করোনা যুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য বিভাগের অবদান: আক্রান্ত ৫ জনই সুস্থ
মহামারী করোনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর এর সংক্রমণ বিস্তৃতি পেয়েছে সীমান্ত জনপদ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়ও। এই উপজেলার দুটি ইউনিয়নে করোনা আক্রান্ত হয়েছে পাচঁজন। জেলায় সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত উপজেলা এটি। এই পরিস্থিতিতে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে বেড়েছে কাজের চাপ। দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের কাজে সন্তুষ্ট উপজেলার সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, স্বাস্থ্য বিভাগ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশসহ সমাজের সচেতন নাগরিকদের অবদান রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তার, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছে করোনা যুদ্ধে।
জানা গেছে, গত ১৬এপ্রিল ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার তাবলীগ ফেরত এক বাসিন্দা প্রথম করোনা শনাক্ত হন। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়।
২৬ এপ্রিল তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এরপর ২৭ এপ্রিল সদর ইউনিয়নের কম্বনিয়া গ্রামের আরও একজন নারী করোনা শনাক্ত হলে ২৮এপ্রিল তাকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়। গত ৮ মে সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া কম্বনিয়া গ্রামের আলম আরা, তার শিশু পুত্র ও এক যুবতী মেয়ে সুস্থ হয়ে ১৩ মে বাড়ি ফিরেছেন।
অন্যদিকে বিদেশ ফেরতসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এবং রোগীর সংস্পর্শে থাকায় উপজেলায় ৫০জনকে কোয়ারান্টিনে রাখা হয়। এরমধ্যে ৪৮জন হোম কোয়ারান্টিন, ১জন প্রাতিষ্ঠানিক ও ১জন হাসপাতাল আইসোলেশনে। এসব ব্যক্তিদেরও নানাভাবে পরামর্শ ও চিকিৎসা দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অন্যান্য হাসপাতালের ন্যায় অগ্রিম প্রস্তুতি হিসেবে নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়।
চাহিদা অনুযায়ী সুরক্ষা সরঞ্জাম হিসেবে পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক, চশমা, হেক্সিসল, হ্যান্ড গ্লাভসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এই কারণে হাসপাতালে আইসোলেশন, হোম কোয়ারান্টিন এবং মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেকটা নির্ভয়ে মানুষের মাঝে সেবা দিতে পারছেন।
এই ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন জানান- করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর স্বাস্থ্য বিভাগ সাধারণ মানুষকে করোনা বিষয়ে ধারনা দিচ্ছেন।
কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনে স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা সেবার জন্য সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশংসিত হচ্ছে। তবে হাসপাতালে সংকট থাকা অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও চিকিৎসক বাড়ানো হলে স্বাস্থ্য বিভাগে আস্থা বাড়বে মানুষের।
এদিকে গত এক মাসের অধিক সময় ধরে করোনা বিষয়ে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা. আবু জাফর মো. ছলিম, মেডিকেল অফিসার ডা. আবু রায়হান ও ডা. আব্দুল্লাহ আল আহসান আইসোলেশন ওয়ার্ড ও করোনা আক্রান্ত রোগীদের সার্বক্ষনিক চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য পরিদর্শক পল্লব বড়ুয়া, ল্যাব টেকনিশিয়ান ছৈয়দ নুর কাদেরী, ইপিআই টেকনেশিয়ান দুংহ্লাগ্য চাক, এ্যালি চাক, হাসপাতালের কর্মকর্তা আবুল কালাম, পরিসংখ্যানবিদ মাহাবুব, স্বাস্থ্য সহকারী মো. শাহাজাহান করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
জেলা সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গেল এপ্রিল মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বোচ্চ করোনা টেষ্ট করেছে। এই উপজেলায় এপ্রিল মাসে ১৩০সহ ১০মে পর্যন্ত ১৭০জনের নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। ৫জন রোগী সুস্থ্য করে তোলার কৃতিত্বও নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য বিভাগের।
জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্ত ডা: আবু জাফর মো. ছলিম বলেন, করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসক টিম। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে হাসপাতালের পক্ষ থেকে নিয়মিত সচেতনতা মূলক মাইকিং প্রচারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান- বিশেষ করে বিদেশ ফেরত এবং ঢাকা-রানায়নগঞ্জ থেকে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় তাদের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। এসব কাজে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করছেন।