দৃশ্যমান হচ্ছে নতুন মাতামুহুরী সেতু

fec-image

উন্নয়নযজ্ঞে অবশেষে দৃশ্যমান হচ্ছে ছয়লেনে নতুন মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণ কাজ। বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা উপশহরে চারলেনের মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজ। জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতা কাটিয়ে ওঠার পর বর্তমানে এই সেতুর নির্মাণকাজে বেশ গতি এসেছে। ইতোমধ্যে সেতুর দুইদিকের অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে স্থাপনা উচ্ছেদের কাজও সম্পন্ন হয়েছে।

অপরদিকে সম্প্রতি সময়ে নদীর বুকে পাইলিংয়ের কাজেরও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। নদীতে পিলার স্থাপনের জন্য চলমান পাইলিংয়ের কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সর্বোপরি এই সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। সেতুটি নির্মাণের ফলে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যোগাযোগখাতে নতুন মাইলফলকের সূচনা হচ্ছে।

এ অবস্থায় শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকালে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে প্রকল্প এলাকা ভিজিট করেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো.নজরুল ইসলাম। ওইসময় চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম প্রকল্প এলাকায় উপস্থিত থেকে কাজের অগ্রগতি সর্ম্পকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামকে অবহিত করেন।

ওইসময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খাঁন মোহাম্মদ কামরুল আহসান, চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান), কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকেশৈলী মছুদুর রহমান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ‘ক্রস বর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. জাহিদ হোসেন, সেতু নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনির্য়াস লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংশিষ্ট প্রকৌশলী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতু, চন্দনাইশের বরগুনি সেতু, দোহাজারীর সাঙ্গু সেতু ও চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। তন্মধ্যে বেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাতামুহুরী সেতুর ছয়লেনের মূল নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে চলতিবছরের জানুয়ারি মাস থেকে।

জাইকার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতু হবে খুবই দৃষ্টিনন্দন। এজন্য ডিজাইনও চূড়ান্ত করা হয়েছে। ডিজাইন অনুযায়ী ছয় লেনের সেতুর মধ্যে বিদ্যমান দুই লেনের সেতুর দক্ষিণাংশে প্রথমে তিন লেনের নতুন সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এই তিন লেনের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার পর বিদ্যমান পুরাতন সেতু ভেঙে ওই স্থানে নির্মাণকাজ শুরু হবে বাকী তিন লেনের সেতুর নির্মাণকাজ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় লেনের এই সেতুর মধ্যে মাঝখানের চার লেনে চলাচল করবে দূরপাল্লার এবং দ্রুতগতির যানবাহন। আর বাকি দুই লেন দিয়ে চলাচল করবে ধীরগতির তথা স্থানীয় যানবাহন। এছাড়াও এই দুই লেনে (উভয়পাশে) ৫ ফুট করে উম্মুক্ত থাকবে ফুটপাত হিসেবে ব্যবহারের জন্য। তিনি আরও জানান, ডিজাইন অনুযায়ী ছয় লেনের এই মাতামুহুরী সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৩০৫ মিটার (আরো বাড়তে পারে)।

পূর্বপ্রান্তে মহাসড়কের জিদ্দাবাজার পর্যন্ত (কাকারা রাস্তার মাথা) এবং পশ্চিমপ্রান্তে পুরাতন বাসস্টেশনের বর্তমান ঢাকা ব্যাংক পর্যন্ত এই সেতুর এপ্রোচ বৃদ্ধি পাবে। আর মূল সেতুর প্রস্থ হবে দ্রুতগতির চার লেনের জন্য ১২ ফুট করে মোট ৪৮ ফুট এবং ধীরগতির দুই লেনের জন্য (ফুটপাত ৫ ফুট) ১১ ফুট করে ২২ ফুট।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ‘ক্রস বর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চারটি সেতুর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ, স্থাপনা উচ্ছেদসহ নানা জটিলতার কারণে একটু সময় নষ্ট হয়েছে। এরপরও বর্তমানে কাজের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। কাজের এই গতি অব্যাহত থাকলে ছয় লেনের এই সেতুর মধ্যে প্রথমে শুরু হওয়া তিন লেনের কাজ যথাসময়ে শেষ করা যাবে।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন আর বলেন, কাজের এই গতি ধরে রেখে আগামী বছরের (২০২০ সাল) জুনের মধ্যে তিন লেনের নির্মাণকাজ চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন করে ফেলা হবে। এর পর আগস্ট মাসে সেতুর তিন লেনের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বাকি তিন লেনের নির্মাণকাজ শুরু করতে বর্তমানে বিদ্যমান পুরাতন সেতু ভেঙে ফেলা হবে। এজন্য জাইকা, ক্রস বর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্ক’সহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন।’

মাতামুহুরী নির্মাণের অগ্রগতি প্রসঙ্গে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণের দাবিটি ছিল দীর্ঘদিনের। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেই পাল্টে যাবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থার দৃশ্যপট। এতে সুফল ভোগ করবে জেলার ২২ লাখ মানুষ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন