চোখ খুলে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করুন: সূচিকে জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টার

fec-image

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচিকে দু’চোখ খোলার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টার ইয়াংহি লি। তিনি বলেছেন, ম্যাডাম স্টেট কাউন্সেলর আপনার চোখ খুলুন। শুনুন। হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করুন (রোহিঙ্গাদের কথা)। অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগে আপনার নৈতিক কর্তৃত্বকে ব্যবহার করুন। মঙ্গলবার মানবাধিকার কাউন্সিলকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন লি। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি চরম উদ্বেগজনক। প্রায় চার বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কাছে এমনটা প্রত্যাশা করেননি লি এবং অন্যরা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি।

লি বলেছেন, দশকের পর দশক মুক্ত ও গণতান্ত্রিক মিয়ানমারের জন্য একটানা লড়াই করেছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেল অং সান সুচি। তার কাছে জানতে চাই তার দেশে এখন যা ঘটছে, তিনি কি সত্যিকারভাবে আজকের এই অবস্থাকে দেখতে চেয়েছেন? লি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানোর পরও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নিষ্পেষণের যে ধারা তা ভেঙে দিতে কিছুই করেনি মিয়ানমার। এখনো রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন তারা সেই একই করুণ পরিণতির শিকার, যেমনটা ২০১৭ সালের আগস্টে তাদের সঙ্গে ঘটেছিল। তিনি আরো বলেন, তাদের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। স্বীকৃতি নেই। নিয়মিত সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে। অবাধে চলাচল করতে পারে না। খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, জীবিকা নির্বাহ ও চাকরির ক্ষেত্রে তাদের কোনো সুবিধা নেই বললেই চলে। ইয়াংহি লি বলেন, মিয়ানমার দাবি করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সব করেছে তারা এবং প্রত্যাবর্তনে বিলম্বের জন্য তারা বাংলাদেশকে অব্যাহতভাবে দায়ী করে। কিন্তু আমি যে তথ্য পেয়েছি তাতে আমাকে বিশ্বাস করতে হয় যে, আসল সত্য এর উল্টো।

লি বলেন, স্যাটেলাইটের ছবিতে ৩৪টি শিবির নির্মাণের দৃশ্য দেখা গেছে। এগুলো কী উদ্দেশে নির্মাণ করা হয়েছে বা হচ্ছে তা অস্পষ্ট। তিনি বলেন, দৃশ্যত মনে হচ্ছে, মিয়ানমারে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা ও যারা ফিরে যাবেন তাদেরকে সেখানে আটক রাখা হবে। তিনি আরো বলেছেন, উত্তর রাখাইনে এমন নির্মাণকাজ দেখা গেছে স্যাটেলাইটের ছবিতে। এর মধ্যে রয়েছে ৬টি সামরিক ঘাঁটি। এসব ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো ধ্বংস করে দিয়ে সেখানে। রাখাইনে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে ৩৯২টি গ্রাম। এর মধ্যে ৩২০টি গ্রাম মেরামতের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। শতকরা ৪০ ভাগ গ্রামকে পুরোপুরি মিশিয়ে দেয়া হয়েছে মাটির সঙ্গে। লি বলেন, এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে ২০১৮ সালে কিছু এবং ২০১৯ সালে বাকিগুলোতে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গ্রহণ করতে যে মিয়ানমার প্রস্তুত, এসব বিষয় তাদের এমন বক্তব্যের বিরুদ্ধে যায়। আমি আরো দেখেছি, মিয়ানমারের ভূমি আইনের অধীনে কোনো এলাকা পুড়ে গেলে সেই এলাকার মালিকানা চলে যায় সরকারের হাতে। এই অবস্থায় যদি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি হন তাহলে তারা ফিরে গিয়ে কী পাবেন?

লি আরো বলেন, আমার বিশ্বাস সার্বিকভাবে এজন্য জবাবদিহিতা প্রয়োজন। সফল প্রত্যাবাসনের জন্য এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমনটা হলে মিয়ানমারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যে সহিংসতা চালাচ্ছে তার ইতি ঘটবে। নিশ্চিত হবে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বসবাস।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অং সান সুচি, মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টার, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন