বান্দরবানের খুমী সম্প্রদায়ের ২ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
দেশের দুটি বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন বান্দরবানের প্রান্তিক খুমী সম্প্রদায়ের দুই শিক্ষার্থী। তাদের একজন নেবাই এউং খুমী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে এবং অপরজন লিংকু খুমী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
নেবাই খুমী রুমা উপজেলার খোলাইন পাড়ার এবং লিংকু খুমী একই উপজেলার রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের রুংতন পাড়ার বাসিন্দা। নেবাই রুমার হলেও তিনি ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সঙ্গে বান্দরবান শহরে বসবাস করে আসছেন।
অপরদিকে, লিংকু খুমী রুমা বগা লেকের পাশে বাস করা দরিদ্র এক জমুচাষি পরিবারে সন্তান। তিনি রুমা উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং বান্দরবান শহরে কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এগারোটি নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মধ্যে খুমীদের শিক্ষার হার ও জনসংখ্যা কম। তুলনামূলকভাবে অনগ্রসর এই খুমী সম্প্রদায়ের বসবাস একমাত্র বান্দরবান জেলায়।
নেবাইয়ের বাবা লেলুং খুমী বলেন, তার ছেলে চট্টগ্রাম, জগন্নাথ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছেলের ইচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।
লেলুং বলেন, “এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিষয় খুব বেশি ম্যাটার করে না। পরিশ্রম করে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে এটাই অনেক গর্বের বিষয়।”
তার ভাষ্য, “পার্বত্য চট্টগ্রামে খুমীরা জনসংখ্যা ও শিক্ষার হার একেবারেই কম। বান্দরবানেও মাত্র তিনটি উপজেলায় গহিন পাহাড়ে বসবাস করেন খুমীরা। দুর্গম পরিবেশে থেকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে পড়ুক লেখা-পড়ায় ভালো হতে হবে। কারণ, সংখ্যায় কম কিংবা বেশি হোক, বর্তমানে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হয়।”
চীনের বেইজিংয়ে অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যাশন্যাল ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস’-এ বৃত্তি নিয়ে অধ্যয়নরত আছেন বাংলাদেশ খুমী স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি নাংফ্রা খুমী। তিনি বলেন, “এবারে ভর্তি হওয়া দুজনসহ খুমী সম্প্রদায় থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট সাতজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।” এ ছাড়া কলেজে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন মাত্র আটজনের মত। তিনি আরও জানান, উচ্চ শিক্ষার জন্য খুমী ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে পাড়ায় পাড়ায় সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানোর জন্য অভিভাবকদেরও আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে।
খুমীদের সামাজিক সংগঠন খুমী সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সিংঅং খুমী বলেন, “জনসংখ্যায় কম হওয়ার পাশাপাশি একটি জনগোষ্ঠী হিসেবে খুমীরা আর্থ-সামাজিক এবং উচ্চ শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে। অনেকের লেখাপড়ার করার ইচ্ছা থাকলেও বাধা ডিঙ্গিয়ে উচ্চ শিক্ষায় পড়াশোনার সুযোগ পায় না।”
“এবারে আরেকজন খুমী শিক্ষার্থী অর্থের অভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। বিষয়টি আমরা পরে জানলাম। আগে-ভাগে জানলে সহযোগিতা করতে পারতাম,” বলেন সিংঅং।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে কম ভাষিক ও বিপন্ন জনগোষ্ঠী হলেন খুমীরা।
সরকারি হিসাবে ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী তাদের জনসংখ্যা ৩ হাজার ৯৯৪ জন।
তাদের বসবাস একমাত্র বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি এই তিন উপজেলায়। সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর