পাহাড়ে আলু ক্ষেতে ভুট্টা চাষে সফল ইউপি চেয়ারম্যান
পাহাড়ে তামাক চাষ ছেড়ে সবজি চাষে প্রান্তিক কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। সভা সেমিনার ও মৌখিকভাবে তেমন সফলতা না পেয়ে চলতি বছরে নিজেই আলু ও আলুক্ষেতে ভুট্টা চাষ করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা গোমতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. তফাজ্জল হোসেন। পেয়েছে সফলতা।
উঁচু নিচু পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সামান্য বিস্তৃর্ণ সমতল ভূমি। বুক ছিড়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি গোমতি খাল। দুই পাশে চোখ জুড়ানো সোনা ফলা ফসলের মাঠ। খালে বারো মাস পানি থাকায় যেকোন ফসল ফলে এই এলাকায়। এক সময় ধান কাটার পর সব ধরনের মৌসুমী সবজি চাষ হতো গোমতি এলাকায়। এসব সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাহিরে রপ্তানি করা হতো। এতে করে সমৃদ্ধশালী গ্রামীণ অর্থনীতি আর চাঁদের হাসি ছিল কৃষকের মুখে। কিন্তু কয়েক দশক ধরে সর্বনাশা বিষ পাতা তামাকের দখলে গোমতি খালের বিধোত উর্বর ফসলি জমি। এতে করে এলাকায় সবজি উৎপাদন ব্যহত হয়। সৃষ্টি হয় চাহিদানুযায়ী সবজি সংকট। স্থানীয় চাহিদা মিটাতে বাহির থেকে আমদানি করতে হয় ফরমালিন যুক্ত সবজি। যা স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতি কর ।
অপরদিকে তামাক পাতা চাষ ও পোড়ানোর ফলে কৃষি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। এলাকা পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকি ও সংখ্যা বাড়ছে। এলাকার এসব থেকে রক্ষা ও পূর্বের ন্যায় তামাক মুক্ত কৃষি সমৃদ্ধ গোমতি গড়তে এবং কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য পরীক্ষামূলক আলু ক্ষেতে ভুট্টা চাষের পাশাপাশি সবজি চাষ শুরু করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তফাজ্জল হোসেন।
সরেজমিনে দেখা যায় ৩০ শতক জমিতে হাইব্রিড ললিতা আলুর চাষ করেছেন তিনি। এক মাস পর একই সাথে ভুট্টা লাগিয়ে ভালো ফসল হওয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। তিন ফুট দূরত্বে আলুর দুই সারি মধ্যখানে সবুজের মাঝে আরেক সবুজের কচি হাতছানি দৃষ্টি কাড়ে যে কারো। এছাড়াও ১০ শতক জমিতে হাইব্রিড সরিষা, ২ শতক টমেটোর পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া, শিম, চিনাবাদাম, শিম, বেগুন রোপন করে ভালো ফলন হয়েছে। এমন চাষে অতিরিক্ত জমি ও সারের যেমন প্রয়োজন হয়না তেমনি, শ্রম ও শ্রমিক কম লাগে এবং বেশি ফলনে লাভমান হবে কৃষক।
গোমতী এলাকার স্থানীয় কৃষক শাহজাহান বলেন, চেয়ারম্যানের সবজি ক্ষেত আমি অনুপ্রাণিত হয়ে এ বছর তামাক চাষ না করে সবজি চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আগামীতে আরো বেশি করে সবজি চাষ করবো।
গোমতি ইউপি চেয়ারম্যান তফাজ্জল হোসেন বলেন, ফসলি জমিতে বিগত বছরগুলোতে তামাক চাষ করে আসছে কৃষকরা। বিষ পাতা তামাক চাষের ক্ষতি এড়াতে ও চাষকে নিরুৎসাহিত করতে পরীক্ষা মূলক ভাবে আলুক্ষেতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এতে আলাদা জমির যেমন প্রয়োজন নাই তেমনী সার ঔষধ ও শ্রমিক কম লাগে । ফসলও অনেক ভালো হয়েছে। এতে শুধু আলু চাষে খরচ হয়েছে একুশ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার দরে ষাট হাজার টাকার বিক্রি করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পাহাড়ের মাটি ও জলবায়ু সমতলের চেয়ে একটু পার্থক্য থাকলেও গোমতির এলাকার মাটি ও জলবায়ু আলু ও ভুট্টা সহ মৌসুমী সবজি চাষের জন্য উপযোগী। তাই এই ফসল চাষে সাফল্যের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়েছে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, কৃষি খাতে প্রণোদনা, সার, বীজ পারিবারিক পুষ্টিবাগানসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে সরকার। উপজেলায় কৃষিক্ষেত্রে যেকোন প্রয়োজনে সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্ত।