বালু সংকটের কারণে কাপ্তাই পিডিবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির

fec-image

ঐতিহ্যবাহী রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র (পিডিবি) এলাকার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি বালু সংকটের ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। চলমান উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়াতে মসজিদটির একাংশ কর্ণফুলী নদীতে ভাঙনের কবলে পড়েছে। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি রাঙামাটি জেলা তথা চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। এদিকে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দ্রুত শুরু করতে না পারলে মসজিদটি যেকোনো সময় ভাঙনসহ বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি মসজিদটি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের নদী সংলগ্ন পশ্চিম পাশে মাটি ধসে মসজিদটি হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক একটি ধারক দেওয়াল দেওয়া হলেও বালি ভরাট না করায় ধারক দেওয়ালটিও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং কর্তৃপক্ষ মসজিদের উন্নয়নসহ ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার অনুমতি পায়। কিন্তু বালি সংকটের কারণে ভাঙন প্রতিরোধ ও উন্নয়ন কাজটি আটকে রয়েছে।

এ ব্যাপারে উক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার মো. শহিদ জানান, পূর্বে কাপ্তাইয়ের পার্শ্ববর্তী রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বালু সংগ্রহ করা হত স্বল্প মূল্যে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওই উপজেলা বালু সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। এমন অবস্থায় বালু সংকটের কারণে এই ফার্মের আওতাধীন পিডিবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উন্নয়ন ও ভাঙন প্রতিরোধে কাজসহ আরো কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজ থমকে আছে। তিনি আরো বলেন, বালু সংকট মোকাবেলায় কাপ্তাই অঞ্চলের কর্ণফুলী নদীর খালের মুখ, শীলছড়ি বালুরচরসহ কয়েকটি পয়েন্টে বিশাল বালুর উৎস রয়েছে। যদি এসব পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পাওয়া যায় তবে বিউবো কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বালু সংকট দুর হবে বলে ঠিকাদার জানান।

উক্ত মসজিদ কমিটির সদস্য ও পিডিবির কর্মচারী মো. হাফিজুর রহমান,বেলান হোসেন ও মশিউর রহমান সোহেল বলেন, কিছুদিন পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েকজন প্রকৌশলী ভাঙন এলাকাটি পরিদর্শন করে। এবং ওই এলাকার কর্ণফুলী নদীর খালের মুখ থেকে বালু উত্তোলন করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।

এদিকে তারা আরো বলেন, বর্তমানে বালু সংকটকে কেন্দ্র করে বালুর দাম অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়াতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আবার এদিকে মসজিদ ফান্ডেও আর্থিক সংকটের কারণে অতিরিক্ত ব্যয় ও বহন করা সম্ভব হচ্ছেনা। যার ফলে মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজ থমকে আছে।
এদিকে স্থানীয় আরো একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কয়েকবছর পূর্বে কাপ্তাই ৭.৪ মেগাওয়াট সম্পন্ন সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাকালে বালু সংগ্রহের উৎস হিসেবে কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাই খাল মুখের বালি ব্যবহার করা হয়েছিল। সূত্র আরো জানায়, এসব বালি উজান থেকে আসা পানি ও পাহাড়ি ঢলের সাথে কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাই খাল মুখ ও শীলছড়ি বালু চরে জমাট বাধে। এতে নদীর মাছের বংশবিস্তারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং কর্ণফুলী নদীতে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট।

এবিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, বালু মহল ছাড়া বালু উত্তোলন করা নিষেধ। পার্শ্ববর্তী উপজেলায় বালুমহল থাকলে সংশ্লিষ্টদের আবেদন এর প্রেক্ষিতে তাদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া কাপ্তাইয়ে কোন বালু মহল নেই, তবে পরিবেশ প্রতিবেশের কোন প্রকার ক্ষতি বিহীনভাবে বালু উত্তোলনের সুযোগ থাকলে সেই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন