বান্দরবানে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে জুমিয়া কৃষকরা

fec-image

কুল বা বরই কার না খেতে ভালো লাগে! বরই এর মধ্যে মানবদেহে অনেক উপকারিতা রয়েছে। বরই আকারে ছোট হলেও এর গুণাগুণ অনেক। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় দেশি ও উন্নত জাতসহ বিভিন্ন প্রজাতির বরই চাষ করা হয়। ফলটি খেতে টক-মিষ্টি এবং সুস্বাদু হয়ে থাকে। বরইয়ের রস অ্যান্টি-ক্যানসার ড্রাগ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ঠান্ডা, জ্বর, প্রতিরোধে বরই বেশ কার্যকর। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, বরইতে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।

বান্দরবান সদর উপজেলাসহ জেলার প্রত্যেক উপজেলায় পাহাড়ি ভূমিতে বরই চাষ আবাদ করে প্রচুর লাভবান হচ্ছে উপজাতি ও বাঙালি চাষীরা। পাহাড়ে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে বিভিন্ন জাতের বরই। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় বরই চাষে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠছে পাহাড়ের জুমিয়া চাষীরা। বর্তমানে বান্দরবানে উৎপাদিত বরই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে জেলার বাইরে।

বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ে ও সাঙ্গু নদীর পাশে দেখা মিলছে সুমিষ্ট ও টক মিষ্টি জাতের মৌসুমী ফল বরই। বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক, ফারুক পাড়া, গ্যাৎশামনি পাড়া, নয় মাইল, ওয়াইজংশনসহ চিম্বুক সড়কের আশপাশে এবং রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম ও লামা উপজেলার পাহাড় জুড়ে দেখা মিলছে আপেল কুল, বাউ কুল, কাশ্মেরী কুল, বল সুন্দরীসহ বিভিন্ন জাতের বরই।

বান্দরবানের টংকাবতী ৫নং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের রামরি পাড়ার কুল চাষী ইয়াংঙান ম্রো জানান,৭ একর জমিতে বরই বাগান করেছি, বড়ই বাগান করে বেশ লাভবান হচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমার বাগানে ৫শত বরই গাছ রয়েছে, ২০২১ সালে প্রায় ১১মন বরই বিক্রি করেছি বাগান থেকে। আবার ২০২২ সালে প্রায় ১৮ মন বরই বিক্রি করেছি। কৃষি বিভাগ আমাদের যতেষ্ট সহযোগিতা করে আর আমরা অনেক পরামর্শ পাই কর্মকর্তাদের কাছ থেকে উল্লেখ করেন তিনি।

লেবু ঝড়ি এলাকার বরই চাষী তন পাউ ম্রো বলেন, পাহাড়ে বরই চাষ খুব ভালো ফলন দেয়। সমতলের চাইতে পাহাড়ের বুকে বরই ফলন ভালো হয়। তিনি আরো বলেন, আমার বাগানে আপেল কুল, বলসুন্দরী, থাইকুল সহ বিভিন্ন উন্নত জাতের বরই গাছ রয়েছে। সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে বরই পাকতে শুরু করে, এই বরই আকারে বড় ও স্বাদে সুমিষ্ট হওয়ায় পাইকাররা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যায় বিভিন্ন জেলায়।

বান্দরবান বাজারের বরই বিক্রেতা মো. জুনুমিঞা বলেন, বান্দরবানের বরই খুবই সুস্বাদু। আরেক বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, বান্দরবানের খুব কম সময়ের মধ্যে গাছে বরই দেখা যায়, আর চাষীরা বাজারে নিয়ে আসে। আমরা তাদের কাছ থেকে কিনে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্নস্থানে পাইকারি সরবরাহ করে থাকি।

বান্দরবানের বাজারে বরই বিক্রেতা মো. শাহ আলম ও জুনু মিঞা বলেন, বান্দরবান বাজারে বর্তমানে বিভিন্ন জাতের বড়ই প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবান এর উপ-পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ বলেন, বান্দরবানের আবহাওয়া ও মাটি সকল ধরণের ফসলের চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বরই চাষে পাহাড়ে বেশ ফলনও পাচ্ছে চাষীরা। বিশেষ করে বান্দরবানের মাটি এসেটিক জাতীয় হওয়ায় বিভিন্ন ফল চাষে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা। বরই চাষে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ, চারা ও সার প্রদানসহ বরই বিক্রিতে সার্বিক সহায়তা করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। তিনি আরো জানান, ২০২১-২২অর্থ বছরে বান্দরবানে ১৩০০ হেক্টর জমিতে ৭.৪৬ মেট্রিক টন কুল উৎপাদন হয়েছে। আর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১৫০০ হেক্টর জমিতে বরই আবাদ হয়েছে যার বিপরীতে ১২ মেট্রিক টন বরই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আশা করছে কৃষি বিভাগ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন