লকডাউনে বিক্রি করতে না পারায় গাছের আম পঁচে নষ্ট হচ্ছে
লকডাউনে আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। গাছের আম গাছে পঁচে নষ্ট হচ্ছে। কি করে লোন পরিশোধ করব বুঝতে পারতেছিনা। বড় দুঃখ কষ্ট নিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলছেন কৃষক মধু মঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যা।
সে পেশায় একজন আদর্শ শিক্ষক। রাঙ্গামাটি কাপ্তাই ব্যাপ্টিস্ট মিশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে ২০১১ সালে দুর্গম রাঙ্গামাটি সদর জীবতলী এলাকায় ১০ একর জায়গার ঘরে তোলেন দেশের নামীদামী বিভিন্ন প্রজাতির ৭শ’ হতে ৮শ’ আম বাগান। কৃষক মধু মঙল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এ বাগান করতে ব্যাংক, বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের নিকট হতে লোন ও কর্জ করে দশ লক্ষ টাকা নিয়ে আম বাগান করি। রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে নামিদামি ১০ প্রজাতির আম চারা সংগ্রহ করে রোপন করা হয়। বারি-১, ২, ৩, ৪, ৭, ৮, ১১ হাড়িভাঙ্গা, মল্লিকা, আম রুপালি সহ আরও অনেক। নিজে সহ সাতজন শ্রমিক নিয়ে বাগান পরিচর্যা করি। এদের পরিশ্রমিক খানা-দানা বাবদ ৫শ’ থেকে ৪শ’ টাকা নিয়মিত দিয়ে আসছি।
এবার ২০২১ সালে আম বাগানে প্রচুর আম হয়েছে। দেখে খুব খুশি হয়েছি। ধারণা করেছি এবার আম বিক্রয় করে প্রায় সাত/৮ লক্ষ টাকা বিক্রয় করতে পারব। ইতিমধ্যে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আমও বিক্রয় করি । পথিমধ্যে একের পর এক লকডাউন, পরিবহন বন্ধ থাকার ফলে আম বিক্রয় বন্ধ হয়ে গেছে। কোন ব্যবসায়ী আর আম ক্রয় করতে আসছেনা। গাছের আম ফেঁটে গাছে পঁচে নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে আম বাগানে গিয়ে দেখা মিলে সারিতে সারিতে আম থোকায় থোকায় ভরপুর। বেশির ভাগ আম পচে নষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। এ ব্যাপারে বাগান মালিক কৃষক মধু মঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, শখ করে অনেক টাকা-পয়সা লোন নিয়ে বাগান করে ছিলাম। লকডাউনের ফলে আমার সকল স্বপ্ন ভঙ্গ করে দিল। যে পরিমানে আম বিক্রয়ের কথা ছিল তা আর বিক্রয় করতে পারি নেই। আমার বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল। এখন ব্যাংক লোন আর আত্মীয়-স্বজন থেকে নেয়া এ ধার-কর্জ পরিশোধ করব । লকডাউন দেওয়ার ফলে সকল পরিবহন ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত বন্ধ থাকায় আমার ব্যবসায় ধস নেমে স্বপ্নভঙ্গ হয়ে গেল।
স্কুল সহপাঠীর বাগান থেকে আম নিতে আসা শিক্ষক মো. ইসমাইল হোসেন ও মো. নাজমুল জানান, মধু মঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যা একজন সফল শিক্ষক ও ভালো সখের কৃষক বটে সে স্কুল শেষে বাগান নিয়ে পড়ে থাকে । লকডাউনের ফলে তার গাছের অনেক নামিদামি আম বিক্রয় করতে না পাড়ায় দুদিকেই ক্ষতি হয়েছে ।
মধু মঙ্গল আরও জানান, বর্তমানে আর তো কিছু করার নেই বাগানে আম পঁচে নষ্ট যাওয়ার চেয়ে শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধু বান্ধবের মাঝে আম বিতরণ করছি। ওরা আম খেয়ে দোয়া করবে যেন আগামীতে বাগান আরও উন্নত করতে পারি।