রিয়ার পথচলা
মোশাররফ রুমী:
ব্যস্ত মডেল, দাপুটে নৃত্যশিল্পী, দক্ষ অভিনেত্রী আর চৌকস উপস্থাপক-এ চার পরিচয়েই রিয়ার শোবিজ পথচলা। এর মধ্যে ইদানীং বেশি ব্যস্ত থাকেন মূলত নাচ, মডেলিং আর উপস্থাপনা নিয়ে। সমপ্রতি বাবাকে হারিয়ে শোবিজ পথচলার থমকে গিয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য। তবে কাটিয়ে উঠেছেন সে অবস্থা। এখন আবার সরব হয়েছেন তিনি। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন নাচের অনুষ্ঠানে, বাংলাভিশনের ‘সৌন্দর্য কথা’ অনুষ্ঠানেও উপস্থাপনা করছেন নিয়মিত। আর প্রস্তুতি নিচ্ছেন একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার। কিসের বিজ্ঞাপন জানতে চাইলে রিয়া বলেন, এখন সে সম্পর্কে কিছু জানানোতে বারণ আছে। কাজটি হোক তার পর জানাবো। রিয়া আপাদমস্তক একজন সুন্দরী নারী। মিডিয়ায় চলার পথে বিভিন্ন সময়ে বহু পরিচালকের কাছ থেকে চলচ্চিত্রের নায়িকা হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছেন। এসব প্রস্তাব বেশ ভাল ভাল ছবিতেই কাজ করার। রিয়ার জায়গায় অন্য কেউ হলে পরিচালকে বিমুখ করার প্রশ্নই উঠতো না। কিন্তু রিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে যাননি। পরিবারের সদস্যদের সায় নেই রিয়ার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে। তাই হাসি মুখে সেসব গুণী চলচ্চিত্র পরিচালককে তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে বড় পর্দায় এখনও রিয়াকে দেখা যায়নি। ছোট পর্দাতেও তিনি অভিনয়ে খুব বেশি নিয়মিত নন এখন। সর্বশেষ কবে নাটকে অভিনয় করেছেন তাও মনে নেই রিয়ার। রিয়াকে একজন বিচারক হিসেবে একটি নৃত্য প্রতিযোগিতা বিষয়ক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে সমপ্রতি। তিনি কি ভাবেন এই ধরনের প্রতিযোগিতা নিয়ে? রিয়া বলেন, সত্যি বলতে কি এই ধরনের প্রতিযোগিতার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিকই আছে। ইতিবাচক হচ্ছে চেষ্টা করা হয় ভাল নৃত্যশিল্পী খুঁজে বের করার। অনেক ভালভাবেই প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে তৈরি করে নেয়া হয়। যে কারণে আমরা ভাল কিছু শিল্পী পাই। কিন্তু নেতিবাচক দিকটা হচ্ছে খুব অল্প সময়েই কোনরকম সাধনা ছাড়া তারা খ্যাতি পেয়ে যায় বলে সাধনা কিংবা অধ্যবসায় কোনটাই তাদের মাঝে থাকে না। এটাকে ধরে রাখাটাই হচ্ছে অনেক বেশি জরুরি। রিয়া যখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সেই বয়সেই প্রথম বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে কাজ করেন। কোকোনাট বিস্কুটের বিজ্ঞাপনে তিনি প্রথম মডেল হন। প্রথম বিজ্ঞাপনটি তেমন সাড়া না ফেলতে পারলেও এরপর সাইদুল আনাম টুটুলের নির্দেশনায় লালবাগের হাসমার্কা নারকেল তেলের বিজ্ঞাপনে ব্যাপক সাড়া তোলেন। এই বিজ্ঞাপনে রিয়ার ভুবন ভুলানো মিষ্টি হাসি আর সুমনা হকের জিঙ্গেলে তার অনবদ্য পারফরমেন্স তাকে রাতারাতি মডেল হিসেবে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে যায়। এরপর একে একে ভেনাস জুয়েলার্স, মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলি, ইস্পাহানি ডাবল চেম্বার টি ব্যাগ, এ্যারোমেটিক, ফিলিপস বাল্ব, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে কাজ করেছেন রিয়া। মডেলিংয়ের পাশাপাশি এ পর্দাকন্যাকে অভিনয়ে পাওয়া গেলেও এ ক্ষেত্রটিতে খুব বেশি ব্যস্ত নন তিনি। কেন? রিয়া বলেন, সত্যি বলতে কি আমি ছোটবেলা থেকে নাচের সঙ্গেই বেশি জড়িত ছিলাম। তারপর আবার বাফাতে শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে হতো। সবকিছু মিলিয়ে নাটকে সময় দেয়াটা অনেক কঠিন ছিল। তাছাড়া আমি যে সময়টাতে মডেল হিসেবে কাজ করেছি সে সময় মডেলিং বিষয়টা অনেক উঁচু একটি অবস্থানে ছিল। অন্যকিছুতে ব্যস্ত হওয়ার তেমন কোন প্রয়োজন ছিল না। তাই অভিনয়ে খুব বেশি আমাকে পাওয়া যায়নি। রিয়া যে একসময় মঞ্চ নাটকেও কাজ করেছেন তা অনেকেরই অজানা। ক্লাস ফোর থেকে নাইন পর্যন্ত পড়াকালীন ঢাকা লিটল থিয়েটারের হয়ে বেশ কিছু মঞ্চ নাটকে কাজ করেছেন তিনি। এই দলের হয়ে তাসের ঘর, মার্চেন্ট অব ভেনিস, ভয় করলেই ভয় সহ বেশ কয়েকটি শোতে তিনি অনবদ্য অভিনয় করেছেন। সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন ফারুক ভূঁইয়ার প্রযোজনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি নাটকে শর্মিলী আহমেদের কন্যা চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে টিভি নাটকে রিয়ার অভিষেক ঘটে। এরপর ফারিয়া হোসেনের যে যেখানে দাঁড়িয়ে, মোহন খানের হৃদয়পুরের গল্পসহ এ পর্যন্ত বিশটির বেশি নাটকে কাজ করেছেন তিনি। মঞ্চের রিয়ার খোঁজ যেমন কেউ জানতেন না ঠিক তেমনি রিয়া যে গানও গাইতে পারেন সেটাও তেমন কেউ জানেন না। নৃত্যপটিয়সী রিয়া ছোটবেলায় নতুন কুঁড়িতে নাচে অংশগ্রহণ করলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি পল্লীগীতিতে একটি ভাল অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। কিন্তু পরে গানে তাকে আর সেভাবে পাওয়া যায়নি। একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে রিয়া প্রথম দেশের বাইরে যান কলকাতায় বাংলা ‘১৪০০’ সাল উপলক্ষে। বুলবুল ললিতকলা একাডেমী থেকেই সরকারিভাবে গিয়েছিলেন তিনি। ইংরেজি ১৯৯৭ সালে দিল্লিতে সার্ক সম্মেলনেও গিয়েছিলেন একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে। এরপর শুধু নাচের জন্যই বহুদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি।