ফেনী নদীর শূণ্যরেখায় বন্দী মানসিক ভারসাম্যহীন নারী দু’বছর পর ফিরছেন স্বভূমে

fec-image

রামগড়-সাব্রুম সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর শূণ্য রেখায় বিজিবি-বিএসএফের অস্ত্রের মুখে একমাস যাবৎ বন্দী মানসিক ভারসাম্যহীন সেই ভবঘুরে নারীর(৩২) পরিচয় মিলেছে। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার উলিরপুর উপজেলার দইখাওয়ারচর গ্রামের হাতেম আলী শেখের মেয়ে শাহনাজ পারভিন। বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়ার দুই বছর পর তিনি স্বভূমে ন্বজনদের কাছে ফিরবেন।

সোমবার (৪ মে) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র গুইমারার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জিএইচএম সেলিম হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির খাগড়াছড়ির চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চেীধুরি কাছে হস্তান্তর করেন।

বিজিবি, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস(আইসিআরসি) ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি যৌথভাবে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর মানসিক ভারসাম্যহীন নারীটির নাম পরিচয় উদঘাটন করে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নিজ উদ্যোগে তাকে কুড়িগ্রামের তার স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নেয়।

হস্তান্তরকালে অন্যন্যের মধ্যে রামগড়ের ৪৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তারিকুল হাকিম, উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ ত্রিপুরা, থানার ওসি মোহাম্মদ শামছুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

মানসিক ভারসাম্যহীন নারীটিকে গ্রহণ করার পর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরি বলেন, সে কোন দেশের নাগরিক বা কি তার নাম- পরিচয় এসবের গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র মানবতার কথা চিন্তা করে বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে নেন। বিজিবি ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি যৌথভাবে অনুসন্ধান শুরু করে তার পরিচয় উদঘাটনে। শেষ পর্যন্ত মহৎ এ কাজে সফলতা আসে। আমরা মানসিক ভারসাম্যহীন অসহায় এ নারীকে তার স্বজনদের কাছে পোঁছানোর দায়িত্ব নিয়েছি।

খাগড়াছড়ি জেলা রেড ক্রিসেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, মঙ্গলবার রেড ক্রিসেন্টের এ্যাম্বুলেন্সযোগে ওই নারীকে কুড়িগ্রামে তার স্বজনদের কাছে নিয়ে হস্তান্তর করা হবে। তিনি আরও বলেন, এর আগে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি তার নমুনা সংগ্রহ করে করোনার টেস্ট করিয়েছে। রির্পোট নেগেটিভ এসেছে।

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে ২ এপ্রিল রামগড় বিওপি সংলগ্ন সীমান্ত এলাকার দিকে বিএসএফ জোরপূর্বক রামগড়ে পুশ ইনের চেষ্টা করে এতে বিজিবি বাধা দেয়। এ অবস্থায় দু’দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনীর অস্ত্রেরমুখে সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর মাঝখানে শূণ্যরেখায় আটকা পড়ে সে। তাকে ঠেকাতে নদীর দুই পাড়ে অস্থায়ী প্রহরা চৌকি বসায় বিজিবি-বিএসএফ। এনিয়ে দুই বাহিনীর সেক্টর কমান্ডারগণ একাধিকবার পতাকা বৈঠকও করেন। গত কয়েকদিন আগে দুর্যোগপুর্ণ আবহাওয়ায় বিজিবি মানবিকতায় নদীর মাঝখান থেকে তাকে তুলে এনে রাখে তাদের চৌকিতে। বিজিবি ও নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা তাকে নিয়মিত খাবার দাবার দিতেন।

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর স্বজনরা জানান, প্রায় দুই বছর আগে তিনি বাড়িঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন। বহু খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও তার সন্ধান পাননি তারা। ধারণা করা হচ্ছে, উত্তরবঙ্গের কোন সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে কোন না কোন ভাবে চলে আসেন রামগড় সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরার সাব্রুমে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন