ঢাকা থেকে চাকমা কিশোরী উদ্ধার, আটক হলেন না চীনা নাগরিক

fec-image

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়া এক কিশোরীকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গেল সোমবার রাত ৩টার দিকে ঢাকার উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় কাউকে আটক করা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী।

পুলিশ সূত্র জানায়, উদ্ধার হওয়া কিশোরী গত ১৯ জুন বাঘাইছড়ির নিজ বাড়ি থেকে রাঙামাটিতে আসার পথে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় বাঘাইছড়ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে পরিবার।

ভুক্তভোগী কিশোরীর চাচা বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাঁর ভাতিজির মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। গতকাল তার ভাতিজি এক বন্ধুকে ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে জানায় তাকে ঢাকায় একটি ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। ঢাকার কোথায় লোকেশন বলতে পারছিল না সে। তাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না।

এরপর ওই বন্ধু ঢাকায় অবস্থানরত কয়েকজন ছাত্রকে জানালে তারা কৌশলে লোকেশন চিহ্নিত করে ওই বাসায় যায়। এরপর তাঁর ভাতিজি জানালা দিয়ে হাত বের করে নিজের অবস্থানের কথা জানায়।

উদ্ধার করতে যাওয়া এক যুবক বলেন, ‘আমরা লোকেশন নিশ্চিত করার পর ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চাই। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ সহযোগিতা না করায় রাঙামাটির এক সাংবাদিকের সহায়তায় বাঘাইছড়ি থানা-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানা থেকে একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়।’

ওই যুবক আরও বলেন, ‘পুলিশ তালা ভেঙে ফ্লাটের ভেতরে গিয়ে দেখে, ফ্লাটের ভেতরে একটি কক্ষে ওই কিশোরী ছাড়াও আরেকটি কক্ষে এক চীনা নাগরিক ছিল। সে ওই কিশোরীকে তালা মেরে রেখেছিল। কিন্তু পুলিশ তাকে আটক করেনি। শুধুমাত্র কিশোরীকে নিয়ে থানায় চলে আসে পুলিশ।’

ভুক্তভোগী কিশোরী বলে, ‘চীনে যাওয়াসহ বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে এক নারী আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ওই নারী আমাকে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার পর আর দেখা দেননি। যাওয়ার পর থেকে আমাকে কোনো খাবার দেওয়া হচ্ছিল না। প্রচুর ভয় দেখানো হতো। গত সোমবার সকালে মামিয়া, সজীব চাকমাসহ আরও দুজন নারী ওই ফ্লাটে গিয়েছিল। চলে যাওয়ার সময় মামিয়া ও সজীব চাকমা আমাকে হুমকি দেয়- আমার অবস্থানের কথা কাউকে বললে আমাকে মেরে ফেলা হবে।’

জানা গেছে, সজীব চাকমার বাড়ি বরকল উপজেলার ঠেগা নামক এলকায়। তাঁর বিরুদ্ধে নারী পাচারের অভিযোগে একাধিক মামলা আছে।

কিশোরীকে উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় অধ্যায়নরত আরেক যুবক। তিনি বলেন, ‘চায়না নাগরিককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আমরা পুলিশকে অনুরোধ করেছি, কিন্তু পুলিশ শোনেনি।’

ওই যুবক আরও বলেন, ‘পুলিশ অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরও চায়না নাগরিক ফ্লাটের তালা খুলে দেয়নি। ঘণ্টার অধিক সময়ক্ষেপণ করেছে। পরে বাধ্য হয়ে পুলিশ তালা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে।’

ভুক্তভোগীর চাচা বলেন, ‘আমার ভাতিজিকে আনতে বাঘাইছড়ি থানা-পুলিশের একটি টিমসহ এক আত্মীয় ঢাকায় গেছে। আমরা এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তি চাই।’

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, ‘বর্তমানে ভুক্তভোগী পুলিশের হেফাজতে আছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। ভুক্তভোগী স্বজনেরা এলে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।’

ফ্লাটে ওই চীনা নাগরিক থাকলেও তাকে কেন আটক করা হলো না– এমন প্রশ্নে ওসি ফরমান আলী বলেন, ‘আমরা ওই চীনা নাগরিককে আটক করতে পারিনি। তবে তাঁকে আটকের জন্য অভিযান চলছে।’

সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট 

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অপহরণ, চীনা নাগরিক, বাঘাইছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন