খুলে গেলো বান্দরবানের সব পর্যটনকেন্দ্র

fec-image

দ্বিতীয়ধাপে করোনার কারণে বন্ধ থাকা বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। কিছু মানুষের আনাগোনা বাড়লেও তা সন্তোষজনক নয়। প্রথমদিনে মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুকসহ বিভিন্ন হোটেলগুলোতে পর্যটক বরণে অপেক্ষায় ছিল সংশ্লিষ্টরা। এদিকে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে যাওয়ায় হোটেল মোটেল মালিক ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটলেও স্থানীয় মানুষের মাঝে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা গেছে, করোনা মহামারীর এই পর্যায়ে দেশের শনাক্তের হারে শীর্ষে থাকা ১০ জেলার মধ্যে বান্দরবান দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বিভিন্ন স্পটে পর্যটকদের ঢল নামবে। আর সেই পর্যটকদের কতটুকু সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে পারবে প্রশাসন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ায় এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে হোটেল-মোটেল মালিক-কর্মচারী থেকে শুরু করে পরিবহণ শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘ পাঁচমাসের ক্ষতির কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠতে পারবে। তবে জীবিকার পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।

জানা গেছে, করোনা মহামারীর কারণে গেল ১ এপ্রিল থেকে বান্দরবানের সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছিল জেলা প্রশাসন। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। মাঝে কিছুটা শিথিল করা হলেও ১ জুলাই থেকে আবার কঠোর করা হয়। ১০ আগস্ট শেষ হয় কঠোর বিধিনিষেধ। ১১ আগস্ট থেকে মোটামুটি সবকিছু খুলে দেওয়া হয়। বাকি ছিল পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র।

লকডাউন ও কঠোর বিধি নিষেধের কারণে গত পাঁচ মাসে বান্দরবানের হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে জেলা সদরে ছোট-বড় মিলিয়ে হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট রয়েছে অন্তত ৫০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে তিন হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।

পর্যটকদের ঘোরাঘুরির অন্তত ৪০টি নোহা ছাড়াও ৪শতাধিক বিভিন্ন পরিবহণ রয়েছে। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছিল। বেচা কেনা বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এই প্রসঙ্গে বান্দরবান আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, পর্যটন খুলে দেওয়ায় আমরা অনেক খুশি। দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুষিয়ে উঠার জন্য ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করবেন। তিনি আরও বলেন- বান্দরবানের পর্যটন রক্ষা করা যেমন আমাদের সবার কর্তব্য তেমনি বৈশ্বিক মহামারী থেকে এখানকার মানুষকে রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। যার কারণে করোনার শুরু থেকে মন্ত্রী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার পূর্বে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড গণবিজ্ঞপ্তি জারী করেছে। ১৫ নির্দেশনার শুরুতে ভ্রমণে যাওয়ার আগে অনলাইনে বুকিং ও অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়। এছাড়া সেবা গ্রহণের পূর্বে হোটেল, রেঁস্তোরা, স্থানীয় পরিবহণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে করোনা বিষয়ে নিরাপত্তা বিধানের সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা যাচাই করে বুকিং দেয়া, হোটেলে অবস্থানকালে বহিরাগত কারোর প্রবেশ নিরুৎসাহিত করা এরকম নানা নির্দেশনা ও পরামর্শসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সঠিকভাবে ফেলার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) জাকির হোসাইন বলেন, শর্তসাপেক্ষে জেলার সবগুলো পর্যটন স্পট এবং আবাসিক হোটেল, মোটেল খুলে দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা কেউ না মানলে জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে। জেলার প্রশাসন, মোবাইল কোর্ট এবং টুরিস্ট পুলিশ এজন্য একযোগে কাজ করবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন