প্রশাসনিক কাজে বিঘ্ন

চার বছরেও গড়ে ওঠেনি গুইমারায় উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো

fec-image

খাগড়াছড়ি জেলার নবম উপজেলা গুইমারা। চার বছর আগে তিনটি ইউনিয়ন ও ৮০ হাজার নাগরিক নিয়ে গুইমারাকে উপজেলা ঘোষণা করে সরকার। আগামী ৩০ নভেম্বর প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরুর চার বছর পূর্তি হবে। তবে উপজেলা ঘোষণার চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্মিত হয়নি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।

ভবন বা অবকাঠামোর সংকটের কারণে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের জন্য কেবল একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের কমপ্লেক্সে। বর্তমানে হাতেগোণা কয়েকটি অফিস নিয়ে গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে স্বল্প পরিসরে চলছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম।

ইউনিয়ন পরিষদের দোতলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যক্রম চললেও এখনো শুরুই করতে পারেনি অনেক বিভাগেরই দাপ্তরিক কার্যক্রম। আবার কিছু দপ্তরের কার্যক্রম বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাড়িতে চলছে।

অফিস না থাকায় একদিকে উপজেলার প্রশাসনিক র্কমর্কতাদের কাজে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, অপরদিকে সাধারণ মানুষ এখনো জানে না উপজেলায় কোন অফিসে কি সেবা পাওয়া যায়। অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে অনেক কর্মর্কতা দপ্তরিক কাজ ইউএনও অফিসে বসে কোনভাবে সারেন। আবার একটি কক্ষে দুই তিনজন কর্মকর্তাকে বসতে হয়।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের জন্য নেই কোনো অফিসের ব্যবস্থা। একারণে সেবার জন্য মানুষকে দৌঁড়াতে হয় চেয়ারম্যানদের বাড়িতে।

স্বাস্থ্য, কৃষি, ভূমিসহ অনেক সেবার জন্য মানুষকে এখনও দৌঁড়াতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মাটিরাংগা, রামগড় ও মহালছড়িতে। যার ফলে কাঙ্ক্ষিত মৌলিক সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে নতুন এ উপজেলাবাসী।

এদিকে গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় চার বছর অতিবাহিত হলেও নিজেদের কাঙ্ক্ষিত নতুন কার্যালয়ে বসতে পারেনি তারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কার্যক্রম চলছে গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কক্ষে। পাশের আরেকটি কক্ষে চলছে উপজেলা মৎস্য বিভাগের কার্যক্রম।

ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে কয়েকটি ছোট কক্ষে উপজেলা নির্বাচন অফিস, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। এছাড়াও অফিসের ব্যবস্থা না থাকায় একটি বাড়ি একটি খামার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা অফিস বিচ্ছিন্ন এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থেকে কার্যক্রম করছে।

এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দীর্ঘদিনেও গড়ে উঠেনি। উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলাবাসী। স্বাস্থ্যসেবার জন্য গভীর রাতে প্রসূতি মাকে নিয়ে ছুটতে হয় পাশের উপজেলায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ ,অনেক আশা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের ভোট দিয়েছেন তারা। কিন্তু গুইমারার দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন তারা দেখাতে পারেনি। এখন র্পযন্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো দাঁড় করাতে না পারায় হতাশা বোধ করছেন সচেতনরা। নির্বাচিতদের র্ব্যথতার কারণে গুইমারার মানুষ উপজেলার সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ দায় তারা এড়াতে পারেন না।

উপজেলা মৎস কর্মকর্তা সুদৃষ্টি চাকমা বলেন, একটি কক্ষে বসে পুরো দপ্তরের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। উপজেলার হওয়ার পর আমরা পরিষদ ভবন পাইনি। এতে দাপ্তরিক কার্যক্রমের গোপনীয়তা রক্ষা করা যাচ্ছে না ।

আবার একটি কক্ষেই্ চলছে দুইটি দপ্তরের কার্যক্রম।এদিকে অফিস না থাকায় নির্বাচিত হয়েও জনগণকে সেবা দিতে পারছে না নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।

গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মারমা জানান, গুইমারাবাসীর সেবার কথা ভেবেই তিনি নতুন ইউপি ভবনের কার্যালয়টি উপজেলা প্রশাসনের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। পূর্বের জরাজীর্ণ কার্যালয়ে তিনি নিজের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্ণা ত্রিপুরা জানান, তাদের বসার জন্য কোন অফিস নেই। নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের কক্ষ বারদ্দ পাননি।এজন্য জনগণকেও উপযুক্ত সেবা দিতে পারছেন না। ভবনের সংকটের কারণে উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসগুলোর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

উপজেলা র্নিবাহী অফিসার তুষার আহম্মেদ বলেন, গুইমারাকে নতুন উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে চার বছর পূর্বে। এখন র্পযন্ত ভবন না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে কাজ কার্যক্রম করছেন। ভবন সংকটের কারণে অফিসারদের বসার জন্য সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের জন্য প্রায় ৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজন ১৬ কোটি টাকা । জমি অধিগ্রহণের অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা যায়নি। খুব সহসাই সকল প্রক্রিয়া শেষে ভবনের কাজ শুরু হবে। ভূমি অধিগ্রহনের অর্থ ছাড় দেওয়ার পর দ্রুতই ভবনের র্কাযক্রম করা হবে বলে তিনি জানান ।

উপজেলা চেয়ারম্যান উশেপ্রু মারমা জানান, নির্বাচিত হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে কার্যক্রম চালিয়েছেন। বসার কোন কার্যালয় পাননি। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সম্পর্কিত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ১০৯তম সভায় খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার হাফছড়ি, মহালছড়ির সিন্দুকছড়ি ও মাটিরাঙ্গার গুইমারা ইউনিয়নকে নিয়ে ‘গুইমারা উপজেলা’ ঘোষণা করা হয়।

এরপর ৪ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর একই বছরের ৩০ নভেম্বর গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন