কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার নগদ টাকা বেড়েছে ৪৫ গুণ, স্ত্রীর ১০ গুণ
খাগড়াছড়ি আসনে তৃতীয় দফায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার গত ১০ বছরে নগদ টাকা বেড়েছে ৪৫ গুণ আর তাঁর স্ত্রীর বেড়েছে ১০ গুণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নির্বাচনী প্রার্থিদের হলফনামা বিশ্লেষণের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা এমপি’র হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রির্টানিং অফিসারের কাছে দাখিলকৃত হলফনামা পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ১০ বছর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামায় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার কাছে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৫০ হাজার। বর্তমানে তাঁর নগদ অর্থের পরিমাণ ৪ কোটি ৭৮ লাখ ১৬ হাজার ৩৩৯ টাকা। স্ত্রীর কাছে নগদ আছে ৩০ লাখ ২০ হাজার ৪৭২ টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্ত্রীর কাছে ছিল ৩ লাখ টাকা। সে সাথে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ঋণের পরিমাণও কমেছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কৃষি ও ব্যবসা থেকে আয় বেড়েছে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার।কমেছে ঋণের পরিমাণও। একাদশ জাতীয় সংসদের হলফনামায় কোটি টাকা দায় থাকলেও তা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদের হলফনামায় জনতা ব্যাংকে দায় ৫১ লাখ টাকা বলে উল্লেখ করেছেন।
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দুবার জয়ী হয়েছেন। এর আগে ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তবর্তীকালীন চেয়ারম্যান।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার হলফনামা পর্যালোচনা করে গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় কৃষি থেকে ২ লাখ ৫৭ হাজার এবং ব্যবসা থেকে ২০ লাখ টাকা আয় ছিল। কিন্তু ১০ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে কৃষি থেকে ৬৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯৮৬ এবং ব্যবসা থেকে ৩ কোটি ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৭০১ টাকা।
নগদ টাকার পাশাপাশি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ব্যাংকে জমা আছে ৫৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। আর স্ত্রীর নামে আছে ৪৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ১০ বছর আগে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ছিল ২৭ লাখ ৫০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ব্যক্তিগত ব্যবহারের স্বর্ণ রয়েছে ৫০ তোলা, যার বাজারমূল্য দেখিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। আর স্ত্রীর নামে আছে ৩০ তোলা, যার মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে ১ কোটি ৩০ লাখ ও স্ত্রীর নামে ৩২ লাখ টাকা। শরণার্থীবিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান হিসেবে বছরে সম্মানী পেয়ে থাকেন ২৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯৩০ টাকা। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবী স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪০২ টাকা।
অন্যদিকে স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ৬০ একর থেকে বেড়ে ৮৪ একরে দাঁড়িয়েছে, যার মূল্য ১ কোটি ২ লাখ ২২ হাজার ৩১৩ টাকা। দ্বাদশ নির্বাচনে ঢাকার উত্তরার ফ্ল্যাট ও রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিতে ৪.৮ একক ভূমির দাম দেখানো হয় ৩১ লাখ ৫০ হাজার।
খাগড়াছড়ি সদরের খাগড়াপুর, খবংপুড়িয়া ও দীঘিনালায় বাড়ি তিনটি রয়েছে তাঁর। যার মূল্য ২০২৩ সালের হলফনামায় দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৬ টাকা। এ ছাড়া একটি পুরোনো প্রাইভেট কার, ভাড়ায় চালিত দুটি পিকআপ, শুল্কমুক্ত একটি ল্যান্ডক্রুজার ও একটি জিপের দাম দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৩ লাখ টাকা।
অপর দিকে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা অপর প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কুকেন্দ্র লাল ত্রিপুরার কাছে এরা অনেকটা শিশু।
খাগড়াছড়ির রাজনীতিতে নতুন মুখ জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত প্রার্থী মিথিলা রওয়াজা পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। আয়ের উৎস চাকরির বেতন বাৎসরিক ৩ লাখ ৫০হাজার ৫০০ টাকা। নগদ অর্থ আছে ৩ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে জমা ২ লাখ টাকা।
তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী উশৈপ্রু মারমা আয়ের উৎস কৃষি এবং ব্যবসা দেখিয়েছেন। বছরে কৃষি থেকে ৫ লাখ টাকা এবং ব্যবসা থেকে আয় করেন ৫ লাখ টাকা। বর্তমানে নগদ ৩ লাখ এবং ব্যাংকে আছে ৫০ হাজার টাকা।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো. মোস্তফা। কনসালটেন্সি পেশা থেকে বাৎসরিক আয় ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। তিনি নগদ ৩ লাখ টাকা এবং ব্যাংক হিসাবে ২ হাজার ৫০০ এবং ২ লাখ টাকার বন্ড উল্লেখ করেছেন।
নির্বাচনে জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেনের আয়ের মূল ভরসা পরিবার। মাত্র এক টাকায় মনোনয়নপত্র কেনা এই প্রার্থী পরিবারিকভাবে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পান। নগদ ৫ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।