চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নৈরাজ্য, বর্ধিত তেলের দামের চারগুন ভাড়া আদায়

fec-image

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিকে পুঁজি করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বর্ধিত তেলের দামের চেয়ে চারগুন ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

আড়াই’শ টাকার বাস ভাড়া এখন ৩৫০ টাকা। এই পথে চলাচলরত গাড়ির কাউন্টারসমূহে বর্ধিত ভাড়ার তালিকাও টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত দুই দিন ধরে বর্ধিত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ সড়কে আরো নৈরাজ্য চলছে। কক্সবাজার-ঈদগাঁও-চকরিয়া সড়কে টিকিট প্রতি প্রায় ৫০ টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে বাস কর্তৃপক্ষ। ভাড়া নিয়ে ভোগান্তি বেড়েছে যাত্রীদের।

হিসেব মতে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৩৬ আসনের একটি বাসের আসা যাওয়া তেল যায় ১২০ লিটার। প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়লে মোট তেল খরচ বেড়েছে ১৮০০ টাকা। বর্ধিত তেল খরচের জন্য টিকিট প্রতি ভাড়া বাড়ানোর কথা ২৫ টাকা। কিন্তু যাত্রীদের দিতে হচ্ছে বাড়তি ১০০ টাকা। অর্থাৎ ২৫০ টাকার টিকিট এখন ৩৫০ টাকা।

হিসেবে দেখা গেল, ৩৬ আসনের বাসের আসা-যাওয়া বাবদ বর্ধিত ১৮০০ টাকা বাদে প্রতি ট্রিপে বাস মালিকদের অতিরিক্ত আয় ৫৪০০ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে যাত্রীদের জিম্মি করে চারগুন অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে বাস মালিক সিন্ডিকেট।

কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধির ইস্যু তুলে চারগুন ভাড়া বাড়ানো বেআইনি ও অমানবিক। এটি কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ভাড়া বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠেছে। সব স্তরে এর প্রভাব পড়ছে। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত অসহায় হবে।ভাড়া বৃদ্ধিতে বাস মালিকদের দূরভিসন্ধি আছে মনে করেন আ ন ম হেলাল উদ্দিন।

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত প্রচীন পরিবহন এস. আলমের কক্সবাজার ইনচার্জ আলহাজ্ব মো. নাজিম উদ্দিন খানের সাথে ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) সকালে তিনি বলেন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-টেকনাফ সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ একটি বর্ধিত ভাড়ার তালিকা দেয়। সে অনুযায়ী আমরা ভাড়া আদায় করছি। এখানে আমাদের কোন হাত নাই।

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম পথে প্রতি ট্রিপে অতিরিক্ত তেল খরচ যাচ্ছে ১৮০০, আদায় করছেন ৫৪০০ টাকা। কেন? অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার যৌক্তিকতা জানতে চাইলে ইনচার্জ নাজিম বলেন, বিষয়টি অনেকে আমাদের বলছে। অভিযোগ করেছে। চট্টগ্রাম ও ঢাকার বাইরে আমাদের যাওয়ার সুযোগ নাই। তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি মাত্র। তবু বাস্তব অবস্থা ও যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

কক্সবাজার-টেকনাফ-চকরিয়া-চট্টগ্রাম বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিয়াজী বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি কিলোমিটারে ১.৮০ টাকা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তা আমরা পুরোপুরি কার্যকর করিনি। সাধারণ মানুষের কষ্ট বিবেচনায় ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্ধিত ভাড়াসহ বর্তমানে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ গাড়ি ভাড়া ১৫০ টাকা, কক্সবাজার থেকে জামতলী ৮০ টাকা, কক্সবাজার থেকে টেকনাফের হ্নীলা ১২০ টাকা, জামতলী থেকে হ্নীলা ৪০ টাকা, হ্নীলা থেকে টেকনাফ ৩০ টাকা।অন্যদিকে, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ ক্লোজডোর গাড়ি ১৭০ টাকা।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ১৫ টাকা ঐতিহাসিক বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি গাড়ি ভাড়ার দিকে। একবারও কি চিন্তা করেছি,  এর চেইন রিএ্যাকশন কোথায় গিয়ে আঘাত করবে? পানি সেচ, জলযান ভাড়া, খেটে-খাওয়া দরিদ্র কৃষকের উৎপাদিত শাকসবজি, কৃষিপণ্য, মাছ থেকে শুরু করে চলমান মেগা প্রকল্প গুলোর প্রকল্প ব্যয় কি পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে! দীর্ঘ সময়কালের কভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব কেটে উঠার আগে এধরণের সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক?

তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামান্য পরিমাণ ক্রয় ক্ষমতা যৎসামান্য যা বৃদ্ধি পেয়ে ছিল তা আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে গেল মনে হচ্ছে। মালিক পক্ষ নয় দিন শেষে মাশুল দিতে হবে সাধারণ জনগণকে। ঘুরে ফিরে উন্নয়নশীল দেশের নিম্ন আর মধ্যবিত্তের করুন অসহায়ত্ব বিবেচনার কোথাও কেউ নেই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন