কক্সবাজারে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের অভিযোগের পাহাড়, সহিংসতার আভাস

fec-image

কক্সবাজার জেলার ৩ উপজেলা-সদর, রামু ও উখিয়ার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ১১ নভেম্বর। ভোটের আগেই ঘটছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। প্রচারণায় বাধা, নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, কর্মীদের মারধরের খবর আসছে প্রতিনিয়ত। পছন্দের প্রার্থীকে এগিয়ে রাখতে একে অপরকে হুমকি প্রদান তো অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। এসব বিষয়ে নির্বাচন অফিসে জমা পড়ছে অভিযোগ আর অভিযোগ।

ভোটের আর মাত্র দুইদিন বাকি। ইতোমধ্যে ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনা। ৫ নভেম্বর রাতে শহরের লিংকরোডে দুর্বৃত্তদের হাতে গুলিবিদ্ধ শ্রমিকলীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার রবিরার মারা গেছেন। চমেক হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ মেম্বার কুদরত উল্লাহ সিকদার। ঘটনার পর  থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভোটের মাঠ। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে ভয় পাচ্ছে অনেক প্রার্থী।

বিশেষ করে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার নির্বাচনী পরিস্থিতি দিনদিন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। বহিরাগত ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে, এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে।

গত ২৯ অক্টোবর নির্বাচন কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেন ঝিলংজার ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বারপ্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদার। প্রতিপক্ষ লিয়াকত আলী নিজ অফিসে অগ্নিসংযোগ করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন। একই অভিযোগ দেন মেম্বার প্রার্থী লিয়াকত আলী। নিজের নিরাপত্তাহীনতা ও অঘটনের আশঙ্কার কথা লিখেন। কুদরত উল্লাহ সিকদারের লোকজনই পরিকল্পিত ঘটনা করবে, এমন আভাস দেন তিনি।

ভোটের আগের রাতে সন্ত্রাসী দিয়ে কেন্দ্র দখলের পায়ঁতারার অভিযোগ তুলেছেন ঝিলংজার ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফজলুল করিম। একই আশঙ্কা মেম্বার প্রার্থী মো. শেখ জামালের। নির্বাচনে গোলযোগ সৃষ্টি ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন ভারুয়াখালীর ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আলী হোছন।

গত ৪ নভেম্বর নির্বাচনী প্রচারণাকালে খুরুশকুলের ১,২,৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মেম্বার পদপ্রার্থী তাহুরা আকতারের শ্লীলতাহানি ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর স্বামী কামাল উদ্দিন ওরফে পোস্টার কামালসহ আরো কয়েকজন এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ করেন তাহুরা।

ঘটনার পরপর ব্যাপক বিক্ষোভ করে প্রদর্শন এলাকাবাসী। প্রতিবাদে শহরে মানববন্ধন, সমাবেশ করেছে। নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও ভোটের দিন ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে নির্বাচন অফিসারকে অভিযোগ করেছেন খুরুশকুলের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন।

ঝিলংজায় নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান টিপু সুলতানের অভিযোগ, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিক। ভোটার তো নাই, তার নির্বাচনী অফিসে কোন মানুষও বসে না। খামারপাড়া, মেহের আলী পাড়ায় প্রচারণাকালে গালমন্দ করেছে শফিক। ছোট ভাই মিছবাহ ব্যানার লাগাতে গেলে বাধা দেয়। এই খবর পৌঁছলে এলাকাবাসী খরুলিয়ায় গিয়ে বিক্ষোভ করে।

চেয়ারম্যান টিপুর অভিযোগ, মাদক কারবারীরা শফিকের পক্ষে কাজ করেছে। মাদক সেবন করে অঘটন ঘটাচ্ছে। নির্বাচনী মাঠে বেশি ঝামেলা করতেছে। টিপুর অভিযোগ, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে বহিরাগতরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে।

অন্যদিকে, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ টিপু সুলতানই ঘোলাটে করছে বলে উল্টো অভিযোগ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী (চশমা) আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শফিকের। তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দমনে হুমকি, ধমকির পথ বেছে নিয়েছে টিপু সুলতান। আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙ্গেছে। চশমার সমর্থক-ভোটারদের মারধর করছে। তাদের হামলায় ৪ জন আহত হয়েছে। তারা নিজেরা ঘটনা করে আমাদের ফাঁসানোর পরিকল্পনা করছে। আমাকে থামাতে সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চাই। এ বিষয়ে ৭ নভেম্বর দুপুরে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে পরিস্থিতি তুলে ধরেন শফিকুল ইসলাম শফিক।

এদিকে, নির্বাচনে খুনখারাবির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চৌফলদন্ডির সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট মো. নুরুচ্ছবিহ। অভিযোগ তুলেছেন নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসকের নিকট দেয়া অভিযোগ নুরুচ্ছবিহ লিখেছেন, দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রকাশ্যে বলছে আওয়ামী লীগের লোকজন। অন্যথায় ভোট কেড়ে নিবে বক্তব্য দিচ্ছে। মুসলিম, হিন্দু, রাখাইনদের ঐতিহ্য নষ্ট করছে।

সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা জানান, প্রার্থীরা অভিযোগ দিচ্ছেন। তা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিকেন্দ্রের জন্য দুইজন করে ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্ততি রয়েছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রার্থীদের সাথে বৈঠক হয়েছে। সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবু আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করলে ব্যবস্থা নিবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।ভোটের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে বিজিবি টহল শুরু হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও মাঠে নামবে।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচনে কোন ধরণের সহিংসতা, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম। এমনকি কোন পুলিশ সদস্যের ব্যাপারেও অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১১ নভেম্বর কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা, ভারুয়াখালী, চৌফলদণ্ডী, খুরুশকুল, পিএমখালী, রামু উপজেলার চাকমারকুল, ফতেখাঁরকুল গর্জনিয়া, ঈদগড়, জোয়ারিয়ানালা, কচ্ছপিয়া, খুনিয়াপালং, কাউয়ারখোপ, রশিদনগর রাজারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি এবং উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং, জালিয়াপালং, রাজাপালং, রত্নপালং ও পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন