অবহেলা থেকেই লোডশেডিং: বলছেন বিশেষজ্ঞ, স্বাভাবিক হবে কবে?

fec-image

‘বড় ধরনের অবহেলার কারণে’ সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় চলছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম।

মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকেলে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লেও জ্বালানি সংস্থানের জন্য যথাযথ পরিকল্পনার অভাবের কারণেই আজকের এমন পরিস্থিতি।’

এ বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘এখন দুই সপ্তাহ পরে আমরা কয়লা আনছি, অথচ দুই সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। তার মানে এটা বড় ধরনের বলতে পারেন যে অবহেলার শিকার।’ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘যারা দুই সপ্তাহ পরের ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান করে কয়লা আনবেন, তাঁরা কি চার সপ্তাহ আগে সেটি করতে পারতেন না?’

অধ্যাপক এম শামসুল আলমের মতে, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়েছে, কিন্তু জ্বালানি সংস্থান করার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি এবং আমদানি মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার জন্য বাজেটে সংস্থান করা হয়নি, বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা থাকেনি।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এই জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘ডলারের যে একটা সংকট আসতে পারে, সেটি তো অনেক আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু সেগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে। আজকের পর্যায়ে যে বলা হচ্ছে, ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আনতে পারছি না, সে কারণে আমরা বিদ্যুৎ সংকটে পড়েছি, সেটাও ঠিক সবটা সঠিক নয়।’

এদিকে, চলমান পরিস্থিতির পেছনে বরাবরের মতোই করোনা মহামারির ধাক্কা, পরবর্তীতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের জ্বালানি বাজারে অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করে আসছে সরকার।

গত সোমবার (৫ জুন) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস, কয়লা, ফার্নেস ওয়েল-সহ সকল প্রকার জ্বালানির মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, সেই সাথে প্রাপ্যতা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যে সংকট এখনো চলমান।’ তিনি আরও লিখেছেন, ’ অন্যদিকে, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে লাগামহীনভাবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি যথা গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস ওয়েল আমদানিতে অনেকটা প্রভাব পড়েছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমানের এই অনাকাঙ্ক্ষিত লোডশেডিং।’

এর আগে ৪ জুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী জ্বালানি কিনতে সমন্বয়ের অভাবকে দোষারোপও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ডলার সংকট নিরসনে দুই মাস আগে থেকেই চেষ্টা করছিলাম। ডলার সরবরাহের সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়, এলসি খোলার বিষয় থাকে, সব সমন্বয় করতে হয়। আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত করে বসে আছি। জ্বালানি আসার পেছনের বিষয় সব সময় আমাদের হাতে থাকে না। সমন্বয় কোথাও বাধাগ্রস্ত হলেই সমস্যা হয়। এবারও তাই হয়েছে। সমন্বয় হলে জ্বালানি সংকট হতো না।’

একইদিন সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জ্বালানি তেল, কয়লা বা গ্যাসের অভাব বিশ্বব্যাপী। এখন তো কেনাটাই অনেকটা মুশকিল। ক্রয় করাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কবে?
বর্ষার আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম। তাঁর কথায়, ‘এর আগের সংকটের সময় আমরা বলেছিলাম শীত এলে মানুষ স্বস্তি পাবে, এখন বলছি বর্ষা এলে স্বস্তি পাবে। সেটা প্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে। এখানে যারা, এ খাত যেসব কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভরশীল তাঁদের ওপরে সেটা নির্ভর করে না।’

তবে সপ্তাহ দু-একের মধ্যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

আর পিডিবি জানিয়েছে, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিং ব্যবস্থাপনা এখন কঠিন হয়ে গেছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র আবারও উৎপাদনে আসতে কমপক্ষে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগতে পারে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে অনেক। তাই গরম না কমলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আশা নেই। এদিকে দু-চার দিনের মধ্যে গরম কমার খবর দিতে পারছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে মৌসুমি বায়ু টেকনাফ উপকূলে অগ্রসর হতে পারে। তখন কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমতে পারে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৪ জুন সংসদে বলেছেন, ‘এরই মধ্যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি সই হয়ে গেছে। আমরা জলবিদ্যুতও আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। কয়লা কেনার জন্য এরই মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমরা আবার চালু করতে পারি।’
সূত্র: আজকের পত্রিকা

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আমদানি, কয়লা, জ্বালানি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন