পানছড়ি ফাতেমার কয়লা বিক্রিতেই চল্লিশ বছর পার

আগের মতো আর পারি না। হাতে শক্তি পাইনা। অভাবের সংসার। সপ্তাহে তিন-চারশ টাকা যাই পাই তা দিয়েই সংসার চলে। রেশনকার্ডখানাও বন্ধক। রেশনকার্ড পুনরায় পাইলে কাজ বন্ধ করে একটু চলা যেত।
কয়লা বিক্রি করেই চল্লিশ বছর পার করেছে পানছড়ির ফাতেমা। ফাতেমার বয়স এখন ৬০। পানছড়ি বাজারের কামার দোকানে কয়লা সরবরাহ করে আয়ের টাকা দিয়ে চলে ফাতেমার সংসার। এক সময়ে পাহাড়ের বিভিন্ন বনজ গাছ পুড়িয়েই কয়লা করা হতো। শুধু শ্রমটাই ছিল আসল পুঁজি। কিন্তু বর্তমানে পাহাড়ে আগের মতো আর অট্টালিকা গাছ-গাছালি নেই। বিভিন্ন স’ মিলের চিরানো গাছের লাকড়ি কিনে পুড়িয়ে কয়লা বানাতে হয়। তাই আগের মতো লাভ নেই। কয়লা বিক্রি করে সংসারে কোন রকম ডাল-ভাতের টাকা হয় বলে জানান ফাতেমা।
ফাতেমা খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার ১ নং লোগাং ইউপির ফাতেমানগর গ্রামের ইসমাইল মৃধার সহধর্মিনী। ১৯৮৬ সালে পার্বত্য এলাকায় বিরাজমান পরিস্থিতির সময় ইসমাইল মৃধার ডান হাতে গুলি লাগে। সে থেকেই কয়লা বিক্রির মাধ্যমে অসহায় স্বামীর সংসারে হাল ধরেন ফাতেমা। ইতোমধ্যে কয়লা বিক্রিতে ৪০টি বছর পার করেছেন। গাছ পুড়িয়ে কয়লা বানানো অনেক কষ্টের কাজ বলে জানান তিনি। বিশালাকার গর্ত করে টুকরা গাছ বা লাকড়িতে আগুন দিয়ে দীর্ঘ ৫-৬ ঘন্টা ধরে বসে থাকা লাগে। পোড়ানো শেষে পানি মেরে মাটি চাপা দিয়ে ৩-৪ দিন পর মাটি খুঁড়ে কয়লা তুলে বস্তায় ভরে বাজারজাত করতে হয়।
ফাতেমা জানান, আগের মতো আর পারি না। হাতে শক্তি পাইনা। অভাবের সংসার সপ্তাহে তিন-চার’শ টাকা যাই পাই তা দিয়েই সংসার চলে। রেশনকার্ডখানাও বন্ধক। তবে সরকারি একখানা ঘর পেয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা জানান।
এলাকার মরিয়ম বিবি, ইউনুছ মিয়া বলেন, দীর্ঘ বছর ধরেই দেখছি ফাতেমার কয়লা বানানোর শিল্প। তবে অনেক কষ্টের কাজ। পানছড়ি বাজারের রাবন, সুজন, মিলন, রবি, অনিল ও টিটু কর্মকার জানায়, একমাত্র ফাতেমার বানানো কয়লা দিয়েই বছরের পর বছর ধরে আমরা শিল্পকর্ম চালিয়ে যাচ্ছি। বন্ধকী রেশনকার্ড খানা নিজ হেফাজতে আনতে পারলেই কয়লা পোড়ানো থেকে অবসরে যাওয়ার কথা জানালেন ফাতেমা।