পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচনের বদ্ধ দুয়ার খোলার সময় এসেছে

fec-image

খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেছেন, পার্বত্যবাসীকে দীর্ঘবছর বিভ্রান্ত করা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা অবশেষে ভোটার তালিকায় নিজের নাম লিখেয়েছেন। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১) বিকেলে রাঙামাটি জেলার আ’লীগের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সন্তু লারমা বলতেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করা পর্যন্ত তিনি ভোটার হবেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে এক দল বাঙালি সংগঠন বলতে লাগলো, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ে বাঙালি জনগোষ্ঠি থাকতে পারবে না। কিন্তু তাদের সেই ধারণা ভুল ছিল।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ পার্বত্যনিউজ-এ প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৯ আগস্ট ২০২১ রাঙামাটি জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তায় নিজেকে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত করতে ছবি তোলাসহ আনুসাঙ্গিক সকল কাজ সম্পন্ন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা। মূলত জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া করোনার টিকা নিতে না পারায় তিনি এই আবেদন করেন। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সন্তু লারমা করোনার টিকাও নিয়েছেন। মূলত জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় কোভিড-১৯ এর টিকা নিতে পারছিলেন না মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার উত্তরসূরী সন্তু লারমা। ফলে বিদেশ ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে বার বার আটকে যাচ্ছিলেন তিনি। তাই অবশেষে নিজেকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তথাকথিত শান্তিবাহিনীর প্রধান সন্তু লারমা ১৯৯৭ সালে সরকারের সাথে একটি চুক্তির মাধ্যমে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসেন। এরপর সরকার তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে। দীর্ঘ দুই দশকেরও অধিককাল প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় থেকে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে এলেও কখনোই বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেননি এবং ভোটার তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত হননি। এর কারণ সম্পর্কে সন্তু লারমার কাছের লোকদের বক্তব্য ছিল, ‘আন্দোলন, সংগ্রাম ও প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করছেন না।’ তবে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকার হোটেল সুন্দরবনে জেএসএস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন কর হলে তিনি বলেন, ‘কাউকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে হবে বা তাকে ভোটার হতে হবে, বাংলাদেশের আইনে এমন বাধ্যবাধকতা আছে কিনা? নাই। একইভাবে বাংলাদেশের সকলকে ভোটার হতে হবে এমন কোনো আইনী বাধ্যবাধকতা আছে কিনা? নাই।’

বাস্তবতা হলো, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে পার্বত্যাঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়ে একটি আলাদা ভোটার তালিকার কথা উল্লেখ আছে। সেটা হলে ভূমিহীন কোনো বাঙালির পক্ষে এই ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া সম্ভব হবে না। বিষয়টি নাগরিকদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার হরণের শামিল হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য সন্তু লারমার নেতৃত্বে জেএসএস সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিল। সেই চাপের অংশ হিসেবেই তিনি দুই দশকের বেশি সময় ধরে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেও দেশের নাগরিকত্বের স্মারক জাতীয় পরিচয়পত্র তথা ভোটার কার্ড গ্রহণ করেননি। এতদিন বিষয়টিকে পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেখিয়ে বরং তিনি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এখন তিনি নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন তথা করোনার টিকা পাওয়ার জন্য ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার আবেদন করলেন। এতে প্রমাণ হয় যে, তিনি আসলে এতদিন পাহাড়ের মানুষের অধিকার আদায়ের কথা বলে যে আন্দোলন করে আসছিলেন সেটি তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনের তুলনায় মোটেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আশা করা যায়, বিষয়টি পার্বত্যবাসীদের মধ্যে নতুন উপলব্ধি এনে দেবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এতে পার্বত্যাঞ্চলে বিরাজমান বহু সমস্যার জট খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সন্তু লারমার ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদনের প্রসঙ্গটি নিয়ে এখানে আলোচনার কারণ হচ্ছে, বিষয়টি আসলে রাষ্ট্রীয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৭ লাখ অধিবাসীর নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নের সাথেও জড়িত। তিনি ভোটার তালিকায় নিজের নাম না লিখিয়ে এতদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়ে আলাদা একটি ভোটার তালিকার জন্য সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। তার পেছনের কারণ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে হলে, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সাথে জেএসএস নেতা সন্তু লারমার স্বাক্ষরিত চুক্তি, চুক্তির শর্ত মতে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে যুক্ত সংশ্লিষ্ট ধারা এবং তার পেছনের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৪নং ধারার ২নং উপধারায় বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যগণ জনসাধারণ কর্তৃক প্রত্যক্ষ্যভাবে এই আইন ও বিধি অনুযায়ী নির্বাচিত হইবেন।’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সু-নির্দিষ্ট ভোটার তালিকা প্রয়োজন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু ভোটার তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যাতে জটিলতা সৃষ্টি করা যায়, সম্ভবত সেই উদ্দেশ্যই পার্বত্য চুক্তির ‘খ’ খন্ডের ৯নং ধারার ৪নং উপ-ধারায় কোনো ব্যক্তির ভোটার হওয়ার ব্যাপারে একটি বিতর্কিত এবং সংবিধান পরিপন্থি যোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত উপধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি তিনি পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হন।’ যা পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে জেলা পরিষদ আইনসমূহ সংশোধন করে ১৭নং ধারায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়। আবার অ-উপজাতীয় তথা বাঙালিদের ক্ষেত্রে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার শর্তজুড়ে দিয়ে পার্বত্য চুক্তির ‘খ’ খন্ডের ৩নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘অ-উপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা বলিতে যিনি উপজাতীয় নহেন এবং যাহার পার্বত্য জেলায় বৈধ জায়গা জমি আছে এবং যিনি পার্বত্য জেলায় সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় সাধারণতঃ বসবাস করেন তাহাকে বুঝাইবে।’ এখানে অ-উপজাতীয় তথা বাঙালিদের ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলায় সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় বসবাস করার অর্থকে মূলত জায়গা জমির মালিক হওয়াকে বুঝানো হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এটি কার্যকর করা হলে বিপুল সংখ্যক ভূমিহীন বাঙালি ভোটার হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন, যা সংবিধান প্রদত্ত তাদের মৌলিক অধিকার হরণের শামিল। বিষয়টি হাইকোর্টের এক রায়ে অসংবিধানিক উল্লেখ করে বাতিল করতে বলা হয়েছে।

তারপরও এতদিন সন্তু লারমা নির্বাচন কমিশনের জাতীয় ভোটার তালিকাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্যও সমভাবে কার্যকর বলে মেনে নিতে নারাজি দিয়ে আসছেন। এই সমস্যার সমাধানে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে ২০০১ সালে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন পাস করে। সে আইন অনুযায়ী ভূমি কমিশনকেও কাজ করতে দেয়নি জেএসএস নেতৃবৃন্দ। অবশেষে বিতর্কিত এবং অসাংবিধানিক কিছু ধারা-উপধারা যুক্ত করে ২০১৬ সালে আইনটির সংশোধনী পাস করতে সরকারকে বাধ্য করে তারা। ২০১৬ সালে গৃহীত ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী এতটাই একপেশে এবং অসাংবিধানিক যে, এখন আর নিজেদের ভূমির অধিকার রক্ষায় এর প্রতি কোনো আস্থা রাখতে পারছে না পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিরা। ফলে তাদের বাধার কারণে এখনো থমকে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান ভূমি সমস্যার নিষ্পত্তির কাজ। তার অর্থ হচ্ছে, বিদ্যমান আইন মতে, ভূমি সমস্যার সমাধান না হলে আলাদা ভোটার তালিকা করা যাবে না। আলাদা ভোটার তালিকা না হলে পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহে নির্বাচন সম্ভব নয়। আর জেলা পরিষদসমূহে নির্বাচন না হলে আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচনও হবে না। কেননা, আঞ্চলিক পরিষদ গঠনের ব্যাপারে আইনে বলা হয়েছে, ‘(আঞ্চলিক) পরিষদের সদস্যগণ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হইবেন। তিন পার্বত্য জেলার চেয়ারম্যানগণ পদাধিকার বলে (আঞ্চলিক) পরিষদের সদস্য হইবেন এবং তাহাদের ভোটাধিকার থাকিবে। …।’ জেলা পরিষদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘সরকার প্রয়োজন বোধে অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন করিতে পারিবে।’ অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ গঠনের কথা আইনে থাকলেও পুনর্গঠন সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।

অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন সম্পর্কে আইনে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু উল্লেখ না থাকার সুবিধা ভোগ করছেন জেএসএস নেতৃবৃন্দ তথা সন্তু লারমা ও তার অনুগতরা। স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়ে আলাদা ভোটার তালিকার দাবিতে ১৯৯৭ সাল থেকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত রাখতে সরকারকে বাধ্য করছেন তারা। তাই আইন অনুযায়ী সরকার সময় সময় অন্তর্বর্তীকালীন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে পুনর্গঠন করে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু আঞ্চলিক পরিষদ থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার অধিবাসীরা তাদের ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদ নির্বাচিত করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর যারা অনির্বাচিত হয়েও জেলা পরিষদসমূহে দায়িত্ব পাচ্ছেন তারা জনগণের প্রতি সত্যিকার অর্থেই দায়বদ্ধতা অনুভব করতে যে পারেন না, সেটা নিয়ে প্রায়ই কথা উঠছে বিভিন্ন মহলে। এমনকি সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দও অনেক সময় প্রকাশ্যে নির্বাচন দিয়ে জেলা পরিষদসমূহ গঠনের কথা বলে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়ে উঠে না।

সন্তু লারমা এখন নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করার পর সে বাধা কেটে গেছে বলেই পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। তাছাড়া এতদিন তিনি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। বিভিন্ন নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা নির্বাচিতও হয়েছেন। এমনকি তাদের প্রার্থী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করে সংসদেও গিয়েছে। সকল নির্বাচনেই তারা জাতীয় ভোটার তালিকা মেনে নিয়েই অংশ নিয়েছেন। অথচ, সেই একই ভোটার তালিকা তাদের মানতে আপত্তি শুধু জেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে। এর পেছনে তাদের জাতি-গোষ্ঠির সদস্যদের অধিকারের চেয়ে জেএসএস নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিগত ইস্যুই যে বড় ছিল সেটা নিয়ে ইতিপূর্বে অনেকেই আন্দাজ-অনুমান করেছেন। এই আন্দাজ-অনুমানের পেছনে কারণ হলো, পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহে নির্বাচন হলে, তিন জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে আইন অনুযায়ী নতুন করে আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করতে হবে। কিন্তু তিন পার্বত্য জেলায় জেএসএস কিংবা সন্তু লারমার একক নেতৃত্ব মেনে নিয়ে তাদেরকেই আবার আঞ্চলিক পরিষদে ফিরিয়ে আনবেন জেলা পরিষদসমূহের নির্বাচিত সদস্যরা এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেননা, পাহাড়ের দুর্গম কিছু এলাকা ছাড়া তাদের একাধিপত্য তেমন একটা নেই। তাছাড়া তাদের চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য পাহাড়ে আরো একাধিক সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয় আছে। অন্যদিকে শহর এবং বাঙালি এলাকাগুলোতে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাধান্য ঠেকানোর শক্তিও তাদের নেই। সেই ক্ষেত্রে জেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচন হলে জেএসএস প্রার্থীদের পক্ষে এককভাবে প্রাধান্য বিস্তার কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে জেলা পরিষদসমূহে নির্বাচিত ভিন্ন মতের প্রার্থীরা ভোট দিয়ে সন্তু লারমা তথা জেএসএস নেতৃবৃন্দকে আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচনে জয়যুক্ত করতে যাবেন কোন দুঃখে? এই ভয় থেকেই মূলত তারা জেলা পরিষদ নির্বাচন ঠেকিয়ে রেখেছেন। আসলে জাতির কথা বলে তারা নিজেদের ক্ষমতা ও আধিপত্য টিকিয়ে রাখতেই যে ব্যস্ত আছেন সন্তু লারমা সেটা নিজেই প্রমাণ করেছেন। তাই তাদের সেই দাবি এখন আর ধোপে টিকবে না। এমনকি পাহাড়ের অধিবাসীদের তাদের দাবির পক্ষে বোঝানোর ক্ষেত্রে তারা এখন আর আগের মতো নৈতিক মনোবলও পাবেন না। আর বুঝাতে গেলেও জনগণের কাছে সেটা আর আগের মতো গুরুত্ব পাবে না।

এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দ্রুত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন দিয়ে দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে পার্বত্যবাসীকে মুক্তি দেয়ার উদ্যোগ নেবে বলে সবাই আশা করছে। বলাবাহুল্য, এই একটি সমস্যার সাথে জড়িয়ে আছে আরো অনেক কিছু। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদিতার বীজও রোপিত আছে এই বিষয়টির সাথে। তাই এখন যেহেতু সন্তু লারমা নিজেই রাস্তাটি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাই এই সুযোগটিকে যত দ্রুত সম্ভব কাজে লাগানো প্রয়োজন।

লেখক: সাংবাদিক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক
[email protected]

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন