রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: বাংলাদেশের অনুরোধের পরও মিয়ানমারকে কিছু বলেনি ভারত

fec-image

ঢাকার সাম্প্রতিক অনুরোধ সত্ত্বেও প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে নয়াদিল্লী বৃহস্পতিবার নেপিদোর অং সান সু চি সরকারকে প্রকাশ্যে তাগিদ দেয়া থেকে বিরত থেকেছে। মিয়ানমারের জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের ফলে এসব উদ্বাস্তু বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

নয়াদিল্লী অবশ্য মিয়ানমারের উত্তেজনাপূর্ণ রাখাইন রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে নেপিদোর সঙ্গে আলোচনা করেছে।

বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা মিয়ানমারে তার প্রতিপক্ষ ইউ সো হানের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। তারা সীমান্ত সহযোগিতা, সীমান্ত অবকাঠামো আধুনিকায়ন, মিয়ানমারে ভারতের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

ইউ সোয়ের সাথে আলোচনাকালে শ্রিংলা উল্লেখ করেন যে রাখাইন রাজ্য উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় নেপিদোর সাথে নয়া দিল্লী সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, রাখাইন রাজ্যে ১৫টি স্কুলের জন্য ‘সফট’ অবকাঠামো সৃষ্টির জন্য জাপানের সাথে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা শুরু করেছে ভারত ও মিয়ানমার।

শ্রিংলা আরো বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোকদের দ্রুত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

তিনি অবশ্য মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন ইস্যুর কথা প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ করেননি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্যু করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তুদের মিয়ানমারে ফেরা নিয়ে কোনো কথা নেই।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, রাখাইন রাজ্য উন্নয়ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবের মধ্যকার ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা এক সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই মন্তব্য করেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাত্র দুদিন পর ভারত-মিয়ানমার ভার্চুয়াল আলোচনা হলো। জয়শঙ্কর-মোমেন ভিডিও কনফারেন্সের পর প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে বলপূর্বক উচ্ছেদ হওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর দুই মন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেছেন।

জয়শঙ্করকে মোমেন আরো বলেন যে বাংলাদেশ আশা করে, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনে ভারত আরো অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা দীর্ঘ দিন ধরে নির্যাতিত হচ্ছে। তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে না। কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে আছে।

মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এতে শত শত লোক নিহত হয়, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এ সময় নারী ও শিশুসহ সাত লাখ ৪২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখে পৌঁছেছে।

তবে নয়া দিল্লী অং সান সু চি সরকারের পাশে অবস্থান নিয়েছে, তার সমালোচনা থেকে বিরত থেকেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই সহিংসতা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর মিয়ানমার সফর করেছিলেন। তিনি ও সু চি রাখাইন রাজ্যের অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন