মাটিরাঙ্গায় বিজিবি-গ্রামবাসী সংঘর্ষে ছয়জন নিহত

fec-image

আপডেট :

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বিজিবি সদস্য ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে এক বিজিবি সদস্য এবং একই পরিবারের তিনজনসহ ছয়জন নিহত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গাজিনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, ৪০ বিজিবি‘র সিপাহি শাওন, আলুটিলা বটতলী গ্রামের সাহাব মিয়া (৭০), তার ছেলে মো. আলী আকবর ও মো. আহাম্মদ আলী। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মো. মফিজ মিয়া নিহত হয়। এদিকে বিজিবির গুলিতে স্বামী ও দুই সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে আলুটিলা বটতলীর নিজ বাড়িতে স্ট্রোক করে সাহাব মিয়ার স্ত্রী রঞ্জু বেগম মারা যান।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে বৈদ্যুতিক তার টানার জন্য কয়েকটি গাছ কাটা হয়। এসময় একটি ট্রাক্টরের করে সাহাব মিয়া ও তার ছেলে আহাম্মদ আলী কয়েক টুকরা গাছ গাজিনগর বাজারের একটি কাঠের মিলে নিয়ে যাওয়ার পথে বাঁধা দেয় বিজিবি। বিজিবির সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে সাহাব মিয়া ও তার ছেলে।

এক পর্যায়ে বিজিবির সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে স্থানীয়রা। এসময় বিজিবি সদস্যরা গুলি করলে ঘটনা স্থলেই মারা যায় সাহাব মিয়া ও তার ছেলে মো. আকবর আলী। এসময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন, স্থানীয় আহাম্মদ আলী, মফিজ মিয়া এবং মো. হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে সেখানেই মারা যায় বিজিবি সদস্য শাওন ও আহাম্মদ আলী।

এদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় মো. মফিজ মিয়া।

মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছুদ্দিন ভুঁইয়া সংঘর্ষে ছয় নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় নিহত বিজিবি সদস্যসহ দু’জনের মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। অন্য দু’জনের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে স্বামী ও দুই সন্তানের মৃত্যুর খবরে মারা গেছেন সাহাব মিয়ার স্ত্রী রঞ্জু বেগম। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তবে এ বিষয়ে বিজিবিরি পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঘটনার পর বিকেল ৩টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সারাহ উদ্দিন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম হুমায়ুন মোরশেদ খান।

এসময় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান ও খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস।

এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসময় তিনি সকলকে শান্ত থাকারও আহ্বান জানান।

এ ঘটনায় জড়িত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়ে সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। বিষয়টি ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এসময় স্থানীয়রা বিজিবি ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি জানালে তিনি বলেন, গুটি কয়েক খারাপ লোকের জন্য একটি বাহিনীকে দোষারোপ করা যাবেনা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন