কক্সবাজারে জোর করে লকডাউন পালন


করোনা ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তৃতি ঠেকাতে সরকার ঘোষিত দুই দফায় লকডাউন পালনে কক্সবাজারে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যায়নি। বড় মার্কেট, শপিংমল বন্ধ থাকলেও ছোট দোকানদাগুলো ‘চুপিসারে’ খুলতে দেখা গেছে। শহরের কৃষি অফিস রোড়, এন্ডারসন রোড, পানবাজার রোড়, বড়বাজারসহ প্রায় সব সড়ক উপসড়কে সারাক্ষণ লোক সমাগমে ভরপুর দেখা গেছে। প্রধান সড়কে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ছোট-সরু সড়কগুলো সারাক্ষণ জ্যাম লেগে থাকে। দেশে যে করোনা চলছে, কাঁচাবাজার ও সড়কের দৃশ্য তা বোঝায় না।
এদিকে, কক্সবাজার শহরে কিছুটা লকডাউনের চিত্র দেখা গেলেও গ্রামগঞ্জে মোটেও প্রভাব পড়েনি। স্বাস্থবিধির তোয়াক্কা না করেই হাটবাজারে লোক সমাগম দেখা গেছে। এমন কি মাস্ক পড়তেও অনীহা সাধারণ মানুষের। লকডাউনে ব্যক্তিগত গাড়ি, রিক্সা, অটোরিক্সা চলেছে ঠিকই। যাদের সীমিত পরিসরে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছে তারাই সীমাহীন নিয়ম ভঙ্গ করেছে। লকডাউনের প্রথম দু’য়েকদিন সড়কে পুলিশের ‘কড়াকড়ি’ থাকলেও তাদের তেজে ভাটা পড়েছে। সুযোগ পেয়ে সড়কে চলেছে বেপরোয়া গড়ি।
অনুসন্ধান মতে, ১৪-২১ এপ্রিল প্রথম সাত দিনের লকডাউন কিছুটা প্রতিপালন হলেও দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত ২২-২৮ এপ্রিলের লকডাউনের প্রতি মানুষের সাড়া, আগ্রহ তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের, খেটে খাওয়া মানুষগুলো সমালোচনা করেছে সরকারি এই সিদ্ধান্তের।
লকডাউনের বিকল্প কিছু করা যায় কিনা, শুরু থেকেই তার প্রস্তাব করে আসছিল কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা। এ জন্য জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সাথে সাক্ষাতও করেছে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
তারা বলছে, ২০২০ সালের টানা লকডাউনে সাধারণ ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখিন তা এখনো কাটিয়ে ওঠতে পারেনি। পুঁজিহারা হয়ে অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বেতন না পেয়ে চলে গেছে কর্মচারি। ব্যাংক ঋণে জর্জরিত ব্যবসায়ীরা, লকডাউনের বিপক্ষে কথা বলেছে বারবার। তাই এবারের লকডাউনকে ‘বিফল’ মন্তব্য করেছে সাধারণ মানুষ।
তবে, লকডাউনের প্রথম দিন থেকে মাঠে কঠোর ছিল জেলা প্রশাসনের মোবাইলকোর্ট। তারা আদেশ অমান্যকারীদের জরিমানা করেছে। পাশাপাশি সতর্কতামূলক প্রচারণাও অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে, পবিত্র রমজান ও আসন্ন ইদ-উল-ফিতর উপলক্ষে কক্সবাজার জেলার সকল উপজেলা ও পৌরসভায় ১ কোটি ৭৪ লক্ষ ৭২৭টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে মোট ৭,৮৬,২৭,১৫০ টাকা এবং মানবিক সহায়তা বাবদ সর্বমোট ১ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা উপ-বরাদ্দ প্রদান করা হয়। প্রাপ্ত অর্থসমূহ সকল পৌরসভা-উপজেলায় পর্যায়ে বিতরণের জন্য প্রদান করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধকল্পে চলমান বিধি-নিষেধের জন্য কর্মহীন হয়ে পড়া গরিব-দুস্থ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদান করে পৌর মেয়রগণ ও ইউএনওদেরকে এই বরাদ্দের অর্থ বিধি-বিধান মেনে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনপূর্বক দ্রুত বিতরণের জন্য অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ এপ্রিল ৬০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ২০৬ জন। এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৭১৩ জন। মারা গেছে ৯১ জন। সেখানে কক্সবাজার সদরে ৪৯ জন।