কক্সবাজার রেলস্টেশনের আইকনিক নকশায় সামুদ্রিক জীবন

fec-image

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কাছে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় নির্মিত ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন ছয়তলাবিশিষ্ট আইকনিক রেলস্টেশনটি ইতোমধ্যে দেশবাসীর নজর কেড়েছে । যাত্রী সাধারণের জন্য আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে এই রেলস্টেশনটি। দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটির স্থাপত্য নকশায় ফুটে উঠেছে কক্সবাজারের সামুদ্রিক আবহ। ২৯ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের রেলস্টেশনটি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে । ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়।

ইতোমধ্যে কৌতুহল তৈরি হয়েছে এই আইকনিক রেল স্টেশনের স্থপতি সম্পর্কে। সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছে। এই আইকনিক স্টেশনের স্থপতি একজন বাংলাদেশি, তাঁর নাম মো.ফয়েজ উল্লাহ। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং স্থাপত্য বিভাগে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন।

যেভাবে তিনি আইকনিক স্টেশনের কাজ শুরু করেন:
এটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থান, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে স্টেশনের নকশার প্রস্তাব পেয়ে সানন্দেই রাজি হয়ে যান তিনি। এখানে রেলস্টেশন হবে এটা ভেবেই নিজের ভেতর বাড়তি প্রেরণা কাজ করছিল তাঁর। তিনি বলেন, জনপ্রিয় পর্যটনস্থান হিসেবে কক্সবাজারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু আমাদের পছন্দের শহরটাকে আমরা সেভাবে এখনো গোছাতে পারিনি। একটা শহরের প্রবেশদ্বার বলা চলে বাস, রেল বা বিমান বন্দরকে। তাই অধিকাংশ স্টেশনের নকশাও প্রায় কাছাকাছি হয়ে থাকে। স্টেশনে একটা বড় খোলা জায়গা (কনকোর্স হল) থাকে, যেখান দিয়ে যাত্রীরা ভেতরে প্রবেশ করে বা বের হয়ে অন্য গন্তব্যে যায়। কক্সবাজার রেলস্টেশনের এই ট্রানজিশন স্পেসটি (প্রবেশ ও বের হওয়ার জায়গা) আমরা এমনভাবে তৈরির কথা ভাবলাম, যেন একটি বড় ও বিশেষ ধরনের আচ্ছাদন দিয়ে সেটা ঢেকে রাখা যায়।

স্টেশন নির্মাণ প্রসঙ্গে আইকনিক স্টেশনের স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, কক্সবাজারের সামুদ্রিক জীবনের কথা মাথায় রাখলে রেলস্টেশনের ট্রানজিশন স্পেসটা একটা প্রতীক দাবি করে। কক্সবাজার রেলস্টেশন ডিজাইন করার সময় একটা অনুপ্রেরণা নিই। ঝিনুক ও শামুকের গঠনটা বাইরে থাকে, আর বাকি শরীরের অংশটুকু ভেতরে আবৃত থাকে। আমরা সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পুরো রেলস্টেশনটাকে একটা ছাউনি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি। এই জায়গায় আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল খোলস-কাঠামো। এই স্থাপত্যের স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য মূলত সেখান থেকেই এসেছে।

ভবিষতের জন্য একটি ভালো উদাহরণ:
মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, স্টেশনের সঙ্গে মানুষের কেনাকাটা, থাকার জায়গা, ব্যাগ রাখার জায়গা, খাওয়ার জায়গা—নানা কিছু সম্পর্কিত। মানুষ ওখানেই থাকতে পারে, ওখানেই ব্যাগ রেখে বের হয়ে যেতে পারে, হয়তো একটা শহরে বা একটা জায়গায় গেল, সে তার ট্রানজিট স্পেস হিসেবে সেখানে ব্যাগ রেখে বাইরে গিয়ে ঘুরে, কাজ করে এসে আবার চলে গেল। কিংবা ওখান থেকে সে আরেক জায়গায় যাবে, সেখানে তিন-চার ঘণ্টা ট্রানজিট করবে। তাহলে তো একটা হোটেল রুম বা রাত কাটানোর ব্যবস্থা থাকতে পারে। আবার কেনাকাটা করতে পারে। আবার আশপাশে যে প্রতিবেশী আছে, তাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য কিছু কমিউনিটি কর্মকাণ্ডও এখানে আসতে পারে। যেমন বহুমুখী হল। একটা যথার্থ টিওডির উদাহরণ হচ্ছে কক্সবাজার রেলস্টেশন। আমি নিশ্চিত, এটা সঠিকভাবে যদি ব্যবস্থাপনা করতে পারি, তবে ভবিষতের জন্য একটি ভালো উদাহরণ হয়ে থাকবে।

২০২০ সালে রেলস্টেশন প্রকল্পটির নকশার কাজ শুরু হয়। পুরো প্রকল্পে এডিবির পরামর্শক থেকে শুরু করে বেশ কিছু দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে। প্রতিটা পর্যায়ে, প্রতিটা ধাপে নকশা যাচাই করা হয়েছে। প্রকল্প নকশা ও ডকুমেন্টেশন করতে করতে এক বছর লেগে যায়, তারপর শুরু হয় নির্মাণকাজ। সেই হিসেবে প্রকল্পটি বেশ দ্রুতই সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটির স্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপও দ্রুত ও সুন্দর নির্মাণের জন্য প্রশংসার দাবি রাখে। কমলাপুর রেলস্টেশনের পর আমাদের এখানে আর কোনো আইকনিক রেলস্টেশন হয়নি। সাধারণ মানুষ যে প্রকল্পটিকে গ্রহণ করেছেন, সেই জায়গায় আমরা বেশ উচ্ছ্বসিত।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আইকনিক নকশা, কক্সবাজার রেলস্টেশন, সামুদ্রিক জীবন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন