মিয়ানমারে সংঘাত : জান্তাকে যে আহ্বান জানাল নিরাপত্তা পরিষদ

fec-image

ক্ষমতাসীন জান্তাকে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্যসহ মোট ৯ সদস্যরাষ্ট্র।

এই রাষ্ট্রগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর এবং মাল্টা। মঙ্গলবার বৈঠক ছিল নিরাপত্তা পরিষদের। সে বৈঠক শেষে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়ে পরিষদ। বিবৃতিতে এই ৯ রাষ্ট্রের স্বাক্ষর ছিল।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ৫টি— যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন এবং রাশিয়া; অপর ১০টি রাষ্ট্র অস্থায়ী। মঙ্গলবারের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত ছিল দুই স্থায়ী সদস্য চীন এবং রাশিয়াসহ ৭ সদস্যরাষ্ট্র।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২ হাজার ৬৬৯ ধারা অনুযায়ী, মিয়ানমারের সরকারকে বেসামরিকদের ওপর হামলা-গোলাবর্ষণ, ইচ্ছেমতো গ্রেপ্তার ও বন্দি করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ সব রাজনৈতিক মুক্তির অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’

জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত ইউ কিয়াও মোয়ে তুন নিরাপত্তা পরিষদের এই বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মিয়ানমারের সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে এই বিবৃতির জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এর আগে ২০২২ সালেও ২৬৬৯ ধারা মেনে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তাকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদ; কিন্তু যেহেতু এই আহ্বান বাস্তবায়নের জন্য শক্তি প্রয়োগের এক্তিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের নেই, তাই জান্তা তাতে কর্ণপাত করেনি।’

‘মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ মনে করে, নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন; যেন যে কোনো আহ্বান বাস্তবায়ন করার মতো শক্তি পরিষদের থাকে।’

‘আজ যদি নিরাপত্তা পরিষদের সেই ক্ষমতা থাকত, তাহলে মিয়ানমারের সাধারণ জনগণের জীবন রক্ষা পেতো।’

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী নেত্র অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন।

সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পরপরই ফুঁসে উঠেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনতা। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। কিন্তু মিয়ানমারের পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভ দমনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করার পর ২০২২ সালের দিকে গণতন্ত্রপন্থীদের একাংশ জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দেওয়া শুরু করে।

২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ)। জোটভুক্ত ৩টি গোষ্ঠী তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এই সংঘাতের নেতৃত্বে রয়েছে।

গত ডিসেম্বরের মধ্যে মিয়ানমারের বেশকিছু এলাকা দখল করে নিয়েছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সেসব এলাকা পুনরুদ্ধার করতে ২৬ জানুয়ারি থেকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী; কিন্তু গত ১০ দিনের যুদ্ধের প্রথম থেকেই বেকায়দায় আছে সেনাবাহিনী। প্রায় সব যুদ্ধেই পিছু হটছে তারা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জাতিসংঘ, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন