বাণিজ্যমেলার আকর্ষণ খাগড়াছড়ির কোটি টাকার ‘পরী খাট’

fec-image

রাজধানীর উপকণ্ঠ পূর্বাচলে আয়োজিত এবারের বাণিজ্য আলোচনায় রয়েছে ১৬ পরীর রাজকীয় পালঙ্ক খাট।এই খাটের দাম এক কোটি টাকা! শুনেই চমকে উঠেছেন? চমকে উঠলেও বাস্তবে এমনটাই ঘটেছে। আর এই খাটটির সঙ্গে মোটরসাইকেল ও স্বর্ণের গয়না ফ্রি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্রেতা।

মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে পরী পালং খাট। রাজকীয় কারুকাজ ও পরীর ডিজাইনে এটি তৈরি করা হয়েছে। মেশিনের ব্যবহার ছাড়াই সর্বোচ্চ নৈপুণ্য ফুটিয়ে তুলেছেন কারিগর। এসব মুগ্ধ করেছে নৈপুণ্য ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের।

খাটটির ডিজাইনার ও মালিক মো. নুরুন্নবী। তিনি খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তবে তিনি পেশাদার কোনো ফার্নিচার ব্যবসায়ী নন, পল্লী চিকিৎসক। শখের বশে খাটটি কারিগর দিয়ে বানিয়েছেন। মেলায় ছয় লাখ টাকা দিয়ে একটি স্টল নিয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য তিনি প্রদর্শন করছেন খাটটি। আর বিক্রির জন্য দাম হাঁকিয়েছেন এক কোটি টাকা।

কী আছে সেই পরী পালং খাটে, যে কারণে মো. নুরুন্নবী তার দাম এক কোটি টাকা হাঁকিয়েছেন! খাটের নকশায় দেখা যায়, এর চার কোণে দাঁড়িয়ে আছে পরীর আদলে চারটি মূর্তি। খাটের বিভিন্ন অংশে এ রকম আরও ১২টি পরী রয়েছে। বড় চার পরীর হাতে চারটি প্রজাপতি। এ ছাড়া খাটের বিভিন্ন অংশে আছে বিশেষ নকশা। আধুনিক, নানন্দিক কারুকাজ এবং শৈল্পিক আবহে এটি তৈরি করা হয়েছে। যা দেখতে স্টলের সামনে ভিড় করছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা।

খাটটির বিশেষত্ব কী এবং দাম কেন কোটি টাকা জানতে চাইলে এর স্টলে খাটের দায়িত্বে থাকা অন্তর মাহমুদ বলেন, “পরীর ডিজাইনে তৈরি করায় নাম দেওয়া হয়েছে পরী পালং খাট। এটি চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় তৈরি। এতে মেশিনের ব্যবহার হয়নি, সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষত্ব হলো এর ডিজাইন কিংবা ক্যাটালগ বিশ্বের কোথাও নেই। সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা থেকে শখের বশে খাটের ডিজাইন করেছেন আমার ভাই। তৈরি করেছেন স্থানীয় কারিগর আবু বক্কর সিদ্দিক। ২০১৭ সালে তিনি ও তার এক সহকারী মিলে কাজ শুরু করেন। তিন বছর দুই মাসে কাজ সম্পন্ন করেছেন তারা। কারিগরের মজুরিসহ ৪০-৪১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্য মেলায় স্টল নেওয়াসহ নানা খরচ মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।”

অন্তর মাহমুদ বলেন, “খাটের চার কোণে বড় চারটি পরীর হাতে চারটি প্রজাপতি রয়েছে। এর পাশে চারটি চাঁদ ও ছয়টি সূর্যের নকশা আছে। বিভিন্ন অংশে রাজকীয় কারুকাজ রয়েছে। পাটাতনগুলো ভাজ করে তুলে রাখার ব্যবস্থা আছে। চট্টগ্রামের সেগুন কাঠের ফাইবার দিয়ে এটি তৈরি। প্রায় ২০০ ঘনফুট কাঠ থেকে ৮৫ ঘনফুট কাঠের ফাইবার বের করে খাটটি তৈরি করা হয়েছে।”

কাঠের বার্নিশসহ আনুষঙ্গিক কাজের বর্ণনা দিয়ে খাটের মালিক নুরুন্নবীর ভাই অন্তর মাহমুদ বলেন, “কাঠের বার্নিশের কাজ বেশ মুশকিলের। কারণ এটি সম্পূর্ণ হাতে করতে হয়েছে। এ কারণে প্রথমে তিনজন কারিগর কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে আবু বক্কর সিদ্দিক কাজ করতে রাজি হয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “এটি সৃজনশীল শিল্পকর্ম। শিল্পকর্মের কোনো মূল্য হয় না। আমরা খাটের দাম এক কোটি টাকা নির্ধারণ করেছি। মেলায় এখন পর্যন্ত ৫১ লাখ টাকা দাম উঠেছে। মেলার আরও কিছুদিন বাকি আছে। আশা করছি, প্রত্যাশিত দাম পাবো। যিনি এই শিল্পকে মূল্যায়ন করে খাটটি কিনবেন, তাকে একটি ইয়ামাহা এফ জেড এস মোটরসাইকেল ও এক ভরি ওজনের সোনার গয়না উপহার দেওয়া হবে।”

একজন সংসদ সদস্য খাটটি কিনতে চেয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের এক সংসদ সদস্য ৮০ লাখ টাকায় খাটটি কিনতে চেয়েছিলেন। ভারতীয় এক নাগরিককে তিনি খাটটি উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শিল্পী তার কর্মকে সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন। এজন্য বিক্রি না করে প্রথমবার বাণিজ্য মেলায় খাটটি তুলেছেন।”

তবে খাটটি তৈরির পেছনে আরেকটি উদ্দেশ্যও ছিল। নুরুন্নবী বলেন, ‘আমাদের পার্বত্য অঞ্চল বনজ সম্পদ অনেক সমৃদ্ধ। দেশে-বিদেশে এর খ্যাতি আছে। তবে বনজ কাঠনির্ভর কারুশিল্প খুব একটা বিস্তৃত হয়নি। সে জন্য বিশেষ কিছু করে সবার দৃষ্টি এদিকে আকর্ষণ করাও আমার লক্ষ্য ছিল।’

এবারের বাণিজ্য মেলার চতুর্থ দিন থেকে খাটটি প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দাম ওঠে ৫০ লাখের ঘরে। সব শেষ তথ্যানুসারে, খাটটি কেনার জন্য আটজন গ্রাহক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে তাঁদের সবার প্রস্তাবিত দামই ৬০ লাখ টাকার নিচে। তবে খাটের দাম এক কোটি চাওয়া হলেও কিছুটা কম দামে ছাড়তে রাজি আছেন বলে জানান নুরুন্নবী।

তিনি বলেন, ‘খাটটি তৈরি ও অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫০ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এই খরচ ওঠার মতো দাম পেলে খাটটি বিক্রি করে দেব।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন