অল্পপুঁজি অধিক লাভ

চকরিয়ায় চলতি মৌসুমে ৩২ হেক্টর আখ চাষ: স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষক

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়ায় স্থানীয় উন্নত জাতের আখ চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখছে চাষিরা। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩২ হেক্টর জমিতে আখের চাষাবাদ করা হয়েছে। চাষিরা আখ চাষ করে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি স্বাবলম্বীও হচ্ছে। এতে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। অল্পপুঁজি এবং আখের সাথে মরিচ, টমেটো ও বেগুনসহ অন্যান্য ফসল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়াতে দিন দিন এ চাষের দিকে ঝুঁকছে সাধারণ কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার কৈয়ারবিল, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, সাহারবিল, পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে কম-বেশি আখের চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেতের আখ পরিপক্ক হয়ে গেছে। এই এলাকার মাটি দোআঁশ ও বেলের মিশ্রণে উর্বর থাকায় আখ চাষ ভাল হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমে আখ কাটা শুরু করেছে কৃষকেরা। আখ চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাতে আখ চাষ করে অনেক কৃষক ভালো মুনাফার মুখ দেখছেন। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আখ চাষিদের সংখ্যা। অন্যান্য ফসলের তুলনায় চাহিদা বেশি এবং ভাল দাম পেয়ে আখ চাষে ঝুঁকে পড়েছে স্থানীয় কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (উন্নয়ন শাখা) রাজিব দে জানান, বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরে উপজেলায় আখের আবাদ হয়েছে ৩২ হেক্টর জমিতে। যা গেল বছরের তুলনায় দুই হেক্টর বেশি। উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় আখ চাষ হলেও এবার কৈয়ারবিল এলাকায় আখের চাষাবাদ সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। তাছাড়া এ বছর বন্যা না হওয়ায় আখের ফলনও ভালো হয়েছে। চাষিরা দামও ভালো পাচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার কৈয়ারবিল, সাহারবিল ও পৌরসভার এলাকার খোন্দকার পাড়া, তরছপাড়া, বাটাখালী এলাকার আখ চাষিরা আখ কেটে তা বাজারে বিক্রিও শুরু করেছেন। কেউ বা শেষ সময়ে আখ ক্ষেত পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কৈয়ারবিল খিলছাদক এলাকার আখ চাষি আবদুল করিম জানান, তিনি ৮০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন। ফলন হয়েছে ভালো, খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ১ লাখ টাকার অধিক আখ বিক্রি হয়েছে। আরও দেড়লাখ টাকার আখ জমিতে রয়েছে। সামান্য পরিচর্যায় অধিক লাখের কারনে তিনি প্রায় ৫ বছর যাবত আখ চাষ করছেন।

তিনি আরও বলেন, আখ বড় হওয়া পর্যন্ত এরই মধ্যে আখের চারার আড়িতে মুলা, মরিচ ও শিম চাষ করেন তিনি। জমিতে আগাম এসব ফসল চাষ করেও প্রায় লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত আয় করছেন বলে জানান।

আখ চাষি নূরুল আলম বলেন, আখ লাভজনক ফসল। তিনি এ বছর প্রায় ৬০ জমিতে আখ চাষ কেেরছন। চারা রোপণ থেকে শুরু করে পরিচর্যা, সার কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরিসহ খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি দুই দফায় ৭০ হাজার টাকার উপরে আখ বিক্রি করছেন। খেতে আরো আখ অবশিষ্ট রয়েছে।

তিনি জানান, স্থানীয় পাইকাররা তাদের ক্ষেত থেকে আখ ক্রয় করে নিয়ে যায়। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবারে তেমন একটা রোগ বালাই দেখা দেয়নি। দামও ভালো আছে। প্রতিটি আখ বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ৩২ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবার আখ চাষ ভাল হয়েছে। আখ চাষিদের আমরা নিয়োমিত পরামর্শ দিয়ে আসছি। আখ চাষ অত্যন্ত লাভজনক ফসল হবার কারনে এলাকার কৃষকেরা দিন দিন ঝুঁকে পড়েছে। আখ চাষে পরিশ্রম হলেও আয় ভাল। এছাড়াও আখের সাথে অন্য সবজি চাষও করা যায়। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন