বলেন, খুব সাধারণ মানুষের কাছে গেলে একটি কথা বেরিয়ে আসে যে, আমরা সবকিছুই বুঝেছি কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান কী হবে? নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিদিন যেভাবে উঠছে নামছে, যা মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে গিয়েছে। মানুষের জানার ইচ্ছা, এই সমস্যার সমাধান কবে হবে। আজকে বাংলাদেশের বহু মানুষ সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যে পরিমাণ মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়া উচিত, তা মানুষ পাচ্ছে না। শিক্ষা ব্যবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষকদের গুণগত অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এই জাতির সামনে অন্ধকার ছাড়া অন্য কিছু নেই। দেশের অনেক মৌলিক সমস্যা আছে যার একটি মৌলিক সমাধানের পরিকল্পনা ৩১ দফায় দিয়েছি। আমরা যদি মানুষের সমস্যার সমাধান করতে না পারি তাহলে উচ্চকক্ষই বলুন, এক ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবে না বলুন, আরও যথাযথ ক্ষমতার ভারসাম্য যতই যাই বলি না কেনো দিন শেষে মানুষের কোনো উপকার হবে না।

গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার আলোকচিত্র সাংবাদিকদের প্রতি সহমর্মিতা এবং সম্মান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানের আয়োজক ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, তাদের যতটুকুই সীমাবদ্ধতা আছে সেটি নিয়ে তারা চেষ্টা করেছেন। কিছু সংখ্যক ফটোজার্নালিষ্ট যারা আছেন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করছেন। তবে আমাদের অবশ্যই চেষ্টা থাকবে যতজনের পাশে আমরা দাঁড়াতে পারব, দিয়ে ততজন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।

‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কসহ সম্পাদক আশরাফউদ্দিন বকুল, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিন, সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ ও তারিফ রহমান প্রমুখ।

Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন