খাগড়াছড়িতে ভয়াবহ বন্যা, আটকা পড়েছে ২৫০ পর্যটক
টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের একাধিক অংশ। ডুবেছে নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম। গত ২০ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেল থেকে জেলা সদরের মুসলিম পাড়া, আরামবাগ, শান্তিনগর, বাস টার্মিনাল, মেহেদী বাগ, বটতলী, টিটিসি এলাকা, উত্তর, স্বনির্ভর, কলেজ পাড়া, দক্ষিণ গঞ্জপাড়া, মাটিরাঙ্গার তাইন্দং, তবলছড়ি, পানছড়ি নিন্মাঞ্চল, দীঘিনালার মেরং বাজার, কবাখালী পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
২১ আগস্ট বুধবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ির সাথে রাঙামটির সাজেক, লংগদু, বাঘাইছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সাজেক সড়কের কবাখালি, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ একাধিক অংশ প্রায় ৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে সড়কটিতে পর্যটকবাহী যানবাহনসহ সকল ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকে বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় ২৫০ জন পর্যটক।
এদিকে বুধবার সকালে চেঙ্গী নদীর পানি কমতে শুরু করে। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করে। তবে দুপুরের দিকে ফের ভারী বৃষ্টি শুরু হলে বন্যার পানি আবারো বাড়তে শুরু করেছে। খাগড়াছড়ির শহরের নিম্নাঞ্চলে আবারো বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে।
খাগড়াছড়ি সদরের কলেজ পাড়ার লাকী চাকমা বলেন, আমাদের এলাকায় কয়েকটি বাড়ি বাদে বাকি সবার বাড়ি বন্যার কবলে পড়েছে। আমাদের এখানে কেউ বা কোন ধরনের ত্রাণ সহায়তা কিংবা শুকনো খাবার বিতড়ন করেনি।
সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের শিবমন্দির দ্রোণচার্য্য পাড়ার বাসিন্দা গীতা চাকমা জানান, এক মাসে দুইবার বন্যায় বাড়ি ডুবে সবকিছু শেষ। কোনো সহযোগিতা মেলেনি কারো কাছ থেকে। গতবারেও মেলেনি, এবারও সেইম। আমরা বর্তমানে কত কষ্টে আছি বলার ভাষা নেই।
জেলা সদরের গঞ্জপাড়ার এলাকার মো. জাহিদুল আলম বলেন, আমাদের এখানে প্রতিবছর বন্যা হয়। বৃষ্টি হলেই আমরা প্রতিনিয়ত বন্যার আতংকে থাকি।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অঞ্জন কুমার দাশ জানান, আমরা সকালে বেশ কযেকটি এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছি। সকালের দিকে কিছুটা হলেও পানি কমে গিয়েছিল। কিন্তু দুপুরের দিকে আবার ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় নতুন করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমরা বন্যায় প্লাবিত মানুষের মাঝে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা চলমান রেখেছি।
খাগড়াছড়ির পৌরসভার প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, সকালে আমরা বন্যা দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এর মধ্যে সকালেই ২ হাজার ৫৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। দুপুরের দিকে ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বন্যার পানি বিপদসীমার উপরে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য ১২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। তাদের জন্য যা করার প্রয়োজন সে বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যায় দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার এবং ৪ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ১২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আজ বুধবার দ্বিতীয়বারের আরও ৯০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বন্যার পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত দীঘিনালার বন্যা পরিস্থিতি। বন্যার পানিতে ডুবে আছে মেরুং ও কবাখালি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম। পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালা- লংগদু সড়কের হেড কোয়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে মেরুং বাজার।
খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার কবাখালিতে আটকা পড়া পর্যটক মো. জহির রায়হান বলেন, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঢাকা থেকে এসেছি। এর আগে বন্যার খবর জানতাম না। এখন আটকা পড়েছি। সড়কের দুই তিন জায়গায় পানি উঠেছে। এত দূর বাইক ভ্রমণ করে আসার পর সাজেক যেতে পারছি না। পানি কমলে কালকে সাজেক যাব।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার মুঠোফোনে বলেন, সাজেক সড়কের বাঘাইহাট বাজার, মাচালং ও কবাখালি অংশে পানি উঠে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ আছে। এতে আটকা পড়েছে প্রায় আড়াইশত পর্যটক।