কাউখালীতে বিদ্যুৎ নেই ৭ দিন
রাঙামাটি প্রতিনিধি
গত বৃহস্পতিবার থেকে একটানা ৭ দিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা। বিগত দশ বছরের মধ্যে এ ধরণের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মধ্যে আর কখনও পড়েনি কাউখালীবাসী। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক হবে এব্যাপারে কোন তথ্যও দিতে পারেননি বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা। কাউখালী উপজেলা সংলগ্ন রাঙ্গুনীয়া ও রাউজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে ও কাউখালীতে বিদ্যুতের বেহাল অবস্থা। ফলে ভূতুরে নগরীতের পরিণত হয়েছে পুরো কাউখালী ও আশপাশের এলাকাগুলো। বিদ্যুতের অভাবে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন ঔষধ একেবারে নষ্ট হওয়ার পথে। উপজেলা প্রশাসনেও হচ্ছে না কোন কাজ কর্ম।
কাউখালী বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, সেই পুরনো কথা। কাপ্তাই থেকে সমস্যা হয়েছে, আমাদের করার কিছুই নেই। কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের এসব অদক্ষ কর্মকর্তাদের কারণে চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শহর থেকে একেবারে কাছাকাছি কাউখালী উপজেলার এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য অংসুই প্রু চৌধূরী জানিয়েছেন, কাউখালীর আবাসিক প্রকৌশলী সুভাষ চৌধুরীর বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করার কথা রয়েছে তাকে কাউখালী থেকে প্রত্যাহার করে নিতে। মূলত: বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষমতাধর আবাসিক প্রকৌশলীর দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কাউখালীতে বিদ্যুৎ এর এত বড় বিপর্যয় বলে মনে করছেন তথ্যাভিজ্ঞ মহল। দীর্ঘদিন ধরে সুভাষ চৌধুরী বিদ্যুৎ বিভাগের খাস ভুমি বিক্রয়সহ ভুয়া ভাউচার বিল উত্তোলন এবং বিদ্যৎ লাইন মেরামত দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্বসাৎ করার সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বেপোরোয়া উঠেছে আবাসিক প্রকৌশলী সুভাষ চৌধুরী।
কাউখালীতে এমনিতে আকাশে মেঘ দেখা দিলে অথবা একটু বাতাস বইলে বিদ্যুৎ আর থাকেনা। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সোজা জানিয়ে দেন কাপ্তাই এলাকায় সমস্যা হয়েছে,আমাদের এখানে কোন সমস্যা নেই এই কথা বলে নিজেদের দায়মুক্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন
মঙ্গলবার রাতে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম জানিয়েছেন,বিগত ৬দিন ধরে কাউখালীতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যেভাবে ভেঙ্গে পড়েছে তাতে রীতিমতো অবাক হওয়ার মতো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান আবাসিক প্রকৌশলী ঠিকমতো কর্মস্থলে অনুপস্থিতি এবং বিদ্যুৎ’র বিভিন্ন সমস্যায় কাউখালীর ঘাগড়ায় পাওয়ার ট্রান্সফারমার ত্রুটির কারণে গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত ৮টায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই থেকে আর বিদ্যুতের দেখা মেলেনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা বানিজ্য, ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাসা বাড়ীর ফ্রিজে রাখা মাছ মাংস ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কার্যক্রম, ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফ্রিজে রক্ষিত লাখ লাখ টাকার ঔষধ ও টিকা সমূহ।
এছাড়া জরুরী বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ডাক্তাররা। বিদ্যুৎ না থাকায় নিমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় অনেক শিশুকে রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নির্মল কান্তি বড়ুয়া জানান, বিদ্যুৎ না থাকার ফলে স্বাভাবিক টিকাদান কর্মসূচীতে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সমস্যার বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
কাউখালী বিদ্যুৎ সরবরাহের আবাসিক প্রকৌশলী সুভাষ কান্তি চৌধুরী জানান, লো ভোল্টেজের কারণে কাপ্তাই থেকে বিচ্ছিন্ন করে কাউখালী ও রাঙ্গুনীয়ার একাংশে হাটহাজারী থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘাগড়া পাওয়ার ট্রান্সফারমারে ত্রুটি দেখা দেয়ায় পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কাপ্তাই থেকে লাইন দেয়া হলেও তা টিকছে না।
তিনি আরো জানান, আমরা হাটহাজারী থেকে লাইন বিচ্ছিন্ন করে কাপ্তাইয়ের সাথে সংযোগ দিয়েছি। এখন তারা বলতে পারবে বিদ্যুৎ কখন আসবে। কবে নাগাদ এই ট্রান্সফারমার মেরামত হবে সে উত্তরে আবাসিক প্রকৌশলী জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারনে মেরামতের কাজে হাত দেয়া যাচ্ছেনা।