কিছু লেখি নদিয়ুন বদ্দা, আঁর একখান অনুরোধ

বিল পরিশোধের পরও বাঘাইছড়িতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাসগৃহ নির্মাণ দুই বছরেও শেষ হয়নি

fec-image

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভিত্তিক টি.আর-কাবিটা কর্মসূচীর আওয়তায় দুর্যোগ সহনীয় একটি বাসগৃহের নির্মাণ কাজ কচ্ছপ গতিতে চলায়, দুই বছরেও শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এতে উপকারভোগী উপজেলার ৩১ নম্বর খেদারমারা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম পাবলাখালী গ্রামের বাসিন্দা রিটেন চাকমা গৃহ নির্মাণ নিয়ে বারবার তাগাদা দিলেও সংশ্লিষ্টরা তার কথায় কর্ণপাত করেননি । উল্টো তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রকল্পের উপকারভোগী রিটেন চাকমার বড় ভাই তথো কালা চাকমা পার্বত্যনিউজকে বলেন, দুই বছর আগে রিটেন চাকমার ঘরটি নির্মাণ শুরু করলেও এখনো তা শেষ হয়নি। ঘরটির দরজা, জানালা বাকী আছে, টয়লেট নির্মাণ করা হয়নি, ঘরটির প্লাস্টারও করা হয়নি। অথচ, অনেক দিন ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।এরমধ্যে নাকি বিল পরিশোধও হয়ে গেছে।কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় ইউপি সদস্য রুমান্টু চাকমাকে তাগাদা দিলেও তিনি কর্ণপাত করেন না।

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বরত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুমান্টু চাকমা পার্বত্যনিউজকে জানান, উপকারভোগী রিটেন চাকমার ঘর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিছু অংশ বাকী আছে। আগে যারা মিস্ত্রি ছিল তারা কাজ না করে টাকা নিয়ে চলে গেছে। ঘর নির্মাণের মিস্ত্রি না থাকায় কাজে দেরি হয়েছে। তবে নতুন মিস্ত্রি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্য তার ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

উপজেলার ৩১ নম্বর খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা পার্বত্যনিউজকে জানান, ‘টাকা সংকুলান না হওয়ায় কাজে দেরি হয়েছে। এখন শুধু ঘরের দরজা-জানালার কাজ বাকি আছে। কাজটি করেছেন প্রকল্পের সভাপতি রুমান্টু মেম্বার।’ তিনি প্রতিবেদককে অনুরোধ করে জানান, ‘কোন নেগেটিভ কথাবার্তা লেখি নদিয়ুন বদ্দা, বিষয়খান হলো এক সপ্তাহ সময় লইয়ি, পেপারত-টেপারত আইলে তো অনে বুঝন, কিছু লেখি নদিয়ুন বদ্দা, আঁর একখান অনুরোধ ( কোন নেগেটিভ কথা লিখবেন না। বিষয়টি হলো, এক সপ্তাহ সময় নেওয়া হয়েছে। পেপার-টেপারত আসলে তো আপনি বুঝেন। কিছু লিখবেন না বদ্দা। আমার একটি অনুরোধ।)

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফুল ইসলাম পার্বত্যনিউজকে জানান, বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। অনেক আগের একটি ঘর এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি এবং অথচ ঘরের বিল অনেক আগেই পরিশোধ হয়েছে। এটির কাজ বাকী রাখার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু, প্রধানমন্ত্রী উপহার আর বিল পরিশোধের পরও কেন ঘরের কাজ পূর্ণাঙ্গ হয়নি- এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩১ নম্বর খেদারমারা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম পাবলাখালী গ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান টি.আর-কাবিটা কর্মসূচীর আওয়তায় দুর্যোগ সহনীয় ২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকায় দুইটি বাসগৃহের নির্মাণ করা হয়েছে। একটি নির্মাণের প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন, ৩১ নম্বর খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা এবং অপরটির একই ইউনিয়নের সদস্য রুমান্টু চাকমা। সন্তোষ কুমার চাকমার তার প্রকল্পের ঘরটি উপকারভোগীকে বুঝিয়ে দিলেও এখনো রুমান্টু চাকমা তার প্রকল্পের ঘরটি বুঝিয়ে দিতে পারেননি উপকারভোগী রিটেন চাকমাকে।

উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান টি.আর-কাবিটা কর্মসূচীর আওয়তায় দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহের নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে রাঙ্গামাটি জেলার ১০ উপজেলায় ১৮৭টি ঘর নির্মাণ করার কথা। এরমধ্যে সদর ৬টি, লংগদু ২৬টি, কাউখালী ২০টি, বরকল ২২টি, বাঘাইছড়ি ২২টি, নানিয়ারচর ১৮টি, কাপ্তাই ১১টি,  বিলাইছড়ি ২৯টি,  রাজস্থলী ১৭টি এবং জুরাছড়ি ১৬টি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন